রশীদ আহমদ, নিউইয়র্ক থেকে :: মিস ক্যারলিন ওয়াকার নিউইয়র্ক সিটির নতুন জজ নির্বাচিত।তিনি হলেন প্রথম হিজাবী মুসলিম মহিলা। ইতিপূর্বে হিজাব পরিহিতা কোন মুসলিম মহিলা এই পদে সমাসীন হননি। তিনি নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীন (৭, মিউন্যাসিপাল ড্রিস্টিক্ট কোট) সিভিল কোর্টের জজ নির্বাচিত হয়েছেন।আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক মিস ওয়াকার। আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম একজন মুসলিম হিজাবী মহিলা সিভিল কোর্টের জজ নির্বাচিত হয়ে মুসলমানদের গর্বের উপলক্ষ অর্জন করেছেন। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলিম কোন মহিলা এই গৌরব অর্জন করতে পারেনি।
গত ৩রা নভেম্বর ২০১৫ মঙ্গলবার ইলেকশন ডে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরাসরি ভোটে তিনি এই পদ অলঙ্কৃত করেন।তাঁর এই বিশাল অর্জন উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকানরা তাৎক্ষণিক এক সংবর্ধনার আয়োজন করে।নিউইয়র্কের ওজনপার্কের আটলান্টিক এভিনিউর উপর অবস্থিত হালাল থাই রেস্টুরেন্ট “আহার” এ অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্রেটিভ কাউন্সিল অফ নিউইয়র্ক এর প্রেসিডেন্ট জনাব আনোয়ার হোসাইন। সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব জাহাঙ্গীর কবীর এর যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সেক্রেটারী জনাব কবীর চৌধুরী। সংবর্ধিত অতিথিকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন আহার হালাল থাই রেস্টুরেন্ট এর সত্তাধিকারী জনাব আবুল খায়ের।
বক্তব্য রাখেন মাজলিশ আশ শুরা দায়িত্বশীল ইমাম আবদুল লতিফ আল আমীন, কাউন্সিল মেম্বার বেরন একলী, এসেম্বেলী মেম্বার চার্চবেরন, টাইম টিভির সিও এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবু তাহের, বিশিষ্ট সমাজ সেবক জনাবা নাজিয়া মুনতাসির, বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিটস জনাব মীর মাসুম আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব বদরুল হক,হিউম্যানিটি ক্লাব অফ আমেরিকা ইনক এর প্রেসিডেন্ট রশীদ আহমদ ও তরুন কমিউনিটি এক্টিভিটস জনাব আবদুস সাত্তার প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী নতুন প্রজন্ম ছাড়াও মূলধারার অনেক রাজনীতিবিদ অংশ নেন।
নবনির্বাচিত জজ মিস ক্যারলিন ওয়াকার তাঁর অনুভূতিতে বলেন, আমি প্রথমে মহান আল্লাহ তা’য়ালা শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে এতদূর পর্যন্ত এনে তাঁর করুনায় জজ হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তারপর আমি আমার সকল ডেলিগেটদেরকে সম্ভাষণ জানাচ্ছি যারা কষ্ট করে তাদের আমানত ভোট দিয়ে আমাকে এই পদে নির্বাচিত করেছেন। সাথে সাথে নিউইয়র্কের সকল মুসলমানদেরকে যারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও দো’য়া করেছেন।
আর যারা এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং উপস্থিত সবাইকে মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি বলেন,একজন মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছানো কোন কঠিন কাজ না,যদি তাঁর একান্ত ইচ্ছার প্রবল শক্তি থাকে। কোন নারীকে ভীতি ও সংহিসতার ছায়ায় বসবাস করা উচিত না। তিনি বলেন,যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি দেশ যেখানে বৈষম্যের কোন সুযোগ নেই। এজন্য মুসলিম কমিউনিটিকে আরো এগিয়ে আসতে হবে।তিনি বলেন,নিউইয়র্কে বাংলাদেশীরা এখন নিজেদের অন্যতম প্রভাবশালী কমিউনিটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।এটা আপনাদের জন্য ভবিষ্যত আপার সম্ভাবনা দিবে বলে আমি প্রত্যাশী। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে বৈচিত্র্যময় অবস্থানে আপনারা খুবই দৃঢ় প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ।আরো এভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক বাংলাদেশী মুসলমানও প্রশাসনের বিভিন্ন পদে স্থান করে নেয়া সম্ভব।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারা বলেন, এই বৈচিত্রময় বিশাল দেশটিতে মুসলমানরা ধীরে ধীরে আশার আলো সঞ্চার করতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দুজন মুসলিম সদস্য সহ হোয়াইট হাউজ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক সেক্টরে মুসলমানদের ছোঁয়া লেগেছে। শেষ পর্যন্ত ক্যারলিন ওয়াকার মুসলিম অধ্যুষিত নিউইয়র্ক সিটিতে সিভিল কোর্টের জজ নির্বাচিত হয়ে মুসলমানদের সুনাম আরো একধাঁপ কুড়িয়ে নিলেন। অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে মোবারকবাদ জানানো হয়।অনুষ্ঠানটি টাইম টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আহার হালাল থাই ও বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্রেটিভ কাউন্সিল অফ নিউইয়র্কের পক্ষ থেকে সবাইকে ডিনার পরিবেশন করা হয়।