সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:১৬
Home / প্রতিদিন / সমুদ্র ঈগল ৬ (খ)

সমুদ্র ঈগল ৬ (খ)

কুতায়বা আহসান :

– কা’ব বিন আমির হেসে দিলেন, বললেন:
– বেটি! আসলে ফারদিশ নদীর কিনারে গড়ে ওঠা রাহিব পল্লীতে যেসব রাহিব বসবাস করছেন তারা আল বাশারাতের অধিবাসীদের সহযোগী ও সাহায্যকারী। ওরা আসলে আমাদের কল্যাণকামী। আমাদের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে তারা নিরাপদ দূরে অবস্থান করেন। প্রথমবার বুট্রুস এবং লিসাঙ্কু নামক যে দুই রাহিব এসেছিলেন, তাঁরা আমার আর সাদ বিন সালামার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করে গেছেন। এরপর ব্রুট্রুস নামক রাহিব একা এসে আমাকে এ পরামর্শ দিয়ে যান আপনি আর সাদ বিন সালামা আপনাদের গোত্রের কিছু যুবক সদস্যদেরকে বলুন— তারা যেন তাদের গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে রাখে। এ লক্ষে তিনি আমার ও সাদের কাছে গলায় ঝুলানোর মতো কিছু ক্রুশও দিয়ে গেছেন। তাঁরা বলে গেছেন, আপনারা আপনাদের ধর্মকর্ম পালন করুন কোনো অসুবিধা নেই। তবে গলায় ক্রুশ লটকালে ফায়দা হবে— আমরা বিশপদের বুঝাতে পারবো আল বাশারাতে নাসারকরণ প্রক্রিয়া সন্তুষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের অসন্তুষ নেই। এতে করে ইহতেসাবী আদালতগুলোও শান্ত হয়ে যাবে। তারা আলবাশারাত নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামাবে না।

– মা’আয কন্ঠে অধিক শ্লেষ মিশিয়ে বলল: বেশ বেশ! রাহিবদের কথায় বিশ্বাস করে মুসলিম যুবকদের গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে দিন।
– কাব বিন আমির তার কন্যার মনোভাব বুঝতে পারলেন। তিনি হেসে বললেন:
– বেটি মা’আয! সময়ের চাহিদাটা হচ্ছে আমরা যেন ব্রুট্রুসের কথা মতো কাজ করি। মা মা’আয! জেদ সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য সমাধান নয়। কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতেই হয়। মনজিলে মাকসুদে পৌঁছা যদি লক্ষই হয়ে থাকে তাহলে সব সময় কেবল সরল পথেই হাটলেই হবে না, মাঝে মধ্যে কোণাকোণি সরু পথেও চলতে হয়। জীবনের শাহ রাহে সব সময় ফুল আর কালিন বিছানো থাকে না, কখনো কখনো কাদা এবং কন্টকও থাকে। বেটি আমি আর তোমার চাচা সাদ অনেক ভেবে চিন্তেই বুট্রুসের বাতানো পন্থা গ্রহণ করে নিয়েছি। আমি এ ব্যাপারে এখন আর বিস্তারিত বলবো না। তবে তুমি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পার— তোমার পিতা জাতির সাথে গাদ্দারি করছে না। জাতির ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ কোনো দিনই সে করবে না।

– মা’আয অনেকক্ষণ মাথা নুইয়ে রেখে একসময় সে তার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল: ঠিক আছে আব্বা! আমিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আপনাকে পীড়াপীড়ি করব না। হতে পারে আপনাদের গৃহীত ব্যবস্থার মধ্যেই আলবাশারাতবাসীর জন্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই নাসরানি রাহিবগুলোর কাছ থেকে কল্যাণ প্রত্যাশা করা আত্মপ্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
– আব্বু! এ ব্যাপারটি এখানেই থাক। আমি অাপনার সাথে অন্য আরেকটি ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই!
– আমি দেখতে পাচ্ছি গত ক’দিন ধরে গ্রানাডার দিক থেকে দলে দলে নিপীড়িত মুসলমানরা আমাদের আল বাশারাতে ছুটে আসছে। আর আমাদের কাহতানী ও আদনানী যুবকরা রাতের আঁধারে তাঁদেরকে সাগর পারের জেলে পল্লীতে স্থানান্তর করছেন। আমি জানতে চাই ওরা কারা? কোত্থেকে ওরা আসছে। জেলে পল্লীতেই বা ওদেরকে পৌঁছিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন? সেখানে ওদের কাজটা কী?
– কাব বিন আমির প্রশ্নটা শুনে গম্ভীর হয়ে উঠলেন। বললেন: বেটি! লক্ষ রেখো কথাটা যেন একান ও কান হয়ে ছড়িয়ে না পড়ে। যারা আল বাশারাতে ছুটে আসছে তারা মূলত আন্দালুসীয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান। নাসাদের ডাকাতগুলো এদের অনেকের সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে নির্যাতন করছে। অনেককে জোরপূর্বক নাসারা বানানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা আমাদের সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করে ওদেরকে সাগর তীরে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। ওদের সংখ্যা আরো কিছু বেড়ে গেলে সাগরে কর্মরত আমাদের মিল্লাতের কিছু আযীম ফরযন্দ এদেরকে আফ্রিকা বা অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছাবার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

– কাব বিন আমিরের ওষ্টে মুচকি হাসি খেলা করছিল। তিনি মা’আযের দিকে তাকিয়ে বললেন: মা! যখন এই আযীম ফরযন্দরা ওদের নিতে আসবেন তখন তাদের সাথে তোমারও মোলাকাত হতে পারে। এখন তুমি একটু ধৈর্য ধারণ কর। আমাকে বিস্তারিত বলতে বাধ্য করো না। দেয়ালেরও কান আছে। আমি চাই না বিষয়টা প্রকাশ পাক। কোনো ভাবে আমাদের এই মহান মিশনটা বাধাগ্রস্ত হোক। এখনো সাহিল অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ লোক জড়ো হয়নি। আশা করছি অল্প ক’দিনের মধ্যেই একজাহাজ লোক জড়ো হয়ে যাবে। তখন যারা ওদেরকে নিতে আসবে আমি কথা দিচ্ছি তাদের সাথে তোমার মোলাকাতের এবং কথা বলার সুযোগ করে দেব। এখন তুমি তোমার কামরায় গিয়ে আরাম কর।
– মা’আয দাড়িয়ে গেল। কিন্তু তার চোখের ভাষা যেন বলছিল— বাবা! আপনি যা বলছেন তাতে আমার অন্তর শান্ত হবে কি, আরো অধিকতর অশান্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু সে কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারছিল না। ভারী পায়ে সে নিজ কামরার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। চলবে
আরও পড়ুন : সমুদ্র ঈগল ৬ (ক)

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...