শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৫৮
Home / প্রতিদিন / পোশাক শালীন হলে হিজাবের প্রয়োজন নেই : ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

পোশাক শালীন হলে হিজাবের প্রয়োজন নেই : ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

masudশোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের কথায়, ‘‘নারী নিজেকে শালীনতার সঙ্গে আচ্ছাদিত না করলে ইসলামের হুকুম লঙ্ঘন করা হয়৷ তবে শাড়ি পরেও কেউ যদি নিজেকে ঢেকে চলেন, তাহলে আলাদা বোরকা বা হিজাবের প্রয়োজন হয় না৷’’

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘‘যতটুকু দিয়ে তার শালীনতা বজায় থাকে এবং শরীয়তে যতটুকু বলেছে, সেটা করে বের হলে নারীর দুনিয়ার কোথাও বিচরণ করতে কোনোরূপ সমস্যা হবে বলে মনে হয় না৷”

ডয়চে ভেলে: ইসলামের দৃষ্টিতে হিজাব কি নারীর পর্দানশিনতার অপরিহার্য অংশ, আপনি কী মনে করেন?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: মৌলিকভাবে কোরআনুল করিমে যেটা নাজিল হয়েছে, আয়াত সেটা বলছে, তোমরা যখন বের হও, তোমাদের চাদরটা মুখের উপর টেনে দিও৷ এটা হচ্ছে, মূল বিষয়টা৷ এখন প্রত্যেক দেশেই তার নিজস্ব সংস্কৃতি অনুসারে পর্দার রূপ বানিয়ে নিয়েছে৷ কেউ মনে করছেন, বোরকা পরলেই শরীর ঢাকা হয়৷ তাই তাদের সংস্কৃতিতে বোরকা এসেছে৷ কোনো জায়গায় মনে করছে, চাদরটা টেনে দেয়ার প্রশ্ন – তাহলে আমরা একটা হিজাব পরে নেই, এটা আদায় হয়ে যাবে৷ তাই ওনারা এটা পরছেন৷ কাপড়টাকে হিজাব বলা হয়নি৷ হিজাব হলো পর্দা, যেটা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখা হয়৷

ডয়চে ভেলে: ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো নারী হিজাব না পরলে তাঁকে পরকালে কি শাস্তি পেতে হবে?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: হিজাব না পরার প্রশ্ন না, প্রশ্নটা হলো, যেটা আমরা সাধারণভাবে বলি,শালীনতার সঙ্গে নিজেকে আচ্ছাদিত করা৷ সে যদি নিজেকে আচ্ছাদিত না করে, তাহলে সে ইসলামের হুকুমকে লঙ্ঘন করল এবং সেটার জন্য আল্লাহ যদি মাফ না করেন, তাহলে আল্লাহ কী শাস্তি দেবেন, তা আল্লাহই জানেন৷

বাংলাদেশে কি একজন মুসলিম নারীর হিজাব পরা বাধ্যতামূলক?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: তিনি যে শাড়ি পরেন, সেটা দিয়েই যদি নিজেকে আচ্ছাদিত করে চলেন, তাহলে হয়ে যাবে৷ এর জন্য আলাদা কোনো বোরকা লাগানো, হিজাব লাগানোর প্রয়োজন হয় না৷

ডয়চে ভেলে: কেউ যদি স্বাভাবিক পোশাকের সঙ্গে হিজাব পরেন, তাহলে সেটা কি ‘পর্দা’ হবে?

এখন দেখা যায়, কেউ একজন সাঁতারের পোশাক পরে মুখে একটা হিজাব টেনে দিলো, এর মানেই পর্দা হয়ে যাবে না৷ পর্দাটার ব্যাপারে যেটা বলা হয়েছে, সেটা হলো, তার অঙ্গগুলি যেন উৎকটভাবে প্রদর্শিত না হয়৷ সে একটা আঁটসাঁট পোশাক পরল আর মাথার মধ্যে একটা রুমাল গুজে দিল, এটা যে হিজাব হয়ে গেল সেটা তো নয়৷

ডয়চে ভেলে: তাহলে হিজাবটা কী?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: এটা হলো, শালীনতার সঙ্গে নিজেকে আচ্ছাদিত করে চলা এবং সেটা হলো পর্দার হুকুম৷ এটা কিন্তু নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই আছে৷

ডয়চে ভেলে: সেটা কেমন একটু ব্যাখ্যা করবেন?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: যেমন ধরুন – নারীকে বলা হয়েছে, ‘‘তোমার চলাফেরার সময় তোমার দৃষ্টিকে আনত রাখবে৷” আর পুরুষকেও বলা হয়েছে, ‘‘তুমি তোমার চলাফেরার সময় দৃষ্টিকে আনত রাখবে৷” নারীকে আরো বলা হয়েছে, ‘‘তুমি তোমার শরীরকে আচ্ছাদিত করবে৷” পুরুষকেও বলা হয়েছে, ‘‘তুমি তোমার শরীর আচ্ছাদিত করবে৷” আবশ্যকীয় মাত্রা কতটুকু? এর মধ্যে কিছুটা বেশ-কম করা হয়েছে৷ পুরুষের জন্য বলা হয়েছে – নাভির নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত অবশ্যই তার আচ্ছাদিত থাকতে হবে, না হলে সে ফরজ লঙ্ঘন করল৷ মেয়েদের জন্য কেউ কেউ বলছেন, তার হাত-পা মুখ ছাড়া বাকিটা ঢাকতে হবে৷ কেউ কেউ আবার বলছেন, তার চেহারাও ঢাকতে হবে৷

ডয়চে ভেলে: এই হিজাব নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোনো ব্যাখ্যা আছে?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: এটা ঠিক মনে পড়ছে না তারা কী ব্যাখা দিয়েছেন৷

ডয়চে ভেলে: আমাদের কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এ ব্যাপারে কি কোনো ব্যাখ্যা আছে?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: কোরআন শরীফের একটি আয়াতে এ নিয়ে তফসিরে ব্যাখা দেয়া আছে৷ ব্যাখা হলো – সুরা আল আহজাব-এর ৫৯ নম্বর আয়াত৷

ডয়চে ভেলে: সেখানে কী বলা আছে?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: সেখানে বলা আছে, হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীগণকে বলুন, কন্যাদেরকে বলুন এবং মোমিন নারীগণকে বলুন তারা যেন তাদের চাদরটা ঢেকে দেয়৷ চাদরটা টেনে দেয় তাদের চেহারার উপরে৷ এতে তাদের শালীনতার পরিচয় হবে৷ তাই তাদের বখাটেরা কষ্ট দেবে না৷ আল্লাহ অত্যন্ত মাশীল, দয়ালু৷

ডয়চে ভেলে: কিছু দেশে হিজাব বাধ্যতামূলক করেছে, কিছু দেশে এটা নিষিদ্ধ করেছে৷ আপনি বিষয়টা কীভাবে দেখেন?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: আয়াতে যেটা বলা আছে, যতটুকু হুকুম আছে, ততটুকু করবে৷ এটার জন্য নিষিদ্ধ করা বা বাধ্যতামূলক করার কিছু নেই৷ এটা একজন নারীর ধর্মীয় স্বাধীনতা৷ তার স্বাধীনতা কেউ হরণ করতে পারবে না৷

ডয়চে ভেলে: কেউ যদি হিজাব না পরে বের হন, সেই ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাখ্যা কী আছে?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: এক্ষেত্রে দেখতে হবে, কতটুকু তিনি লঙ্ঘন করেছেন৷ লঙ্ঘনের মাত্রা অনুসারে শরীয়া আইন অনুযায়ী কাজি সেই ব্যাপারে তাকে সতর্ক করবে৷ এবং তাকে বিবেচনা মতো যে বিচার করার সেটা করবে৷

ডয়চে ভেলে: হিজাব পরার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: এটা তো আমার পরামর্শের প্রশ্ন না৷ যতটুকু দিয়ে তার শালীনতা বজায় থাকে এবং শরীয়তে যতটুকু বলেছে, সেটা করে বের হলে দুনিয়ার কোথাও বিচরণ করতে কোনোরূপ সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না৷

credit : dw

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি কল্যাণ ট্রাস্ট- বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

খতিব তাজুল ইসলাম: ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...