আলী ইমাম মজুমদার :
এ ছাড়া সে জেলার সর্বত্র, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের কিছু অংশেও তারা রয়েছে। জাতিগত নিপীড়নের শিকার এ জনগোষ্ঠীকে আমরা পারছি না ফেরাতে। প্রাণভয়ে পালানোর পর মানুষকে বাধা দিলেও ঢুকে পড়বেই। তখন আমরা অমানবিকভাবে তাদের বেরও করে দিতে পারি না। এভাবেই থেকে যায় তারা। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। অনেকেই মিশে গেছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে। নিজেরা শ্রম দিয়ে অর্জন করছে জীবিকা। এতে আমাদের সে অঞ্চলের শ্রমবাজারে স্থানীয় শ্রমিকেরা শিকার হচ্ছে বৈষম্যের।
আমরা সমস্যাটির সমাধান খুঁজছি কয়েক যুগ ধরে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য তাদের আদি বাসভূমি হলেও নিজ দেশে তারা পরবাসী। গত কয়েক মাসে সেখানে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে নারীরা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। এসবই করা হয়েছে সেনা অভিযানের নামে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে সে অভিযান অতি সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে বটে। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বোধ করার কারণ এখনো ঘটেনি। আধুনিক শিক্ষা তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই কুসংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মান্ধতা স্থান করে নিয়েছে কিছুসংখ্যকের মাঝে।
অন্যদিকে সরকারি বাহিনী এবং স্থানীয় ভিন্ন সম্প্রদায়ের অব্যাহত বৈরী আচরণ তাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দীর্ঘকালের সামরিক শাসনমুক্ত হলেও দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেনি মোটেই। গোত্রীয় সংঘাত সে দেশের প্রধান সমস্যা। লক্ষণীয়, নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি চাপে আছেন। আর জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলো মূলত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আর এরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়িত্বে আছেন। পুলিশ ক্যাম্পে জঙ্গি হামলার বিপরীতে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জীবনে সাম্প্রতিক কালে যে বিয়োগান্ত অধ্যায় নেমে এসেছে, তা বিশ্ববাসী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেনি। জানিয়েছে প্রতিবাদ। আর তা জানিয়েছে বারবার। সম্ভবত এরই ফলে লোক দেখানোর জন্য হলেও সেনা অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সরকার কফি আনান কমিশন গঠন করেছিল। কাজও শুরু করেছিল সে কমিশন। কিন্তু সে রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে একটি সম্প্রদায়। এ ধরনের কমিশন কাজ করার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা দেওয়া হয়নি তাদের। বৈরী পরিবেশেও তারা সচেষ্ট আছে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত এ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিজ ভূমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখতে। যদি কিছু জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হয় তাহলে এ আকৃতির জীবন, সম্মান ও আশ্রয় বিধ্বংসী কার্যক্রম প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। তাহলে যারা এটা করল, তাদের বিচার করা সংগত। তাহলেই অন্যরা বিরত থাকবে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম করা থেকে।
তবে প্রশ্ন থাকে, আমরা এ রোহিঙ্গাদের নিয়ে করবটা কী? সোজা জবাব হতে পারে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমারকে তাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। এটা হয়তো একসময় সম্ভব হতেও পারে। তবে যথেষ্ট সময় লাগার কথা। নিবন্ধিত শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর এবার যারা এসেছে তারা ছাড়াও এ উপত্যকার স্থানে স্থানে সংরক্ষিত বনভূমিতে ঝুপড়ি গড়ে বসবাস করছে অনেক রোহিঙ্গা। যারা মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছে তাদের সম্পূর্ণভাবে তালিকাভুক্ত করা যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে যতটা সম্ভব সব অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে দ্রুত নিবন্ধিত ও শিবিরবাসী করা দরকার। তাদের জন্যও বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। এবার আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়া একটি ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে। তবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ নানাবিধ সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমেই প্রাতিষ্ঠানিক ও ধারাবাহিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া সমীচীন হবে।
কথাটি আসবে রোহিঙ্গা শিবির কোথায় হবে? সরকার ইতিমধ্যে টেকনাফ উপত্যকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরানোর জন্য একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বনভূমির ক্ষতি, পর্যটন ব্যবসায় বিঘ্ন, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সে অঞ্চল থেকে তাদের স্থানান্তর করে নোয়াখালীর একটি দ্বীপে শিবির স্থাপনের কথা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠেঙ্গারচরে শিবির স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া থেকে সাগরপথে ১৫ কিলোমিটার। এখানে রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে ভিন্নমতও আছে। দ্বীপটি এখনো জনবসতির উপযোগী হয়নি বলেও দাবি করা হয়।
আবার ভিন্নমতে এতে জনবসতি গড়ে তোলার জন্য কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেই হবে। তা যদি করাও হয় তাহলে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য সহায়ক হবে কি না ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে দাতা দেশগুলো এবং ইউএনএইচসিআরকে আস্থায় নিতে হবে। নতুবা একক দায়িত্ব বর্তাবে আমাদের সরকারের ওপর। শরণার্থীদের যে ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হয়, তাতে কোনো সময়ই জীবনধারণের সব উপকরণ থাকে না। এগুলো তারা সংগ্রহ করে লোকালয় থেকে গোপনে শ্রম বিক্রি করে। রান্নার কাঠও অনেক ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বনভূমির কাঠ কেটেই জোগাড় করছে। শিবিরজীবন দু-চার মাসের জন্য হবে না। সম্ভবত হবে একটু দীর্ঘস্থায়ী। তাই মাছ, মাংস, ডিম, দুধও মাঝেমধ্যে লাগবে। প্রয়োজন হবে শাকসবজির। সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে শুরুতেই।
ধরে নিলাম এগুলো সবই মিলবে ত্রাণ হিসেবে। তবে সে ত্রাণভান্ডারের মজুত, চলাচল ও বিতরণের জন্য ভৌত অবকাঠামো ছাড়াও আবশ্যক হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা। ছোটখাটো হাসপাতালসহ ডাক্তার, প্যারামেডিক, নার্স লাগবে। ওষুধপথ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়মিত হতে হবে। বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসার লাগবে। ধারেকাছে থাকতে হবে কোস্টগার্ডকে। এখন যেখানে আছে সেখানে তাদের কারও কারও সঙ্গে জঙ্গি সান্নিধ্যের আশঙ্কা করা হয়। এ সুযোগ না থাকাই সংগত। তবে বর্তমান অবস্থান নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। এ দ্বীপ ভূমিতে কি তা থাকবে? জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোরও অতি সংগোপনে এখান থেকে লোক নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে কি? তারপর থাকছে পরিবেশের কথা। আমরা ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে যেখানে যেটা করব, সেটা পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব ফেলবেই। এখন বন ও বন্য প্রাণীর জন্য তারা হুমকি। তেমনি দ্বীপবাসী হলে হুমকি হবে জলজ প্রাণী, পরিযায়ী পাখিসহ ম্যানগ্রোভ বনের।
তবে তাদের একটি নিরাপদ শিবিরে স্থানান্তর অত্যন্ত প্রয়োজন। তা কোথায় কীভাবে করা যায় তা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু ত্রাণসাহায্য না দিয়ে কিছু পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে পারে ভিন্ন দেশে। ভুটান থেকে বিতাড়িত ৬০ হাজার নেপালি শরণার্থীকে কয়েক বছর আগে আশ্রয় দিয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। এমন একটি পুনর্বাসন প্রচেষ্টার জন্যও কি জোর উদ্যোগ নেওয়া যায় না। জনবিরল ও জনশক্তির জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল আরব দেশগুলো এবং মালয়েশিয়া এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিতে পারে। পাশ্চাত্য বিশ্ব তো পারেই। তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সব দিক দিয়ে।
আমরা সমস্যাটির সমাধান খুঁজছি কয়েক যুগ ধরে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য তাদের আদি বাসভূমি হলেও নিজ দেশে তারা পরবাসী। গত কয়েক মাসে সেখানে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে নারীরা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। এসবই করা হয়েছে সেনা অভিযানের নামে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে সে অভিযান অতি সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে বটে। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বোধ করার কারণ এখনো ঘটেনি। আধুনিক শিক্ষা তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই কুসংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মান্ধতা স্থান করে নিয়েছে কিছুসংখ্যকের মাঝে।
অন্যদিকে সরকারি বাহিনী এবং স্থানীয় ভিন্ন সম্প্রদায়ের অব্যাহত বৈরী আচরণ তাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দীর্ঘকালের সামরিক শাসনমুক্ত হলেও দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেনি মোটেই। গোত্রীয় সংঘাত সে দেশের প্রধান সমস্যা। লক্ষণীয়, নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি চাপে আছেন। আর জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলো মূলত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আর এরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়িত্বে আছেন। পুলিশ ক্যাম্পে জঙ্গি হামলার বিপরীতে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জীবনে সাম্প্রতিক কালে যে বিয়োগান্ত অধ্যায় নেমে এসেছে, তা বিশ্ববাসী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেনি। জানিয়েছে প্রতিবাদ। আর তা জানিয়েছে বারবার। সম্ভবত এরই ফলে লোক দেখানোর জন্য হলেও সেনা অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সরকার কফি আনান কমিশন গঠন করেছিল। কাজও শুরু করেছিল সে কমিশন। কিন্তু সে রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে একটি সম্প্রদায়। এ ধরনের কমিশন কাজ করার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা দেওয়া হয়নি তাদের। বৈরী পরিবেশেও তারা সচেষ্ট আছে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত এ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিজ ভূমি থেকে সমূলে উচ্ছেদ করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখতে। যদি কিছু জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হয় তাহলে এ আকৃতির জীবন, সম্মান ও আশ্রয় বিধ্বংসী কার্যক্রম প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। তাহলে যারা এটা করল, তাদের বিচার করা সংগত। তাহলেই অন্যরা বিরত থাকবে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম করা থেকে।
তবে প্রশ্ন থাকে, আমরা এ রোহিঙ্গাদের নিয়ে করবটা কী? সোজা জবাব হতে পারে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমারকে তাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। এটা হয়তো একসময় সম্ভব হতেও পারে। তবে যথেষ্ট সময় লাগার কথা। নিবন্ধিত শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর এবার যারা এসেছে তারা ছাড়াও এ উপত্যকার স্থানে স্থানে সংরক্ষিত বনভূমিতে ঝুপড়ি গড়ে বসবাস করছে অনেক রোহিঙ্গা। যারা মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছে তাদের সম্পূর্ণভাবে তালিকাভুক্ত করা যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে যতটা সম্ভব সব অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে দ্রুত নিবন্ধিত ও শিবিরবাসী করা দরকার। তাদের জন্যও বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। এবার আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়া একটি ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে। তবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ নানাবিধ সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমেই প্রাতিষ্ঠানিক ও ধারাবাহিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া সমীচীন হবে।
কথাটি আসবে রোহিঙ্গা শিবির কোথায় হবে? সরকার ইতিমধ্যে টেকনাফ উপত্যকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরানোর জন্য একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বনভূমির ক্ষতি, পর্যটন ব্যবসায় বিঘ্ন, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সে অঞ্চল থেকে তাদের স্থানান্তর করে নোয়াখালীর একটি দ্বীপে শিবির স্থাপনের কথা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠেঙ্গারচরে শিবির স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া থেকে সাগরপথে ১৫ কিলোমিটার। এখানে রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে ভিন্নমতও আছে। দ্বীপটি এখনো জনবসতির উপযোগী হয়নি বলেও দাবি করা হয়।
আবার ভিন্নমতে এতে জনবসতি গড়ে তোলার জন্য কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেই হবে। তা যদি করাও হয় তাহলে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য সহায়ক হবে কি না ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে দাতা দেশগুলো এবং ইউএনএইচসিআরকে আস্থায় নিতে হবে। নতুবা একক দায়িত্ব বর্তাবে আমাদের সরকারের ওপর। শরণার্থীদের যে ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হয়, তাতে কোনো সময়ই জীবনধারণের সব উপকরণ থাকে না। এগুলো তারা সংগ্রহ করে লোকালয় থেকে গোপনে শ্রম বিক্রি করে। রান্নার কাঠও অনেক ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বনভূমির কাঠ কেটেই জোগাড় করছে। শিবিরজীবন দু-চার মাসের জন্য হবে না। সম্ভবত হবে একটু দীর্ঘস্থায়ী। তাই মাছ, মাংস, ডিম, দুধও মাঝেমধ্যে লাগবে। প্রয়োজন হবে শাকসবজির। সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে শুরুতেই।
ধরে নিলাম এগুলো সবই মিলবে ত্রাণ হিসেবে। তবে সে ত্রাণভান্ডারের মজুত, চলাচল ও বিতরণের জন্য ভৌত অবকাঠামো ছাড়াও আবশ্যক হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা। ছোটখাটো হাসপাতালসহ ডাক্তার, প্যারামেডিক, নার্স লাগবে। ওষুধপথ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়মিত হতে হবে। বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসার লাগবে। ধারেকাছে থাকতে হবে কোস্টগার্ডকে। এখন যেখানে আছে সেখানে তাদের কারও কারও সঙ্গে জঙ্গি সান্নিধ্যের আশঙ্কা করা হয়। এ সুযোগ না থাকাই সংগত। তবে বর্তমান অবস্থান নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। এ দ্বীপ ভূমিতে কি তা থাকবে? জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোরও অতি সংগোপনে এখান থেকে লোক নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে কি? তারপর থাকছে পরিবেশের কথা। আমরা ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে যেখানে যেটা করব, সেটা পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব ফেলবেই। এখন বন ও বন্য প্রাণীর জন্য তারা হুমকি। তেমনি দ্বীপবাসী হলে হুমকি হবে জলজ প্রাণী, পরিযায়ী পাখিসহ ম্যানগ্রোভ বনের।
তবে তাদের একটি নিরাপদ শিবিরে স্থানান্তর অত্যন্ত প্রয়োজন। তা কোথায় কীভাবে করা যায় তা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু ত্রাণসাহায্য না দিয়ে কিছু পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে পারে ভিন্ন দেশে। ভুটান থেকে বিতাড়িত ৬০ হাজার নেপালি শরণার্থীকে কয়েক বছর আগে আশ্রয় দিয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। এমন একটি পুনর্বাসন প্রচেষ্টার জন্যও কি জোর উদ্যোগ নেওয়া যায় না। জনবিরল ও জনশক্তির জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল আরব দেশগুলো এবং মালয়েশিয়া এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিতে পারে। পাশ্চাত্য বিশ্ব তো পারেই। তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সব দিক দিয়ে।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
majumder234@yahoo.com
majumder234@yahoo.com