রেজাউল কারীম আবরার:
বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। সৌন্দর্য দুহাত উজাড় করে দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পসরা সাজিয়েছে আমাদের দেশে। ‘রুপের রাণী’ বলা হয় আমাদের দেশকে। বাংলাদেশের যে কয়েকটি জেলায় সবচেয়ে বেশি ভ্রমণপিপাসুরা ভীড় করে, তাঁর মাঝে অন্যতম হল সিলেট। সিলেটের সৌন্দর্যতায় শুধুমাত্র বর্তমানের ভ্রমণপিপাসুরা মুগ্ধ হচ্ছে এমনটা নয়। সিলেটের সৌন্দর্যতায় মুগ্ধ হয়েছেন বিখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক ইবনে বতুতা। পৃথিবীর বেশিরভাগ এলাকা যিনি সফর করেছিলেন। এসেছিলেন সিলেটেও। জগদিখ্যাত আল্লাহর ওলী শাহজালাল মুজাররাদে ইয়ামানী রহ. এর সাথে সাক্ষাৎ করতে। সিলেটের বুক চিরে কলকল রব তুলে বয়ে চলা সুরমার সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছিল। সুরমার পানিতে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন মিশরের বিখ্যাত নীল নদকে। তিনি তাঁর সফরনামায় সুরমা নদীকে উল্লেখ করেছেন ‘নহরে আযরাক’ তথা নীল নদ নামে। সিলেটের পাহাড়ের বুক চিরে গড়ে উঠা কমলার বাগানও তাকে মুগ্ধ করেছিল। কমলার রুপের অপার সৌন্দর্যের কথা লিখতে তিনি কার্পণ্য করেননি।
বর্তমান বিশ্বের ইবনে বতুতা হলেন শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা.। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে যিনি পুরো পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ, তখনও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পরও বেশ কয়েকবার এসেছেন। সিলেটের চা বাগানের মোহময় রুপ তাকেও আকৃষ্ট করেছে। শীতের সকালে চা পাতার উপর শিশির ফোটাতে যখন সূর্যের মিষ্টি আলো পড়ে, মনে হয় মুক্তা চিকচিক করছে। চা পাতার সে সৌন্দর্য ফাঁকি দিতে পারেনি শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানীর চোখকেও! ‘বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ’ নামক গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেছেন সে সৌন্দর্যের কথা! তিনি একা নন! তাঁর সাথে সৌন্দর্য উপভোগ করতেন আল্লামা ইউসুফ বানুরী রহ.। প্রতিদিন সকালে উভয়ে বের হতেন সিলেটের চা বাগানে হাটার জন্য। বর্তমানে সারা বছর সিলেটে ভ্রমণপিপাসুদের ভীড় লেগেই থাকে। আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি দেখে কারো কারো চোখের পাতা ভিজে উঠে! নিজের অজান্তে মুখ থেকে বের হয় ‘আল্লাহু আকবার’। আবার কেউ ভেসে যায় গড্ডালিকা প্রবাহে! শিক্ষণীয় জায়গা থেকে ফিরে পাপের ভারে ভারী হয়ে! মানুষ ঝর্ণা দেখে খিলখিলিয়ে হাসে! অথচ ঝর্ণা হল আল্লাহর ভয়ে পাথরের অশ্রু!
গেল পনের তারিখ ছিল আমার শ্রদ্ধেয় আব্বা শায়খুল হাদীস আল্লামা কুতুবুদ্দীন রহ. এর ‘জীবন-কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। আমার কর্মস্থল জামেয়া আবু বকর থেকে গিয়েছিলেন বন্ধুবর ইমদাদু হক, প্রিয় ছাত্র আশরাফ এবং হাসান আরীফ। গিয়েছিলেন ‘দারুল উলূম লাইব্রেরী’র মালিক, আমার সবগুলো কিতাবের প্রকাশক বন্ধুবর মাওলানা শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের আগের এক সপ্তাহ ব্যবস্তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। নাওয়া, খাওয়া ঘুম ছেড়ে ছুটতে হয়েছে বিভিন্ন কাজে। ছিল প্রশাসনিক কিছু দায়- দায়িত্বও! অনুষ্ঠানের আগের দিন রাত বিছানায় ঘুমাতে গিয়েছিলাম রাত একটায়। কিন্তু হাসান আরীফের ভূতের গল্প শোনার বায়না, বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে বিরত রাখা, শ্রদ্ধেয় আবুল কালাম আজাদ ভাইয়ের খুঁনসুটিতে রাতের অন্ধকার আরো প্রগাঢ় হল! সর্বসাকূল্যে রাতে ঘুমিয়েছিলাম ঘণ্টাদুয়েক। অনুষ্ঠানের দিনতো ফজরের নামায পড়েই শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা! সকালের নাস্তা সেরেই ছুটতে হয়েছে বিমানবন্দরে। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এবং মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীকে রিসিভ করতে।
বাংলাদেশ কতটুকু ডিজিটাল হয়েছে সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম! বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট আড়াই ঘণ্টা ডিলে হয়েছে! ভি.আই.পি লাউঞ্জে বসে উসখুঁস করা ছাড়া কিছুই ছিলনা আমাদের! মাহফিলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই ঘড়ির কাটায় রাত একটা পার! ততক্ষণে রাতের শেষ প্রহর আমাদের স্বাগত জানাতে চলে এসেছে!
ফজরের নামাযের পর মনে হল হাত, পা আমার সাথে নেই। নামায পড়েই আবার ঘুমাতে গেলাম! বাধ সাধলেন শহীদুল ইসলাম ভাই! কোনভাবে ঘুমানো যাবে না! কারণ জাফলং যেতে হবে! আশরাফ এর হাসান আরীফের আনন্দ দেখে কে? হয়ত আমার অবস্থা দেখে তারা ততটা সাহস পাচ্ছিল না! কিন্তু শহীদ ভাইয়ের প্রস্তাব তারা লুফে নিল! শুরু করল মিনতি! হুজুর আমাদের নিয়ে জাফলং চলেন! হাসান আরীফ কাকুতি- মিনতি এমনভাবে শুরু করল যে আমি অস্বীকার করতে পারলাম না!
বলে রাখা ভাল যে, হাসান আরীফ বাংলাদেশী বংশদ্ভেূাদ বাহরাইনের নাগরিক। সেখানে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে বেশ সুনামের সাথে। দাওয়াতে তাবলীগে সময় লাগিয়ে দ্বীন সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়! সে হিসাবে আমাদের মাদ্রাসায় এখন সে আরবী প্রথম বর্ষের তালিবুল ইলম। তাঁর আর আশরাফের যৌথ প্রচেষ্টার কাছে আমি হার মানলাম! ইমদাদ ভাই আমার শরীরের অবস্থা দেখে বাহিরে কিছু না বললেও আমি সম্মত হওয়ায় তিনিও বেজায় খুশি! আমি বললাম: তোমাদের নিয়ে জাফলং যাব! তবে আপাত ঘন্টাদুয়েক ঘুমিয়ে নেই! কিন্তু ঘুমানোর ফুরসত পেলাম কই? কিছুক্ষণ পরপর শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের তাগদা বেশ বিরক্তির উদ্রেক করল! বাধ্য হয়ে ঘুমকে কুরবানী দিয়ে উঠতে হল! রাতের খাবার খেতে বেশ দেরী হয়েছিল। এজন্য হালকা নাস্তা করে রওয়ানা হলাম জাফলংয়ের উদ্দেশে। দিনটি বিজয় দিবস হওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহন কম। বাজারে গিয়ে মাইক্রো তালাশ করলাম। পাওয়া গেলনা! এলাকার উঠতি তরুণেরা আগ থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছে! ‘টমটমে’ চড়ে গেলাম রাজাগঞ্জে। আলী আবিদীন ভাইকে নিয়েও তালাশ করলাম মাইক্রো। কিন্তু পেলামনা! আখেরে ভরসা সি, এন,জি। লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে সি,এন,জিতে করে! আশরাফ আর হাসান আরীফ এক দিনেই বেশ ভালো খাতির জমিয়েছিল আলী আবিদীন ভাইয়ের সাথে। তিনিও তাঁদের নিরাশ করলেননা! স্বল্প সময়ে তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন! মাহরুম হলামনা আমরাও! ঘড়ির কাটা যখন এগারোটা ছুইছুই, আমাদের বহনকারী সি, এন, জির চাকা সচল হল! সাথে সচল হল আমাদের মুখও! বিজয় দিবসে এমনিতেই গর্বে বুকটা ফুলে থাকে, সেই সাথে এতগুলো প্রিয় মানুষের একসাথে হল্লা করে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বাড়তি পাওনা! বাইপাস রোড হয়ে আমরা প্রথমে থামলাম সিলেট শহরস্ত টুকের বাজারে। সাত রঙের চায়ের কাপে চুমুক দিতে! সিলেটি হওয়ার সুবাধে আমি আগে একবার সে চা খেয়েছিলাম! চা খাওয়ার বুঝতে পারিনি যে চা খেলাম নাকি পানি খেলাম? সাধের সাত রঙের চা খেয়ে আশরাফদের অনুভূতিও হল আমার মত! বেশ কিছু টাকা গচ্ছা দিয়ে ছুটলাম জাফলংয়ের পানে! শহরতলী পার হওয়ার পর থেকে শুরু হল নয়নাভিরাম দৃশ্য। একেকটি পাহাড় তাঁর বুকে পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে একেকটি চা বাগান। পাহাড়ের বুকে ঢেউ খেলানো চা বাগানের মনকাড়া রুপ দেখে বিমোহিত হবেনা এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা! আশরাফ আর হাসান আরীফের মুগ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মত! মুুগ্ধতার প্রকাশটাও ছিল বাধভাঙ্গা! শহীদ ভাই আর ইমদাদ ভাই উপভোগ করছিলেন খুঁটিয়ে খুুঁটিয়ে! হৃদয়ের চোখে! হরিপুর বাজার পার হয়ে যখন দিগন্ত বিস্তৃত হাওর এলাকা শুরু হল! আমি তখন ঘটিয়ে বসলাম এক এলাহী কান্ড! নিজের বেসুরা কন্ঠ দ্বারা শুরু করলাম দেশাত্ববোধক সংগীত গাওয়া! শিল্পী আপেল মাহমুদের “তীর হাওয়া এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবোরে’ যখন শুরু করলাম, আশরাফ আর হাসান আরীফতো খুশিতে রীতিমত লাফিয়ে উঠলো! অবশ্য তাঁদের কন্ঠ আমার চেয়ে আরো বেশি বেসুরা! তিন বেসুরা মিলে গান গাইলে কি অবস্থা হবে? পাঠকরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারেন! গাড়ির চালকও খিলখিলিয়ে গেসে উঠলো! আমি অবশ্য থেমে যাওয়ার পাত্র নই! এবার শুরু করলাম সিলেটি ভাষার আঞ্চলিক সংগীত। ‘আমরা হক্কল সিলেটি’ গেয়ে নিজে হাসলাম! বাকী সকলকে হাসালাম! এভাবে পথ পাড়ি দিচ্ছিলাম আর আকাশচুম্বি পাহাড়রাজি আমাদের নিকটবর্তী হচ্ছিলো! আমরাও দেখতে লাগলাম চোখ কপালে তোলে! দশ বছর আগে একবার যখন জাফলং গিয়েছিলাম, তখন সে পাহাড়ে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা দেখেছিলাম! শীতকাল হওয়ার কারণে হয়ত ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে গেছ! এক সময়ে পাহাড়গুলো আমার নিঃশ^াস পরিমাণ দুরত্বে চলে এল! কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ালো সীমান্তের কাঁটাতার। এতে কাছে এসেও ছুঁয়ে দেখতে পারলামনা পাহাড়কে! জুমার নামাযের সময় আমরা পৌঁছলাম জাফলংয়ের নিকটবর্তী ‘মামার বাজার’এ। গন্তব্য আমাদের জিরো পয়েন্ট। বল্লারঘাট গিয়ে ভাড়া করলাম হাত-নৌকা। জাফলংয়ের স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি প্রথমেই মুগ্ধ করবে আগত পর্যটককে! আমরাও আল্লাহর কুদরত দেখতে দেখতে পৌঁছলাম জিরো পয়েন্টে! একদিকে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশচুম্বী পাহাড়! পাহাড়ের বুক চিড়ে তীব্র বেগে আছড়ে পড়া ঝর্ণার রিমঝিম ধ্বণী! ঝর্ণার পানি থেকে সৃষ্ট একেবেঁকে বয়ে চলা পিয়াইন নদী, এমন চমৎকার দৃশ্য দেখে মুহুর্তেই উবে গলে দীর্ঘ সফরের ধকল! আশরাফ আর হাসান আরীফ ঝাপিয়ে পড়ল স্বচ্ছ পানিতে! পাতি এত পরিস্কার যে, নিচের পাথর পরিস্কার দেখা যায়! এতবেশি শীতল যে, মনে হয় বরফ জমে আছে! মাল সামানা অনেক ছিল!
আমার বাড়ী যেহেতু সিলেট, এজন্য আমি পানিতে নামার লেভ সংবরণ করলাম! দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাঁদের আনন্দ উপভোগ করলাম আর সামানা পাহারা দিলাম! অবশ্য ঠান্ডা পানিতে ওযু করেই বেশ মজা পেয়েছিলাম। ইমদাদ ভাই, শহীদ ভাই আর আশরাফকে বললাম সামানার কাছকাছি ঝাপাঝাপি করতে! আমি হাসান আরীফকে নিয়ে চলে গেলাম একেবারে সীমান্ত পিলারের কাছাকাছি! পিচ্ছিটা বায়না ধরল ইন্ডিয়ায় গিয়ে চা খাবে! অনেক বুঝিয়ে তাকে নিস্তার করলাম! চোখের পলকে চলে গেল অনেক সময়! হঠাৎ গড়িতে তাকিয়ে দেখি সময় সাড়ে তিনটা! অর্থাৎ আছরের আজানের আর পনের মিনিট বাকী! অথচ আমাদের দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল সিলেট শহরস্ত মেজরটিলা মাদ্রাসায়! আবার নৌকা করে আসলাম বল্লারঘাটে! নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জিরো পয়েন্টকে পিছনে ফেলে! আছরের নামায পড়লাম তৃপ্তি সহকারে! হাঁস, বাঁশ খাওয়ার বায়না ধরলো আশরাফ! তাকে থামিয়ে হালকা নাস্তা করে সি, এনজিতে চড়লাম! মধ্যখানে হাসান আরীফের সুইটার ফেলে আসা, আবার গিয়ে বল্লারঘাট মসজিদ থেকে নিয়ে আসার বিড়ম্বনার গল্প বাদ দিলাম! সেটা আমাদের একান্ত নিজস্ব! ফিরতি পথে ইলমী আলোচনাই হল বেশি! ইমাম আবু হানিফা রহ. সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বললাম। বাদ পড়লোনা মাযহাব এবং তাকলীদের কথাও! শহীদ ভাই যেহেতু বাংলাবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং প্রকাশক, এজন্য বাদ পড়লোনা বাংলাদেশের প্রকাশকদের হঠকারিতার গল্পও! অবশ্য শহীদ ভাই ভালো মানুষ! আশরাফতো একেবারে ধুলোধুনো করে দিল যারা শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. এর কিতাবগুলো নির্দয়ভাবে অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করে! মাগরিবের নামায পড়লাম হরিপুর পার হয়ে! এশার নামাযের আগে যখন গিয়ে মেজরটেলা মাদ্রাসায় পৌঁছলাম, আমাদের পেঠে তখন সাত নং সতর্কতা সংকেত চলছে! মেজরটিলা মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহমান কফিল সাহেব (উরফে আবীর সাবীল) দুপুর থেকেই আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে চলে এল ঝাল- মুড়ি! খেলাম বেশ মজা করে! আমি দস্তরখান থেকে উঠার পক্ষপাতি ছিলামনা! অগত্যা হুজুর খাবার আনার নির্দেশ দিলেন! একসাথে দুপুর এবং রাতের খাবার খেলাম! ক্লান্তিতে আমার শরীরটা তখন নুয়ে আসছে! আমি যেহেতু পরের দিন ঢাকা যাব এজন্য বিদায় নিয়ে বাড়ীতে আসতে চাইলাম! আশরাফের কাছ থেকে বুঝিয়ে- সুঝিয়ে বিদায় নিলাম! কিন্তু হাসান আরীফকে কোনভাবে বুঝানো গেলনা! আমার চলে আসার কথা শুনে তার কান্নার ভাব চলে আসল! সাফ জানিয়ে দিল উস্তাদজি আপনি চলে গেলে বড্ড কষ্ট পাবো! কথাটা যতটা সে মুখ দিয়ে বলেছে, তাঁর চেয়ে বেশি বলেছে হৃদয় দিয়ে! আমি বাধ্য হয়ে থেকে গেলাম! সবাই মিলে চা খেলাম! শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার গল্প শুনালাম! বর্তমানে রাত নয়টা মানে অনেক রাত! কুয়াশার চাদর আবৃত করে নিয়েছে পুরো সিলেট শহরকে। সাথে কনকনে শীত। আবার বাড়ী যাওয়ার কথা পাড়লাম! হাসান আরীফ আর আশরাফ আদ্র কন্ঠে রাজী হল! তবে শর্ত হল তারা আমাকে গাড়ীতে তুলে দিবে! মেজরটিলা মাদ্রাসা থেকে হেটে হেটে বাজারে আসলাম! কিছুক্ষণ বসে গল্প করলাম! তারপর গাড়ীতে উঠলাম! আশরাফ আর হাসান আরীফ হাত নেড়ে বিদায় জানালো! বিদায় মাত্র একদিনের! তারপরও তাঁদের মলিন চেহারা দেখে আমার কষ্ট লাগল! উস্তাদের প্রতি তাঁদের এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে আল্লাহ কবুল করুন। উভয়কে তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন এবং রুসূখ ফিল ইলম দান করুন। প্রিয় মানুষগুলোকে পিছনে ফেলে আমি চলে আসলাম বাড়ীতে। সাথে নিয়ে এলাম অনেক ভালো লাগা এবং ভালোবাসার টুকরো টুকরো স্মৃতি।