বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা হলেই নানা ধরনের তত্ত্ব চাউর হয়। মিসরের সিনাই উপত্যকায় যাত্রীবাহী রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিভিন্ন তত্ত্ব আলোচিত হচ্ছে। এমনই চারটি তত্ত্বের তথ্য বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত সপ্তাহে সিনাইয়ে রাশিয়ার কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইনসের এয়ারবাস এ-৩২১ বিধ্বস্ত হয়। এতে ২২৪ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। বিমানটি মিসরের অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল-শেখ থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে যাচ্ছিল।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান চলছে। তদন্তে অন্তত চারটি বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে।
যান্ত্রিক ত্রুটি
দুর্ঘটনার সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যান্ত্রিক ত্রুটি—মিসরের প্রধানমন্ত্রী শরিফ ইসমাইল তাই মনে করছেন।
মিসরের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হোসাম কামাল বলেছেন, বিমানে কোনো সমস্যার লক্ষণ ছিল না।
তবে এর আগে বলা হয়েছিল, কারিগরি সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিমানের পাইলট জরুরি অবতরণের কথা বলেছিলেন।
বিমানের কো-পাইলট সার্গেই ট্রুখাচেভের স্ত্রীর ভাষ্য, শারম আল-শেখ ছাড়ার আগে টেলিফোনে বিমানের অবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন তাঁর স্বামী।
কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইনসের দাবি, বিমানটি ওড়ার জন্য পুরোপুরি উপযোগী ছিল। ওড়ার আগে পরীক্ষায় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।
বিমান সংস্থাটি আরও দাবি করে, ‘বাহ্যিক কারণে’ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
অ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে এক দুর্ঘটনায় ওই বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কায়রো বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমানটির লেজের অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ যেনতেনভাবে মেরামতের কারণে বড় দুর্ঘটনার নজির আছে। তবে এমন সম্ভাবনা নাকচ করেছে কোগালিমাভিয়া।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া-সংক্রান্ত অনুমানের সত্য-মিথ্যা নির্ভর করছে তদন্তকারীদের তদন্তের ওপর।
চালকের ত্রুটি
চালকের ত্রুটির কারণে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছে কোগালিমাভিয়া।
বিমান সংস্থাটির ভাষ্য, পাইলটের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। পাইলটের ১২ হাজার ঘণ্টার বেশি বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল।
বিমানটির দুটি ‘ব্ল্যাকবক্স’ উদ্ধার করা হয়েছে। তা বিশ্লেষণ করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এর মধ্য দিয়ে চালকের ভূমিকা, বিমানটির শেষ মুহূর্তগুলোর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
বিমানটি ভূপাতিত করার দাবি করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। ওই গোষ্ঠীটি সিনাই এলাকায় সক্রিয়।
আইএসের ওই দাবি আমলে নিতে নারাজ মিসর ও রুশ কর্তৃপক্ষ।
‘বাহ্যিক কারণে’ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে—কোগালিমাভিয়ার এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার গুঞ্জন জোরদার হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, বিমানটিকে ভূপাতিত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্র জঙ্গিদের কাছে থাকার কথা নয়।
আবার জঙ্গিদের হাতে ওই ক্ষেপণাস্ত্র থেকে থাকতে পারে বলেও কিছু লোকের সন্দেহ আছে।
বোমা হামলা
বিমানটি বোমা হামলার শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা। তবে তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিক উপসংহারে পৌঁছাননি বলেও জানিয়েছেন।
রাশিয়ার ইন্টারস্টেট অ্যাভিয়েশন কমিটির প্রধান ভিকতর সরোশেঙ্কো বলেন, বিমানটি মধ্য আকাশেই ভেঙে পড়েছিল। তাঁরও একই কথা, এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় আসেনি।
বোমায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে কি না—এ ব্যাপারে কোনো অকাট্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ হাজির করতে পারেননি। তা ছাড়া শারম আল-শেখ বিমানবন্দরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে বিমানে বোমা রাখা কতটা সম্ভব ছিল, এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে যেসব তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে, এর কোনোটিই উপসংহার টানার মতো অবস্থায় নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের পর এসব তত্ত্বের সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
ছবি এএফপি