১ম পর্বের পর : ইসলাম শব্দ থেকেই স্পষ্ট হয় ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ ও সৌন্দর্য। আরবী “সালামুন” শব্দ হতে ইসলাম শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ ‘শান্তি’। আত্মকলহে নিমজ্জিত, নৈতিকতা ও মানবতা বিবর্জিত বর্বর আরববাসীর জীবন যাত্রা বদলে দেয়া, ভোগ্য পণ্যের মতো অবহেলিত নারী সমাজকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করা, সামাজিক ভেদাভেদ মিটিয়ে মানবতার স্বীকৃতি দেয়া, পিতা মাতা ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার প্রদান, শিক্ষার গুরুত্ব, অন্যায় অবিচারকে মিটিয়ে দেয়াসহ সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে ইসলাম।
ইসলাম ধর্ম মানুষকে নির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে জীবন যাপনের নির্দেশ দিয়েছে। মুসলমানদেরকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মের সীমারেখার মধ্যে থাকতে হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম শুধুমাত্র প্রচলিত অর্থে একটি ধর্ম নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা। আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল (সা:) –এর উপর পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করে মানবজাতিকে সরল পথ প্রদর্শন করেছেন। আর পবিত্র কুরআনের এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে “তোমাদের জন্য রাসূল (সা:) -এর জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ বিদ্যমান।” ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণে জান্নাতের আশা এবং অবাধ্যতায় জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে।
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিটি কাজের পিছনে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্য বিহীন কর্ম অপ্রকৃতস্থের আলামত। একজন ধার্মিক যখন কোনো ভালো কাজ করে, তখন সে জানে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ভালো কাজের প্রতিদান দিবেন। একজন অসহায়কে সাহায্য করার সময় কেউ দেখুক কিংবা না দেখুক, মহান স্রষ্টা সবকিছু দেখছেন এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করেই ধার্মিক ব্যক্তি সহায়তা করে। কোনো মন্দ কাজে লিপ্ত হবার সময় আল্লাহ্ তায়ালা’র নির্দেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে ভেবে বিশ্বাসী মানুষেরা ফিরে আসে। কিন্তু স্রষ্টাতে যে অবিশ্বাসী, ধর্মের সৌন্দর্য দেখতে যে অক্ষম, পরকালে যার বিশ্বাস নেই তার প্রতিটি কর্ম কতোই না ভয়াবহ! একজন নাস্তিক যখন ভালো কাজ করবে সে কোনোভাবেই পুণ্যের আশা করবে না। লোক দেখানো আর বাহবা অর্জনই হবে তার কাজের উদ্দেশ্য। মন্দ কাজ থেকে সে ফিরে আসতে পারবে না। কারণ স্রষ্টার নির্দেশ অমান্যের ভীতি তাকে প্রভাবিত করবে না। ফলে পিতা মাতার সম্মান, প্রতিবেশীর অধিকার, সন্তানের ভরণপোষণ সবকিছুই তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে উঠবে।
ধর্ম মানুষকে নির্দিষ্ট সীমারেখায় আটকে রেখেছে। স্রষ্টার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম পার্থিব জীবন ব্যবস্থায় অশৃঙ্খলা, সামাজিক বিপর্যয়সহ নানাবিধ সমস্যা উৎপন্ন করে। যারা নাস্তিক্যবাদী মতবাদে বিশ্বাস করে, তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের পিছনে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন: অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ, পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসা, পরনিন্দা, মিথ্যা বলা, সুবিচার না করা, অন্যের উপর প্রভুত্ব করার প্রবণতা, অভিযোগী হওয়া, ক্রোধ, অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ চাপানো, অন্যকে ছোট করে দেখা ইত্যাদি…….
যাবতীয় স্বেচ্ছাচারী অভিলাষ চরিতার্থ করার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা ধর্মীয় বিধি-বিধান। মনের সার্বিক চাহিদা পূরণের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান চীনের প্রাচীর কিংবা হিমালয় পাহাড়ের চাইতেও অধিক দৃঢ়। অতএব ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ ব্যতীত আপন মনোবাসনা চরিতার্থ করা সম্ভবপর নয়, এই ধারণা থেকেই ইসলামের সাথে নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর সংঘাতের সূচনা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: (১) বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। কিন্তু নাস্তিকরা ভাবে, বিয়ে করে সংসার করবো? দরকার কি? কয়েকটি লিভ টুগেদার করলেও কি আসে যায়। অতএব সমাজে ছড়িয়ে দাও যে, বর্তমান সময়ে বিয়ে অচল। (২) নেশাজাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ধর্ম। নাস্তিকরা বলে, অন্যের ক্ষতি না করে মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে। অতএব কেউ যদি স্বেচ্ছায় মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে চায়, সেটা তার ইচ্ছে। (৩) চুরি/ডাকাতি/ছিনতাই নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। স্রষ্টার ভয় ও পরকালে শাস্তির ভাবনাই এই জাতীয় অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু স্রষ্টায় যাদের বিশ্বাস নেই, তাদের পক্ষে অনায়াসে এসব অপকর্মে লিপ্ত হওয়া সম্ভব। (৪) নির্দিষ্ট সংখ্যক নিকটাত্মীয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেছে ধর্ম। জনৈক মুক্তমনা অধ্যাপক নিজের মেয়ে সম্পর্কে বলেছিলেন, মেয়ে বড় হচ্ছে, কিন্তু সমাজের ভয়ে কিছু করতে পারছি না। হায় যদি সামাজিক ভীতি না থাকতো! (৫) পিতা,মাতা ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার রক্ষার নির্দেশ প্রদান করেছে ইসলাম। কিন্তু জান্নাতের আশা ও জাহান্নামের ভয় যাদের নেই, তাদের পক্ষে কোনোভাবেই পিতা মাতার সেবা ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার রক্ষা সম্ভবপর নয়।
বর্তমান সময়ে আবার বাংলাদেশের মতো অনুন্নত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামের বিরুদ্ধে দু’কলম লিখে ইসলাম-বিদ্বেষী ইহুদী/খৃস্টান গোষ্ঠী কর্তৃক রুটি রুজির ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তার অজুহাতে ভিনদেশী ভিসা বাগিয়ে আয়েশি জীবন যাপনের সুযোগ গ্রহণের হিড়িক পড়েছে। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এদেশ ছেড়ে ইতিমধ্যে অনেকে ইউরোপে পাড়িও জমিয়েছে।
সারকথা হচ্ছে, নাস্তিকদের সার্বিক কার্যক্রমকে সামনে রাখলে যে কেউই বুঝতে পারবেন যে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি কাজের পিছনে তাদের কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িত। ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের ব্যাপারে তাদের দ্বিমুখী নীতিও আজ সুস্পষ্ট। একদিকে তারা রাসূল (সা:) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তি করে, অন্যদিকে অশ্লীলতায় ভরপুর গ্রীক মিথ বা অন্য ধর্মীয় ব্যভিচারকে প্রশংসায় ভাসায়। একদিকে ধর্মীয় পোশাক দাড়ি টুপি সম্পর্কে তারা কটাক্ষ করে, অন্যদিকে ক্রুশ, ধুতি সম্পর্কে নীরবতা পালন করে। একদিকে মুসলিম নারীদের হিজাব তাদের কাছে বন্দিত্বের প্রতীক মনে হয়, অপরদিকে হিজাব পরিহিতা নানদের সম্পর্কে তারা নীরব থাকে। অতএব নাস্তিক পরিচয়ের বদলে ইসলাম বিদ্বেষী পরিচয়টি তাদের জন্য অধিক মানানসই।
উপসংহার: ইসলামের প্রতিটি বিধান নিখুঁত ও চিরন্তন। নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সা:) –এর বর্ণিত প্রত্যেকটি বিধান, মূলনীতি ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় রয়েছে প্রতিটি মানুষের জন্য কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তা। ৯০% মুসলমানের বাংলাদেশে সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস একটি জঘন্য অপরাধ। তাই নাস্তিকতা প্রতিরোধে প্রত্যেক মুসলমানকে হাতে হাত রেখে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। যেসব মানুষ ভুলক্রমে নাস্তিক্যবাদী মতাদর্শের অনুসারী হয়ে গেছে, তাদেরকে নাস্তিকদের মায়াজাল থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এভাবেই নাস্তিকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ্। (সমাপ্ত)
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনলাইন এক্টিভিস্ট