যৌবন এবং যৌনতা সমার্থক। কারণ যৌবনের শুরুই হলো যৌনতায় পারঙ্গমতা। মানুষ ছাড়াও সকল প্রাণীর মাঝে যৌন আকাংখা বা ক্ষুধা আছে। প্রাণী জীবনে প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে যৌনতা সম্পৃক্ত। একমাত্র মানবজাতিই কেবল ভিন্ন যে, তারা যৌবন এবং যৌনতাকে প্রজননের বাইরে নিয়ে এসেছে। সেক্স বা যৌন একটি অসাধারণ শিল্প হয়ে গড়ে ওঠেছে উন্নত দেশে। সিনেমা-নাটক, প্রেমকাহিনী, উপন্যাস সবখানে আছে যৌনতার ছাড়াছড়ি। মুসলিম বিশ্ব এবং আমুসলিম বিশ্বের মাঝে যৌনতা নিয়ে আছে বিস্তর ফারাক। ইসলাম যৌনতাকে ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাধ্যমেই কেবল বৈধ যৌনতায় পূর্ণতা লাভ করে।
ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতি, নারী এবং পুরুষের মাঝে একমাত্র হালাল ও বৈধ পথ হলো বিবাহের মাধ্যমে যৌনচর্চা। প্রজনন কিংবা যৌনসুখ উভয়টিই বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে হতে হবে। কিন্তু পাশ্চাত্য ও অমুসলিম সমাজব্যবস্থায় যৌন বিষয়টি টোটালি ভিন্ন। আমার পাশের ঘরের এক ছেলের উদাহরণ দিলেই আশা করি বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে।
১০/১২ বছরের কিশোর ব্রায়ান আমাদের চোখের সামনেই বড় হতে লাগলো। হঠাৎ একদিন দেখলাম, হাতে হাত ধরে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে সমবয়সী এক বালিকার সাথে ঘর থেকে বের হচ্ছে। পাশে মা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিচ্ছেন। আমরা জানি তাদের একমাত্র ছেলে ব্রায়ান। নতুন এই বালিকার আগমন আমার কাছে কেমন যেন মনে হলো। না, ভুল দেখি নি। আসলে; ব্রায়ান তার বান্ধবী খুঁজে পেয়েছে; তাই দু’জন দু’জনায় মজেছে আপন ভূবনে।
প্রতিদিন বিকালে তাদের ডেটিং-ব্যাটিং দেখতে দেখতে আমরা বিরক্ত। দেখলাম, মা-বাবা খুব যত্ন করে তাদের সায় দিচ্ছেন। কৌতুহলবশত একদিন তাদের এক অভিভাবকের কাছে এভাবে কম বয়সে খোলামেলা চলাফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যা বললেন, তার সারসংক্ষেপ হলো-
‘আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোট বয়স থেকে বয়ফ্রেন্ড এবং গার্লফ্রেন্ড বেছে নেয়ার সুযোগ আছে। আমরা তাতে সহযোগিতা দেই। সাধারণত ক্লাসমেইটকেই তারা ছেলে অথবা মেয়ে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। এভাবে তারা ঘনিষ্ট চলাফেরার মাধ্যমে একে অপরকে জানার সুযোগ পায়। দৈহিক সম্পর্ক তাদের অধিকার। লেখাপড়া এবং কর্মসংস্থানের আগে প্রেগ্নেট যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করে দেই। চাইলে সারা জীবন এভাবে কাটিয়ে দিতে পারে। বিবাহ একটা সামাজিক ঐচ্ছিক বিষয়। কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা স্কুল এবং স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ফ্রী কনডম পায়। আমরাও আমাদের উঠতি বয়সী সন্তানদের এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করে জানিয়ে দেই, সাপোর্ট করি।’
ব্রায়ানের বয়স এখন ১৫ বা ১৬ হবে; কিন্তু সেই মেয়টাকে এখন আর তার সাথে দেখি না। নিশ্চয় ব্রেকআপ হয়েছে। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। তো মেয়েটা আরেক ছেলেবন্ধু খুঁজবে ছেলেটা আরেক মেয়েবন্ধু খুঁজে নিবে। মোটামুটি এই হচ্ছে পাশ্চাত্যের সেক্সলাইফ।
বিলেতে হাসপাতালগুলোর সবচেয়ে ব্যস্ত ব্যবসা হলো গর্ভ অপসারণ। আর সবচেয়ে কমবয়সী ৭-৯ বছরের মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার রেকর্ডও এখন তাদের কাছে। অবাধ যৌনাচারের কুফল তারা এখন ভোগ করতে শুরু করেছে। ছোট বয়স থেকে যৌনচর্চা ও বহুগামিতায় ঘটছে মেধার অবনতি। অবিশ্বাস এবং অনিশ্চয়তার জীবনে বাচ্চা নেয়াকে বোঝা মনে করা হয়। আর যখন নিতে চায় তখন হয়ে পড়ে শারীরিকভাবে অক্ষম। যে কারণে উন্নত বিশ্বের সমাজ এখন ভারসাম্যহীনতায় কাঁপছে। ইমিগ্রান্ট দিয়ে চাইছে এই শূন্যতা পুরণ করতে।
এইডস, সিফিলিস, ঘনরিয়াসহ নানা জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব। সবমিলিয়ে যৌনতার জন্যই জীবন। তাই দেখা যায় তাদের সমাজে যৌবন শেষ; জীবনের আকর্ষণ বিদায়। পুরুষরা যায় পরনারীতে আর নারীরা থাকে পর্নোগ্রফি নিয়ে ব্যস্ত। অযত্নে-অবহেলায় ওল্ডহোমই শেষ ঠিকানা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইউরোপের একজন পুরুষ অথবা নারী কম হলেও সর্বনিম্ন ১৫-২০ জন করে নারী অথবা পুরুষ অবৈধভাবে একে অন্যের সাথে মিলিত হয়। দেখা গেছে ৩৫ বছর বয়সে ইংরেজ নারীরা শরীরের লাভন্যতা হারায় আর পুরুষরা হারায় ৪০ এর আগেই। যৌনতায় অক্ষম সমান বয়সী পুরুষ এবং নারী। এজন্য বাধ্য হয়ে তারা বিকল্প পথ খুঁজে। পাশ্চাত্য ভোগাবাদী গোষ্ঠী নিজেদের ভোগান্তিকে মুসলিম সমাজে চাপিয়ে দিতে, মুসলিম সমাজকে কলুষিত করতে একের পর এক ছক আঁকছে। আইএমএফ বিশ্বব্যাংকসহ বিদেশি মিশনারিগুলো এ কাজে খুবই ব্যস্ত।
প্রতি শুক্রবার আসে মুসলমানদের জন্য রহমত বরকত ও নাযাতের আশির্বাদ নিয়ে। আর ইউরোপ-আমেরিকায় আসে কালো মেঘ হয়ে। মদ আর মাদক দিবস হলো শুক্র ও শনিবার। রবিবার হলো মাতাল ও বুদ হয়ে পড়ে থাকা থেকে আস্তে আস্তে ওঠে দাঁড়ানো। কারণ সোমবার তাকে যে কোনো মূল্যে অফিসে উপস্থিত থাকতেই হবে। এই ভোগবাদীরা শুধু যৌবন দেখে; যৌবনের যবনিকা দেখে না। মদ ও মাদক দেখে ও চাকে; কিন্তু তার পরিণতি ভাবে না। ইউ.কের ন্যাশনাল হ্যাল্থ সার্ভিসের প্রধান ডাক্তার এক বিবৃতিতে জানান যে, শুধু শুক্র ও শনিবার যে পরিমাণ ইমার্জেন্সি সার্ভিস দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে, তা যদি সেইভ করা যেত তাহলে গোটা বছর সাধারণ মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হতো না।
তারা মানুষকে সকল ধর্মীয় বিধিনিষেধ থেকে বের করে এনে স্রেফ প্রাণী হিসেবে দেখে। তাদের কথা হলো, যৌনতা একটা প্রাকৃতিক বিধান; মানুষ কেন তাতে পাবন্দী লাগাবে। এজন্য স্বামী-স্ত্রীর উপর বল প্রয়োগ করলে ধর্ষণের মামলা হয়। আর স্বামীর সামনে স্ত্রীকে আর স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নিয়ে অন্য কেউ মাখামাখি-জাড়াজড়ি করলে বলা হয় “তার অধিকার বটে”। মানে যৌনতা হলো সম্পূর্ণ ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব বিষয়। আওজুবিল্লাহ!
এই ভয়াল থাবা আজ বাংলাদেশের আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতি, সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা, সহশিক্ষা, যৌনতার ছাড়ছড়ি, দেহ ব্যবসার বিস্তার, রাষ্ট্রীয় বেহায়াপনা সবকিছুই একসুতোয় গাঁথা। তাই যৌনতার বিষয়ে যেমন আমাদের মুখ বুজে বসে থাকলে হবে না; তেমনি সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের জন্য চাই প্রাণবন্ত উদ্যোগ, কার্যকরি পদক্ষেপ। শুধু পর্দার ভিতরে রাখলাম আমি ও আপনার মেয়েদের আর মাদরাসা ও খানকার ভিতরে পর্দা টাংগিয়ে আমরা আমাদের চোখের হেফাজত করলাম ঠিকই; কিন্তু ক্যান্সারের বিস্তার যখন ব্লাডে চলে আসবে, তখন আর কাউকে তারা পর্দায় থাকতে দিবে না। খানকাসহ চুরমার করে দিবে। আর আজ যেন তার আবাস পাচ্ছি বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটি খেকে। (চলবে…)
আরও পড়ুন
যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (১ম পর্ব)