শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৩৮
Home / প্রতিদিন / কওমি সনদের স্বীকৃতি: সব শঙ্কা দূর হয়ে যাক

কওমি সনদের স্বীকৃতি: সব শঙ্কা দূর হয়ে যাক

শরীফ মুহাম্মদ:

আজ ১৩ আগস্ট। সোমবার। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিসকে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ এ দুটি বিষয়ে মাস্টার্সের সমমান প্রদানের আইনের খসড়াটি বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর যাবতই এ প্রক্রিয়া চলছিল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, গেজেট প্রকাশ তারপর মন্ত্রিপরিষদে আইনের খসড়ার অনুমোদন। এটি নিঃসন্দেহে চূড়ান্ত একটি ব্যাপার। যারা এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন, বিশেষ করে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের সকলেই অভিনন্দন ও মোবারকবাদ পাওয়ার মতো একটি কাজ করেছেন। এ স্বীকৃতির চূড়ান্ত ধাপটি অবশ্য এখনো বাকি রয়ে গেছে। জাতীয় সংসদে সেটি আইন আকারে পাস করা।

এ পর্যায়ে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করি। এখানে ভাবনার মতো কয়েকটি বিষয় সামনে চলে আসে। প্রথম কথা হচ্ছে, আসলে এ স্বীকৃতিটা কী বা এর স্বরূপটি কী? এর স্বরূপটি হচ্ছে, যতটুকু জানা যাচ্ছে, কওমি মাদরাসার যে নিজস্ব অবস্থান, আদর্শ, নীতি ও আকাবির আসলাফদের সরকারের সহযোগিতা থেকে দূরে থাকার যে অবিচল নীতি, আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ না করার নীতি, সিলেবাসহ সরকারের অন্যান্য বিষয় গ্রহণ না করার নীতি এগুলোকে অক্ষুণ্ন রেখেই স্বীকৃতির বিষয়টি এগুচ্ছে। এটি একটি ভালো খবর।

দ্বিতীয়ত এ স্বীকৃতির সুদূর প্রসারি ফল কী? এটা কি কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বাইরের জগতমুখী করে তুলবে? সার্টিফিকেটমুখী করে তুলবে? নাকি এতদিনকার নৈতিকতার ধারা, আখলাকিয়াতের ধারা, তরিবয়তের ধারা, ইলম এবং আমলের ধারা অব্যাহত থাকবে? এগুলো যদি এভাবেই অব্যাহত থাকে এবং স্বীকৃতির কারণে অন্যদিকে প্রত্যাবর্তিত না হয় তাহলে এ স্বীকৃতি একটি ভালো বিষয়। এ স্বীকৃতির সুফল বহুদূর পর্যন্ত পাওয়া যাবে।

এ স্বীকৃতির আরেকটি বড় অর্জন বলা যেতে পারে যে, কওমি মাদরাসার শিক্ষাও যে একটি শিক্ষা ধারা বা এর শিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষজনও যে শিক্ষিত এ কথাটি কাগজে কলমে স্বীকার করা হতো না। এখন এ ধাপ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে তাদেরকে শিক্ষিত হিসেবে গণ্য করার একটি পর্যায়ে পৌঁছা গেছে। এটাকেও একটি বড় বিষয় মনে করা যেতে পারে।

তৃতীয় একটি বিষয় হচ্ছে, মনে করা হচ্ছে এ স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি মাদরাসার সিলেবাসে কোনো ধরণের প্রভাব পড়বে না। এ বিষয়ে আমাদের ওলামায়ে কেরামের অভিভাবকজন ও মুরুব্বিদের একটি বিষয় লক্ষ্য রাখার প্রয়োজন হয়ে যেতে পারে। স্বীকৃতি আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু দেওয়া এবং তার বিনিময়ে নেওয়ার কোনো প্রেক্ষাপট মাদরাসাগুলোর সঙ্গে যেন না হয়। তারা বলতে পারে, এখন তো আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি আপনারা এই বিষয়গুলো মানুন। এমন কোনো সংস্কৃতি গ্রহণ না করা চাই, যা কওমি মাদরাসার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। এমন বিষয় চাপিয়ে দেওয়া বা যুক্ত করা থেকে দূরে থাকা বা সতর্ক থাকা একটি বড় ব্যাপার। তবে প্রাসঙ্গিক কারণে এটাও বলতে হয় যে, কওমি মাদরাসায় যুগের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে সিলেবাস বা কোনো বিষয়ে সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো কিছু দরকার মনে হলে আমাদের উলামায়ে কেরাম তাদের ইলমি প্রজ্ঞা বা আমলি পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটা করবেন। এটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা হতেই পারে। কিন্তু সরকারের চাপের কারণে যেন মাদরাসাগুলোকে নতি স্বীকার করতে না হয় এ বিষয়টি আমাদের অভিভাবকজনদের লক্ষ্য রাখতে হবে। সতর্কতার এ ব্যাপারটি আগের যে কোনো সময় থেকে এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা ফারেগিন বা শিক্ষা সমাপনী ছাত্র আছেন তারা এ স্বীকৃতিটিকে বাহিরের দিকে যাওয়ার একটি বড় টার্গেট বানাবেন কি না এবং সে বাহিরটা কতটুুকু বাইরের হবে ? এক হলো, যারা মাদরাসায় পড়েছেন তারা মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন, মসজিদের ইমামতি খেতাবতি বা এরসঙ্গে ইসলামি লেখালেখি বা সাংবাদিকতাও কিছু করছেন। এখন স্বীকৃতির কারণে বিষয়টি আরেকটু সম্প্রসারিত হতে পারে। সেটি যেন সামঞ্জস্যশীল সম্প্রসারণ হয়। যেমন বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা করা, স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, বা ধর্ম বিষয়ে স্কুল কলেজ বা আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করা। তবে বাইরে পা দেওয়ার এ বিষয়টি যদি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে, তাহলে সেটি হবে মন্দ দিক। যেমন পুলিশ বিভাগ, একদম সাধারণ পর্যায়ের সরকারি চাকরি বা অন্যান্য পর্যায়ের চাকরির ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে। এজাতীয় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলে আমাদের কওমি মাদরাসার বহুদিনের ঐতিহ্য বাধাগ্রস্ত হয় কি না দেখতে হবে। শত শত বছরের এ ঐতিহ্য বাধাগ্রস্ত হলে আশঙ্কার বিষয়। যেমনটা বর্তমানে আলিয়া মাদরাসাগুলোর পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়। মুরুব্বিদের কাজও হবে, কওমি ঐতিহ্য ও ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যাওয়া।

আরেকটি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টি ঘোষণা হওয়ার পর আল হাইয়াতুল উলইয়া নামে একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার অধীনে দুটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তারা এবং এর আগে যারা ফারেগ হয়েছে তাদের বিষয়টি কী হবে? এটিও আলোচনার বিষয়। সেইসঙ্গে লক্ষ্য রাখার বিষয়, সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দূরত্বে থাকার বহুদিনের ঐতিহ্য ভেঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার যে উপলক্ষ তৈরি হলো এটা মন্দ কোনো দিক বয়ে আনে কি না। এটা ভাবনার বিষয়। সকল আশঙ্কা, সকল মন্দ দিক দূর হয়ে যাক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ স্বীকৃতির ভালো দিকগুলো দান করুক। ভীতি ও শঙ্কার জায়গা থেকে রক্ষা করুন। কওমি মাদরাসার নীতি ও ঐতিহ্যের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারি, আজকের এই আনন্দ ও প্রাপ্তি হচ্ছে সতর্কতা ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করার মতো একটি ঐতিহাসিক প্রাপ্তি।

শ্রুতিলিখন: ওমর ফারুক

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...