বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:১৫
Home / অনুসন্ধান / ৯০ শতাংশ সন্ত্রাস মুসলিমদের নয় : গ্লোবাল রিসার্চ

৯০ শতাংশ সন্ত্রাস মুসলিমদের নয় : গ্লোবাল রিসার্চ

jangiমুসলমানদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত এবং ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার জন্য তাদের দায়ী করা হলেও বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গ্লোবাল রিসার্চের এক রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকায় ৯০ শতাংশেরও বেশি সন্ত্রাসী হামলার জন্য অমুসলিমরা দায়ী। এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ একটি সত্যিকার হুমকি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মুসলিম সন্ত্রাসী হামলার হুমকিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে। এফবিআইয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে মুসলমানদের পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা অতি নগণ্য। এফবিআইয়ের একটি গ্রাফে দেখানো হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে কমিউনিস্টরা ৫ শতাংশ, মুসলিমরা ৬ শতাংশ, ইহুদি চরমপন্থীরা ৭ শতাংশ, চরম বামপন্থীরা ২৪ শতাংশ, ল্যাটিনোরা ৪২ শতাংশ এবং অন্যরা ১৬ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।

২০১৫ সালের ২৪ জুন আন্তর্জাতিক টাইম ম্যাগাজিনে জোয়ানা প্লুসিনসকা পরিবেশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, ‘Study says White extremists have killed more Americans in the US than Jihadists since 9/11.’ (গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ৯/১১-এর পর শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে ‘জিহাদি’দের চেয়ে বেশি আমেরিকানকে হত্যা করেছে।)
আলকায়েদা, তালেবান, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান মুসলমান অথবা ফিলিস্তিন, লেবানন কিংবা অন্য যেকোনো আরব দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হামলাকে সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একইভাবে কোনো গ্রুপের নামের সঙ্গে ‘আল’ কিংবা ‘জামায়াত’জাতীয় শব্দ যুক্ত থাকলে এবং নামটি বিশেষত আরবি ভাষার মতো শোনালে সেই গ্রুপকে সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। আলকায়েদা, আইএস, তালেবান, আল-শাবাব ও বোকো হারামের মতো মুসলিম পরিচয়ধারী গ্রুপগুলোর বাইরে বহু অমুসলিম গ্রুপ সন্ত্রাসী হিসেবে বিশ্ব¦ব্যাপী পরিচিত। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের লুন ওয়াচ এফবিআইয়ের উপাত্ত থেকে একটি চার্ট তৈরি করেছে। এ উপাত্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মুসলমানদের চেয়ে ইহুদিদের সন্ত্রাসী তৎপরতার হার বেশি। এসব কট্টরপন্থী ইহুদি আলকায়েদার মতো তাদের ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০৫ সাল পর্র্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িতদের ৭ শতাংশ ছিল ইহুদি এবং ৬ শতাংশ মুসলমান। লুন ওয়াচ আরো উল্লেখ করেছে, ইউরোপে মুসলমানদের পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার হার এক শতাংশেরও কম।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউএস নিউজ অ্যাড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে বলা হয়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গোলাগুলিতে তিন শ’র বেশি আমেরিকান নিহত হয়। সন্ত্রাসবাদবিষয়ক ট্রায়াঙ্গল সেন্টার এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতে, তাদের মধ্যে মাত্র ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মুসলমানদের হাতে। সন্দেহভাজন অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত মুসলিম-আমেরিকানদের সংখ্যা অনুল্লেখযোগ্য। ৯০০ আরব বংশোদ্ভূত ব্যক্তির মধ্যে ৫১ শতাংশ ছিল মুসলিম-আমেরিকান। ২০১২ সালে মুসলিম-আমেরিকানদের একটি ছাড়া, উদঘাটিত ৯টি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যর্থ করে দেয়া হয়। আরিজোয়ানায় সামাজিক নিরাপত্তা বাহিনীর অফিস উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক চার্লস কার্জম্যান ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রায়াঙ্গল সেন্টারে এক রিপোর্টে দেখিয়েছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মুসলিম প্রতিবেশীদের সন্ত্রাসী হামলায় ৩৩ জন আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সন্ত্রাসবাদ বহির্ভূত অন্যান্য কারণে নিহত হয় এক লাখ ৮০ হাজার আমেরিকান। তিনি আরো বলেছেন, এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত মুসলিম-আমেরিকানদের সংখ্যা এক শতাংশের বেশি নয়। বোস্টনে মর্মান্তিক বোমা হামলা ১১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার মতো নয়। এ হামলা ছিল ১৯৯৯ সালে কলম্বিয়ায় বোমাবর্ষণের মতো। ২০১২ সালে গুলিতে ৬৬ জন আমেরিকান নিহত হলে গোটা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিহতদের সংখ্যা ছিল বিগত ১১ বছরে মুসলিম-আমেরিকান সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১২ সালে মুসলিম-আমেরিকানদের সন্ত্রাসী হামলা চালানোর কোনো রেকর্ডই নেই। ট্রায়াঙ্গল টিম দেখতে পায় যে, ২০১২ সালে উদঘাটিত প্রায় সব মুসলিম-আমেরিকান সন্ত্রাসবাদী পরিকল্পনায় ‘চর ও গুপ্ত এজেন্টসহ’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ছিল। আমেরিকার ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের তাদের ইচ্ছেমতো সহিংসতা চালাতে উৎসাহ দানে ‘স্টিং অপারেশন’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে সংশ্লিষ্ট গুপ্তচররা বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় যাতায়াত করে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিম তরুণদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। গুপ্তচররা পরিকল্পিতভাবেই এসব তরুণকে আমেরিকাবিরোধী করে তোলে এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। সুইডেনসহ কয়েকটি ছাড়া পাশ্চাত্যের প্রায় প্রতিটি দেশ এ ঘৃণ্য অনুশীলনে জড়িত। ফাঁদ পেতে ধর্মপরায়ণ মুসলিম তরুণদের সন্ত্রাসী বানানো হয় এবং সময়মতো তাদের গ্রেফতার করে ঘোষণা করা হয় যে, আমেরিকায় মুসলিম সন্ত্রাসীদের হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। এ জন্য স্টিং অপারেশনের নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ইলিউশন অব জাস্টিস : হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজেস ইন ইউএস টেরোরিজম প্রসিকিউশন শিরোনামে ২১৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্টে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার দমনের প্রমাণ খুঁজে বের করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়াশিংটনের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং এ রিপোর্টের সহ-প্রণেতা অ্যান্ড্রি প্রাসো বলেছেন, ‘সূক্ষ্মভাবে তাকালে আপনারা দেখতে পাবেন, যেসব লোককে আটক করা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের উৎসাহ প্রদান, চাপ প্রয়োগ অথবা অর্থ সাহায্য না করলে তারা কখনো কোনো অপরাধ করত না।’ তিনি আরো বলেন, মুসলিম-আমেরিকানদের সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা বন্ধ করতে হবে। আমেরিকার আইন এত জটিল যে, ভুক্তভোগী কারো পক্ষে এটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে, তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সাধারণত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অথবা মনস্তাত্ত্বিক বিকারগ্রস্ত কিংবা দরিদ্রদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ রেজোয়ান ফেরদৌসের ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তাকে একটি কেন্দ্রীয় ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এফবিআই এজেন্টরা ফেরদৌসের বাবাকে জানিয়েছিল, তার ছেলে মানসিক বিকারগ্রস্ত। এ সংস্থা স্টিং অপারেশনের জন্য মাদরাসার ছাত্র রেজোয়ান ফেরদৌসকে টার্গেট করে। রেজোয়ান ও এফবিআই এজেন্ট সম্মিলিতভাবে পেন্টাগন ও ক্যাপিটল ভবনে বোমা হামলার একটি পরিকল্পনা উদ্ভাবন করে। ২০১১ সালে এফবিআই এজেন্টরা আলকায়েদার সদস্য সেজে অ্যাসল্যান্ডের বাসিন্দা ফেরদৌসের কাছে নকল গ্রেনেড, মেশিনগান ও প্লাস্টিকের বিস্ফোরক সরবরাহ করে। সাজানো অভিযোগ উদঘাটিত হলে ফেরদৌসের আরো শারীরিক অবনতি ঘটে। ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য তার বাবাকে চাকরি ছাড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে এমন কয়েকটি অভিযোগ ব্যবহার করে যেসব অভিযোগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনের আগ্রহ প্রমাণ করে না। দেশটির আদালত বিতর্কিত কয়েকটি কৌশল অনুমোদন করছে। আদালতের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হওয়ায় বিবাদির ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। নির্যাতন চালিয়ে বিবাদির কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। আদালতে পেশকৃত গোপন সাক্ষ্য প্রমাণগুলো চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকার এমন সব কথিত প্রমাণ পেশ করা হয় যেসব অভিযোগের সাথে বিবাদির কোনো সম্পর্ক নেই। আমেরিকার নাগরিক আহমদ ওমর আবু আলী অভিযোগ করেন যে, সৌদি আরবে বিনাবিচারে আটক রাখার সময় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং হাত কেটে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। ২০০৩ সালে সৌদি রাজধানী রিয়াদের একটি ভবনে বোমাবর্ষণের পর তল্লাশি অভিযানকালে তাকে আটক করা হয়েছিল।

সৌদি জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে তাকে স্বীকারোক্তি করতে হয়। তিনি তাদের কাছে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে ভার্জিনিয়ায় ওমর আবু আলীর বিচারে আদালত তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ খারিজ করে দেয় এবং তার ‘স্বীকারোক্তি’কে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে। তাকে ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসীদের বৈষয়িক সহায়তা এবং প্রেসিডেন্টকে হত্যার চক্রান্তে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আদমশুমারির উপাত্তে মুসলিম-আমেরিকানদের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করা হয় না। তবে তাদের পূর্বপুরুষের দেশের নাম উল্লেখ করা হয়। বেশির ভাগ পরিসংখ্যানে মুসলিম-আমেরিকানদের সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে ৭০ লাখ উল্লেখ করা হয়। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ২০১৩ সালে প্রতি ১০ লাখের মধ্যে সন্ত্রাসবাদে জড়িত মুসলিম-আমেরিকানদের সংখ্যা মাত্র ১০ জনের বেশি নয়। ২০০৩ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১০ লাখের মধ্যে ৪০ জন। উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক চার্লস কারজম্যান ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়াং টার্কদের এক সম্মেলনে বলেছেন যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত এক লাখ ৮০ হাজার হত্যাকাণ্ডের সাথে মুসলিম সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার হার মাত্র এক শতাংশ।

আমেরিকার স্কুল ও কলেজগুলোতে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলা হয়। এসব হামলাকারী কোনো পেশাদার খুনি অথবা সন্ত্রাসী নয়। তারা হলো স্কুলের সাধারণ ছাত্র। লাইসেন্স থাকায় এসব ছাত্র বেআইনিভাবে অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পায়। ২০১৫ সালের পয়লা অক্টোবর ওরিগন রাজ্যের ওমকুয়া কমিউনিটি কলেজে শ্বেতাঙ্গ ছাত্র ক্রিস্টোফার হারপার মারকাসের (২৬) গুলিতে ৯ জন ছাত্র নিহত এবং আরো ৯ জন আহত হয়। পুলিশের পাল্টা গুলিতে ক্রিস্টোফার নিজেও নিহত হয়েছে।

বোস্টনে ম্যারাথন চলাকালে বোমা হামলা ছিল মারাত্মক। সিআইএ ও এফবিআইয়ের সাবেক সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ ফিলিপ মুড বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল বোস্টন ম্যারাথনকালে বোমা হামলা তাকে কলম্বিয়ায় বোমা হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। চেচেন ভ্রাতৃদ¦য়, জোখার সারনায়েভ ও তামারলান বোস্টনে এ হামলা চালায়। ১৯ এপ্রিল পুলিশের সাথে গুলিবিনিময়ে তামারলান নিহত হয়। অন্য দিকে ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল কলোরাডো রাজ্যের কলম্বাইন হাইস্কুলে এরিক হ্যারিস ও ডায়লান ক্লেবোল্ড নামে দু’জন শ্বেতাঙ্গ ছাত্রের গুলিতে ১২ জন ছাত্র ও এক শিক্ষক নিহত এবং আরো ২১ জন আহত হয়েছিল। পরে এরিক ও ক্লেবোল্ড আত্মহত্যা করে। ফিলিপ মুড বলেন, সারনায়েভ ও তামারলান ছিল খুনি, সন্ত্রাসী নয়। ব্যাপক গোলাগুলির জন্য অমুসলিমরা দায়ী। ইউরোপের মতো আমেরিকায়ও এ কথা সত্য। অধ্যাপক চার্লস কার্জম্যান বলেছেন, সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের হার প্রতি লাখে ১০ জনের চেয়ে কম। সন্ত্রাসে মদদ জোগানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার ৯ মাস পর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওজায়ের পারাসাকে নিঃসঙ্গ কারাপ্রকোষ্ঠে ঠেলে দেয়া হয়। পারাসা শুধু কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতে পারত। এফবিআই আমেরিকান মুসলমানদের বাসস্থান ও কর্মস্থানগুলো শনাক্ত করে।

১৯৭০ থেকে ২০১২ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত ২ হাজার ৪০০ সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে মুসলমানরা জড়িত ছিল ৬০টিতে। অর্থাৎ মুসলমানদের জড়িত থাকার হার মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। পক্ষান্তরে ইহুদিরা জড়িত ছিল ১১৮টি সন্ত্রাসী হামলায়। এ হার হলো ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম পরিচালিত অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, ১৯৭০ থেকে ২০১১ সাল নাগাদ জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী উদ্দেশ্যে ৩২ শতাংশ, প্রাণী অধিকারের দাবিতে অথবা যুদ্ধের প্রতিবাদে ২৮ শতাংশ এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ৭ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। ১১ শতাংশ হামলাকারীকে চরম দক্ষিণপন্থী এবং ২২ শতাংশকে চরম বামপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ হচ্ছে ধর্মীয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোয়ান কোল যুক্তি দিয়েছেন যে, বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে ‘খ্রিষ্টান সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। একই যুক্তিতে বন্দীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং চালকবিহীন গোয়েন্দা বিমান হামলাও সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার দিকে তাকালে দেখা যাবে, সুন্নি মুসলমানরা হলো মূল অভিযুক্ত। অথচ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলায় সুন্নিরাই মূল ভুক্তভোগী। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র অধিকতর উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ আরবদের তুলনায় অতিমাত্রায় কট্টর সুন্নিদের সমর্থন দেয়।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৩৫৫টি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। এসব সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে মাত্র তিনটির সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের (কেয়ার) হিসেবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সন্ত্রাসী হামলার হার দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি দুই কোটি লোকের মধ্যে একজন আমেরিকান মুসলিম সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হতে পারে। অথচ সে দেশে কুকুরের কামড়ে মারা যায় প্রতি ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৮ জনের মধ্যে একজন। এসব পরিসংখ্যান থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হলেও মুসলমানরা মূলত জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী নয়।

সূত্র : নয়াদিগন্ত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে ওনার খাদেম  শফীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ...