রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৪৭
Home / অনুসন্ধান / সংস্কার স্বীকৃতি – কার লাভ করা ক্ষতি? সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হউক : তরুণ প্রজন্মের ভাবনা

সংস্কার স্বীকৃতি – কার লাভ করা ক্ষতি? সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হউক : তরুণ প্রজন্মের ভাবনা

madrasa-student-dhaka-uni
বৈসম্যের দেয়াল বহাল রেখে বৈসম্য দূর করা হাস্যকর -ফাইল ফটো

কমাশিসা বিশেষ ডেস্ক: সংস্কার স্বীকৃতির আলোচানা এখন তুংগে বলা যায়। সর্বশেষ হিসাব নিকাশ চলছে। লাভ ক্ষতির খতিয়ানও সামনে আসতেছে। স্বীকৃতি কে কিভাবে চান কার কী সুবিধা অসুবিধা  আছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মোটিমুটি মূল আলোচনায় বেফাক ও মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব।

বেফাকের আপত্তি কোথায় তার একটা ধারনা আমরা নিম্ন বক্তব্য থেকে পেয়েগেছি-

‘এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আপত্তি যে বিষয়ে, সেটি হচ্ছে, ‘কর্তৃপক্ষ গঠন’ ধারার ২ উপধারার ‘সরকার কর্তৃক নিয়োগ্যকৃত সদস্য একজন যুগ্ম-সচিব ও তদূর্ধ পদমর্যাদার’। চেয়ারম্যান নিয়োগ  ও সদস্যদের নিয়োগ, পদত্যাগ, অব্যাহতি ইত্যাদি: প্যারার ধারা ১-এর ‘কওমি ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ শীর্ষ পর্যায়ের আলেম চেয়ারম্যান এবং ধারা ৫-এর-খ- এ উল্লিখিত সদস্য সরকার কর্তৃক নিয়োগ হইবেন।’

‘মাওলানা মাহফুযূল হক মনে করেন, ‘সরকার কাউকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া এবং সরকারের প্রতিনিধি থাকা মানেই হচ্ছে প্রতিষ্ঠান সরকারের চাহিদা মোতাবেক চলবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। সরকারের পছন্দমতো চেয়ারম্যান নিয়োগ মানেই, তিনি যা চাইবেন; তা। ফলে, এতে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা বিনষ্ট হবে। এছাড়া যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার যিনি থাকবেন, তিনিও তো সরকারের।’

বেফাকের আপত্তির আরো কিছু ব্যাখ্যা-

বেফাকের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, স্বীকৃতির জন্য ভিন্ন কমিশন, ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনও কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন মনে করা হচ্ছে না। এমনকি সিলেবাস প্রণয়নের প্রয়োজন নেই বলেও মনে করে বেফাক। এক্ষেত্রে সূত্রের যুক্তি, মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে দারুল উলুম দেওবন্দসহ লালবাগ মাদ্রাসা, কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়া ও হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস পাস করে আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করার সুযোগ ছিল। বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব উবায়দুল হকও দারুল উলুম দেওবন্দের সনদ দিয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন। যদিও ১৯৭৬ সালের জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে মাওলানা আবদুল মান্নান মন্ত্রী হওয়ার পর এই সুযোগটি নষ্ট হয়। এজন্য আলেমদের অনেকে তাকে দায়ী করেন।

মাওলানা মাহফুযূল হক জানান, ‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই। সবগুলো বোর্ড মিলে একটি কমিটি করবে। এই কমিটির উদ্যোগ সনদ দেওয়া হবে। সরকার শুধু এই সনদকে স্বীকৃতি দেবে। সনদকে কেন্দ্র করে তো কওমি মাদ্রাসার ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হতে পারে না।’

উপরোক্ত বক্তব্য থেকে আমরা স্বকীয়তা নিয়ে একটা দিক নির্দেশনা পেলাম।

সকল আলোচনার সারবত্তা হলো যেমন আছে তেমন থাকবে। সিলেবাসে কোনপ্রকার ঘষামাজা নয়। ইমাম মুয়াজ্জিন ও ধর্মীয় বিষয়ের খেদমতের সুযোগ প্রসারিত করা। পরি্স্থিতি যদি তাই থাকে তাহলে এই স্বীকৃতি আর কমিশনের দরকারটা কি?  বর্তমান অবস্থায় কওমি প্রজন্মরা নিজেদের মত করে ইমাম মুয়াজ্জিন ও ধর্মীয় ময়দানে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছে। যে লাউ সেই কদু দিয়ে স্বীকৃতির হাংগামা বাজিয়ে কী ফায়দা বয়ে নিয়ে আসছে তাহলে? ঘোড়ার ডিম ছাড়া  আর কিছুই না। এতে বুঝা যায় উনাদের স্বীকৃতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো গদি পদ কুরশি। বর্তমানে যেভাবে ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ ও বাতিল করছেন, ইচ্ছামতো সিলেবাস চালাচ্ছেন, পেনশন স্কীমহীন স্কেলহীন বেতন ভাতা।

ছাত্রদের উজ্জল ভবিষ্যৎ বলতে কোন কথা অনুপস্থিত। কারিগরি বকেশনাল আত্মনির্ভশীলতার কোন কথা নেই। ৯৫% স্কুল কলেজ পড়ুয়া প্রজন্মদের কাছে দ্বীনের শিক্ষা পৌছানোর কোন কথা নেই। উল্টো যারা মুহতামিম পরিচালক তাদের একক আধিপত্য রক্ষার বক্তব্য সুস্পষ্ট। যারা বর্তমানে শিক্ষক ও মেনেজমেন্টে আছেন তাদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কওমি জগতে চলমান নৈরাজ্যবাদীতা নিরশনের কোন কথা নাই। গলিতে গলিতে টাইটেল মাদরাসা বন্ধের কোন কথা নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন কথা নেই। টিসি প্রচলন বলবত হবে কি না কথা নাই। শিক্ষক ট্রেনিং যোগ্যতা নিয়োগ ছাত্রদের বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কোন কথা নাই। তারা বলছেন স্বকীয়তা রক্ষার কথা। আর তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে যেখানে আছেন সেভাবে সেখানে থাকার অধিকার সংরক্ষণ! যেভাবে রাজনৈতিক নোংরামী আছে সেভাবে মাদ্রাসা অভ্যন্তরে ঠেলাঠেলির পরিবেশ বহাল রাখা। মোটকথা মেধার মান উন্নত করণের বাস্তব কোন কথা নাই। শিক্ষাবোর্ডকে রাজনীতির বাহিরে রাখার কোন অংগীকার নাই। ছাত্রদের উজ্জল ভবিষ্যৎ হওয়ার মতো কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য না আসাতে গোটা কওমি অংগন হতবাক।

অনেকের বক্তব্যে উঠে এসেছে যে সরকার তাড়িঘড়ি করে স্বীকৃতি দিয়ে কওমি মাদরাসাগুলোকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে যেতে চাইছে। হ্যাঁ কথা যদি তাই হয় তাহলে একটি দেশের যে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরাকারের একটা প্রভাব অবশ্যই থাকে। সরকারের অশুভ হস্তক্ষেপ থেকে কওমি অংগনকে রক্ষা করতে হলে সেভাবে প্লান তৈরি করে সামনে পেশ করুন। একদিকে হস্তক্ষেপের ও শেঁকল পরার ভয়। এই দুই ভয় থেকে বাঁচার জন্য সমাধান কি তাই যে নিজেরা নিজেদের পায়ে শেঁকল পরে নেয়া? নিজেরা নিজেদের মতো করে গদি কুরশির হেফাজত? অবশ্যই ইহা হবে কায়েমী স্বার্থবাদীতা। নিছক মুল্লা মুনশী ইমাম মুয়াজ্জিনের অধিকারের জন্য আমাদের এই সংগ্রাম নয়। আমাদের সংগ্রাম এমন এক প্রজন্ম তৈরির পদক্ষেপ গ্রহন, যাতে করে একটি শিক্ষীত গোষ্ঠী গোটা জাতিকে পথ প্রদর্শন করার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। ভয়কে জয় করে শংকাকে সম্ভাবনায় পরিণত করে সামনের দিকে আগাইয়া যাবার বিকল্প নাই।

 

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...