আবুল কালাম আজাদ:
যুক্তি-দলিল দিয়ে বিতর্ক হলে ভালো লাগে। ব্যক্তি আক্রমণ, অবান্তর-অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক হয় না। গালাগালির কথা নাই বললাম।
মুহিব খান’র ‘নতুন ইশতেহার’ এ্যালবামের গানের কয়েকটি বাক্য নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক চলছে। চাইলেও আমি সেই বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারছি না। তাই জড়িয়ে গেলাম সেই বিতর্কে।
১. মুহিব খান’র সংগীতে যে বাজনা আছে, সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয না না জায়েয? আমরা জানি, দফ বাজানোর ব্যাপারে শরীয়তে ছাড় আছে। এটা দফের সীমা অতিক্রম করেছে কি না? যদি করে থাকে সেটা কতটুকু? বিজ্ঞ আলিমরাই এ ব্যাপারে সমাধান দিবেন।
২. মুহিব খান তাঁর সংগীতে কিছু আলেমের সমালোচনা তীব্র ভাষায় করেছেন। এখানে বিবেচ্য যে, সব আলেমের সমালোচনা করেন নি। আর যাদের সমালোচনা করেছেন, তাদেরকে বা তাদের সমালোচনার কাজগুলো বর্ণনা করেই করেছেন। হয়তো ভাষাগুলো একটু কঠিন হয়ে গেছে।
৩. দাওয়াত খেয়ে হাদিয়া নেয়ার কথা বলেছেন, সেটাও অস্পষ্ট নয়। তবে মনে হয় অভিযোগটা একটু ঢালাওভাবে হয়ে গেছে। এ কারণে উনার নিজের হাদিয়ার ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন উঠালে সেটাও বিবেচ্য। যদিও আমরা অনেকে জানি, তাঁর পেশাই সংগীত। অন্য কোনো পেশায় তিনি জড়িত নয়। এখন প্রশ্ন হল, তিনি যদি হাদিয়া না নেন, তাহলে কি বউ-বাচ্চা নিয়ে উপোষ মরবেন?
৪. মুহিব খানের পাঞ্জাবি, দাড়ি, টুপি নিয়ে শ্রদ্ধেয় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই। আমি যা দেখেছি মুহিব খানের দাড়ি এক মুষ্টিই আছে। তিনি পাঞ্জাবিও পরেন সুন্নাত তরিকায় বা আমাদের উলামায়ে কেরাম যেভাবে পরে থাকেন। টুপি তো তার মাথায় সর্বদাই থাকে। কোনো কারেণে কোনো এক জায়গায় যদি মাথায় টুপি না থাকে, সেটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করাও উচিত নয়। টুপি তো আর ফরজ বিধান না যে সবসময় মাথায় থাকতে হবে।
৫. আমরা যা করবো আল্লাহর জন্য করবো। কারো সাথে দুশমনী করলে সেটাও আল্লাহর জন্য, ভালোবাসা হলে সেটাও আল্লাহর জন্য। আর এটা জেনে এবং মুহিব খান বা তাঁর পরিবারের বন্ধু-শুভাকাঙ্খী হিসেবে হয়তো কেউ কেউ কিছু গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন বা করছেন। আর মুহিব খান তো কোনো ফেরেশতা নন যে, উনার কোনো ধরনের সমালোচনা করা যাবে না। এখানে মুহিব খানের অতি ভক্ত সেজে অযথা কুতর্ক করার কোনো মানে নেই। যদি কিছু বলার থাকে, সেটা অবশ্যই গঠনমূলকভাবে বলা উচিত। মুরিদ যদি পীরের চেয়ে বড় হয়ে যান, সেটা অবশ্যই ভয়ঙ্কর।
৬. মুহিব খানকে আমরা কেউ কেউ শুধু কওমির আলিম মনে করে তাঁকে আমাদের গণ্ডির মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। যদিও তিনি সেই গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। আর চাইবেনই বা কেনো? আমাদের ভাবতে হবে, এ দেশের কত পার্সেন্ট লোক কওমি মাদরাসায় পড়ে। দেশে আলিম উলামা কত পার্সেন্ট। হয়তো ১০-১২ পার্সেন্ট ছাত্র কওমি মাদরাসায় পড়ে। এখন মুহিব খান কি শুধু এই দশ থেকে বারো পার্সেন্টের জন্যই তার জীবন দিয়ে দিবেন? বাকি ৮৮ থেকে ৯০ পার্সেন্টের কোনো চিন্তা করার কী প্রয়োজন নেই? আমি যতদূর জানি, তিনি দেশের আপামর জনসাধারণের জন্যই গান করেন, চিন্তা করেন। কিছু করারও চেষ্টা করেন। তাই আমরা যারা মানে এই ১০ থেকে ১২ পার্সেন্ট তার ভক্ত বা বিরোধী তাদের আরেকটু সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।