বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১১:১৮
Home / অনুসন্ধান / প্রসঙ্গ কওমি স্বীকৃতি : বিরোধীরা ক্ষেপেছে

প্রসঙ্গ কওমি স্বীকৃতি : বিরোধীরা ক্ষেপেছে

ফুজায়েল আহমদ নাজমুল  

কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির দাবী হঠাৎ করে উত্তোলন করা হয়নি। এ দাবী আদায়ে নব্বইয়ের দশক থেকে আন্দোলন করা হচ্ছে। যে সরকারই ক্ষমতায় বসেছে সে সরকারের কাছেই স্বীকৃতির জোরালো দাবী উঠানো হয়েছে। বিএনপি-জামাত সরকারের সময় শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক (রহ:) মুক্তাঙ্গনে ছাত্রসমাজকে নিয়ে অনশন করে দাবী আদায়ের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন বেগম জিয়ার কাছ থেকে। বেগম জিয়াও আশ্বাস দিয়েছিলেন। গেজেটও হয়েছিল। কিন্তু সরকারে থাকা কিছু বাম আর ডান নেতাদের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক স্বীকৃতি ইস্যুকে ঝুলিয়ে রাখা বিএনপির জন্য চরম ভুল একটি সিদ্ধান্ত ছিল। বিএনপি-জামাত সরকার যদি এ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করতো তাহলে তাদের রাজনৈতিক জীবনে ঐতিহাসিক এক উদারণ সৃষ্টি হতো।

বিএনপি-জামাতের অনেক ভাইয়েরা বলেছেন কওমী সনদের স্বীকৃতি চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই হয়েগেছে। যদি তাই হয় তাহলে স্বীকৃতিটা কোথায়? স্বীকৃতি হয়ে গেলে আবার কি স্বীকৃতির জন্য দাবী করা যায়? আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে? অবাস্তব যুক্তি দিয়ে সত্যকে আড়াল করা যায় না একথা মনে রাখতে হবে।

জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ‘কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতির প্রয়োজন’ এই তাগিদে আওয়ামীলীগ সরকার নিজেদের ইচ্ছে থেকে এগিয়ে আসেনি। আন্দোলনের মাধ্যমে এ স্বীকৃতি দিতে সরকারকে বাধ্য করা হয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নেয়ার কারণে হোক বা সময়ের যৌক্তিক দাবী হিসেবে হোক সরকারও মেনে নিতে রাজী হয়েছে। আমরাও সাদরে গ্রহণ করেছি। স্বীকৃতি আওয়ামীলীগ সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে না বিএনপি সরকারের কাছথেকে গ্রহণ করা হচ্ছে তা আমাদের দেখার বিষয় ছিল না। আমরা ব্যক্তি শেখ হাসিনা বা রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ থেকে এ স্বীকৃতি গ্রহণ করিনি। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছথেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছি। যার মাধ্যমে, যার কাছথেকে আমাদের দাবী আদায় হবে, আমাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে তাকেই আমরা ওয়েলকাম জানাবো। তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আর এটাই স্বাভাবিক। এখানে কারো অবাক হওয়ার কিছুই নেই।

সরকার আমাদের দাবী মেনে নিয়েছে। গণভবনে এ দাবী ছাড়াও আরো কিছু দাবী উত্তোলন করা হয়েছিল। সেগুলোও মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে গিয়ে কওমী ওয়ালাদের পজিশনের ক্ষতি হয়নি। আমি মনে করি এখানে কওমী ওয়ালারা জিতেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার সরকারের আদর্শিক পরাজয় হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ ইসলামী জাগারণের পথে আরো একধাপ এগিয়েছে।

সমাজে একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা কওমী মাদরাসা শিক্ষাকে সবসময়ই পেছেনে ফেলে চলতে চেয়েছে। আজও তারা চায় কওমীরা পেছনে থাকুক। অতীতেও তারা কওমী ওয়ালাদের ক্ষমতার সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। আজও ক্ষমতার সিড়ি হিসেবে ব্যবহারের স্বপ্ন দেখছে। শাপলা চত্ত্বরের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার মসনদ দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। সেই দুঃখ বেদনা আজও তারা সইতে পারছে না। এজন্যই কওমী সনদের ইস্যুকে শাপলা চত্ত্বরের ইস্যুর সাথে মিলিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসার সুযোগ না হওয়ার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু আওয়ামীলীগই কি কওমী ওয়ালাদের উপর নির্যাতন করেছে? কওমী ওয়ালাদের হত্যা করেছে? এমন কোন সরকার আসেনি যে তারা কওমী ওয়ালাদের উপর হাত তুলেনি। হত্যা করেনি। জেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন করেনি। বিএনপি-জামাত সরকার কুখ্যাত মুরতাদ তাসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন দমন করতে ছাত্র মজলিসের কিশোর কর্মী ‘আরমান’কে হত্যা করেছে। আরমানের কি অপরাধ ছিল? কুরআনের ইজ্জত রক্ষার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল এটাই ছিল তার অপরাধ।

জামাত-বিএনপির নেতাকর্মীরা আজকে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে নিয়ে গালাগালি করছেন। তিরস্কার করছেন। অনলাইনে কওমী ওয়ালাদের বিরুদ্ধে অসভ্য, অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন। যে ভাষার ব্যবহার বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের মুখেও শুনা যায়নি। আজ যারা কওমী ওয়ালাদের উপর ক্ষেপেছে তারা অবশ্যই একদিন এর খোসরাত দিতে হবে। ভোটের রাজনীতিতে কওমী ওয়ালারা যে বিরাট ফ্যাক্টর একথা বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন অন্তত তারা সময় আসলে বুঝেন।

যুক্তরাজ্য জামায়াতে ইসলামীর মূখপাত্র মুহাম্মদ আবুবকর মোল্লা ফেসবুকে লিখেছেন- “৫ই মে শাপলা চত্ত্বরের খুনিদের বিচারের দাবিটি আজ দেখি তোলা হচ্ছে না। কেন? শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে যদি আমরা হক কথা না বলি। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। খুনিদের বিচার হতেই হবে। শহীদদের নিস্পাপ রক্তের সাথে যেন আমরা কোন কালিমা লেপন না করি। “

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জামাতে ইসলামীর এক নেতা শামীম উদ্দীন ফেসবুকে লিখেছেন-

“এই বয়সে মাঝের বাড়ির লালা ঝরার কথা না, তবে জিবে লালা আশার কথা! যদি জিবেও লালা না আসে, তাহলে ড. দিপু মনির শরণাপন্ন হওয়া উচিত! কি বলেন অপনারা?

বঙ্গ ভবনের ছাদের নিচে BAL উঠেছে ওই!
কাজলা বুবু আমার কওমি সনদ গেল কই?
লুকাই লুকাই জীবন গেল এমন আর কতক্ষন সই?
হয়তো এ জীবনের শেষ দেখা মোর মনটা ভইরা লই! আরেকটু কাছে এসো
বাহ্_বাহ্_বাহ্_তুমার_হাসি_খুব_চুইট !”

জামায়াত নেতা সাহাদাত হোসাইন লিখেছেন-

“কউমী ভাইয়েরা স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় ছাগলের তিন বাচ্চার দুধ না খাওয়া এক বাচ্চার মতো লাফাইতেছে। আসল বিষয়ে বেমালুম বেখবর বেয়াকুফেরা। এইটা কার্যকর হলে যে তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে দানের টাকায় সেই সব মুনাফেক আলেমদের জীবন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর হালাল ভেবে ভুগ করছে, সেই জায়গায় যে অনেকে ভাগ বসাবে তা জানেনা।”

সাহাদাত হোসাইন তাঁর অপর একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

“শ্রদ্ধেয় শফি হুজুর, আপনাকে আল্লামা বলতে পারলাম না, আবার তেতুল হুজুরও বলছি না, বলছি না জাতীয় গাদ্দার। আপনি কি সেটা প্রমান হয়ে গেছে, তবে আমি আপনার উপর কৃতজ্ঞ এ কারনে যে আপনাকে দেখেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসতে, অনেক বেরশিক বন্ধু বলছে আপনার কি পর্দা নষ্ট হলো না? আমি তাদেরকে আপনার হয়ে বলবো, এই বয়সে কিসের পর্দা নষ্ট হবে? আপনার কি শরীর গরম হবার বয়স আছে?”

জামায়াত নেতা আবুল হাসনাতফরীদ আহমদ রেজা’র একটি পোস্টে কমেন্ট করেছেন-

“হায়রে আহম্মক শফি, শেষ বয়সে এসে বাতিলের সাথে আপষ করলি,৫ইমের শহিদরা কোন দিন তোকে ক্ষমা করবে না।দুনিয়া আর কতদিন?২টি পা তোমার কবরে গেছে অথচ লোভ সামলাতে পারলিনা?আব্দুল্লা বিন ওবাইকে দেখিনাই।এখন বুঝলাম সে আর তুই কোন পার্থক্যনাই।বেচে থাকলে দুনিয়াতে তোর বিচার হবে, এই সমস্ত আলেমদের কি করা উচিৎ?”

মেজবাহ উদ্দীন নামের একজন এক পোস্টে কমেন্ট করেছেন-

“আলখেল্লা শফি। তেতুল পচে শেষ, এখন আর নাকে গন্ধ লাগে না। এই শুয়োরগুলো একইভাবে ইসলামের নাম নিয়ে বৃটিশ বেনিয়াদেরও গোলামী করতো।”

ফেসবুক জুড়ে শতশত এমন পোস্ট রয়েছে, যেগুলো আল্লামা শাহ আহমদ শফি ও কওমী ওয়ালাদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। এসব নোংরামি দেখে সত্যিই আমরা অবাক হয়েছি। কাকে খুশি করার জন্য ওরা কওমী ওয়ালাদের উপর ক্ষেপেছে? কওমী ওয়ালারা এমন কি ক্ষতি করেছেন তাদের? কওমী সনদের স্বীকৃতি তাদের ভবিষ্যৎ চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কি না এই ভয়েই তারা আজ দিশেহারা মনে হচ্ছে।

জয় হোক কওমী সন্তানদের জয় হোক সত্যের। এই মিনতি মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে।

লেখক : রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...