ইলিয়াস মশহুদ ::
যে মহামানবের সৃষ্টি না হলে কোন কিছুরই সৃষ্টি হতনা, যার পদচারণায় ধুলিকণা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে ধন্য হয়েছে সবই। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, ভালোবাসা, অন্তরের পবিত্রতা, ধৈর্য্য, মহত্ব, ক্ষমা, ভদ্রতা, নম্রতা, বদান্যতা, শিষ্টাচার, উত্তম স্বভাব, আমানতদারী, ন্যায়পরায়, উদারতা, কর্তব্যনিষ্টা ছিল যার সম্বল। যিনি ছিলেন এতীম হিসেবে স্নেহের পাত্র, স্বামী হিসেবে প্রেমময়, পিতা হিসেবে মায়াময়, সাথী হিসেবে বিশ্বস্থ যিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী, সমাজ সংস্কারক, বিচারের মঞ্চে ন্যায় বিচারক, মহৎ রাজনৈতিক, সফল রাষ্ট্রনায়ক, যুদ্ধের ময়দানে লড়াকু যুদ্ধা। তিনি হলেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সর্বশ্রেষ্ট মহানমানব হযরত মুহাম্মদ সা.। তিনি যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব! একথা যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই; বরং সভ্য পৃথিবীর অমুসলিমরা পর্যন্ত এ সত্য স্বীকারে বাধ্য হয়েছে যে, তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ট মহামানব। যেমন ভাবে ঐতিহাসিক, খ্রীস্টান লেখক উইলিয়াম মুর বলেছেন, ‘হযরত মুহাম্মদ সা. কে শুধু সে যুগেরই একজন মনীষী বলা যাবেনা; বরং তিনি ছিলেন সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ট মনীষী।’ শুধু উইলিয়াম মুরই কেন? এই মাটির পৃথিবীতে জ্ঞানের জগতে পদচিহ্ন রেখে যাওয়া প্রায় সকলেই বিশ্বনবী সা. সম্পর্কে এ ধরণের সুচিন্তিত মতামত রেখে গেছেন।
আমরা সকলেই জানি, নবী করীম সা. এমন এক ক্রান্তিকালে এই পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, যেটাকে পরবর্তী কালের ঐতিহাসিকগণ ‘আইয়ামে জাহেলিয়্যাত’ বা মূর্খতার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু মাত্র তেইশ বছরের নবুওতী জীবনে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতিতে ইসলাম নামের এ্ শাশ্বত জীবন বিধানকে এমনভাবে বিজয়ী করে তুললেন যে, সমকালীন বিশ্বের সত্যান্বেষী মহল তখন ইসলামের আত্মসমর্পন না করে আর থাকতে পারলনা। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে সাহাবীর মর্যাদা পেলো। পেয়ে গেলো দুনিয়া ও আখেরাতের পূর্ণ মর্যাদার গ্যারান্টি।
যাক, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা যার গুণকীর্তন করেছেন পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায়। যাকে আল্লাহ তায়ালা ‘সারা জাহানের রহমত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য ‘শুভ সংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী’ বলেছেন। যার জীবন মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ, বা উস্ওয়াতুন হাসানা বলে উল্লেখ করেছেন। যাকে এই বলে মর্যাদার উচ্ছাসনে আসীন করেছেন ‘আমি তো তোমাকে দিয়েছি কাউসার, উন্নত চরিত্র, অনুপম সৌন্দর্য, বংশাভিজাত্য, আর পূর্ণ সফলতা’। এমনকি তার আবাসভূমি সম্পর্কে বলেন, আমি এই শহরের শপথ করে বলছি, যে শহরে আপনি থাকেন।
বিশ্ববিধাতা যার উজ্জল জীবন সৌন্দর্যের অতুলনীয় প্রশংসা করেছেন, তার শ্রেষ্টত্ব কী আর লিখে শেষ করা যাবে? যার নূরানী অস্তিত্বের ছোঁয়ায় মৃত প্রায় সভ্যতা নতুনভাবে জীবন লাভ করেছে। জংধরা জাহিলিয়্যাতের অমানিশা বিদূরিত হয়েছে। পথহারা পথিক পেয়েছে পথের সন্ধান। মানবতা পেয়েছে সঠিক দিশা। এক লক্ষ বা দুই লক্ষ ২৪ হাজার আম্বিয়ায়ে কেরামের রেপিত আদর্শের বীজবৃক্ষ নবযৌবনে জেগে উঠেছে। সেই মহা মানবের শ্রেষ্টত্ব বর্ণনা করার ভাষাই বা কার আছে? অতএব, হাজারো খেয়ালিপনা ইার অক্ষমতার ভেতরও এই ভেবে একটু সান্তনা পাই, গর্বিত হই; আমরা যে উম্মতে মুহাম্মদী। তবে তার শ্রেষ্টত্ব বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। ক্ষমতা নেই তার অপরূপ সৌন্দর্য, মর্যাদা, বৈশিষ্ট, সফলতাকে বর্ণনা করার। তিনিই আমাদে প্রিয় নবী, প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ সা.।