‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’— এই প্রবাদের উৎপত্তি বাংলাদেশের জন্য শতভাগ সফল।
প্রথম বিষয় : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে জড়িয়ে ফেসবুকে ‘মসজিদ, মাদ্রাসা ও জঙ্গিবাদ’ নিয়ে একটি প্রচার বেশ জোরেশোরে চলছে। বড় বড় ধর্মবেত্তা এবং বিরাট বিরাট ধার্মিকব্যক্তিগণ এমন বক্তব্যের কারণে সুরঞ্জিতকে তুলোধূনা করে ছেড়েছেন। কেউ তার বিড়াল সদৃশ কার্টুন এঁকে পোস্ট করেছেন, কেউ গালির তুবড়ি দিয়ে ভারত পাঠিয়েছেন, ফাঁসির দাবি উঠেছে, কেউ কেউ বাস্তবিক অর্থেই তাকে ন্যাংটো করে ছেড়েছেন।
কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, তিনি যে এই বক্তব্য দিয়েছেন তার কোনো সূত্র কেউ দিতে পারেনি। না কোনো পত্রিকা, না কোনো নির্ভরযোগ্য নিউজ পোর্টাল। এই সংবাদের উৎস কেবলমাত্র ফেসবুক! সুতরাং এর সত্যতার কোনো ভিত্তি কোথাও পাওয়া যায়নি।
গতকাল নির্ভরযোগ্য পত্রিকাগুলো এবং অনলাইন পোর্টালে সংবাদ এসেছে—
‘এক মাসের বেশি সময় ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অসুস্থ। গত মাসে সিঙ্গাপুরে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে একটি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন তিনি তাঁর নিজ বাড়িতে বিশ্রামে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে কথাবার্তা ও ফোনালাপ থেকে বিরত রয়েছেন। এ অবস্থায় গণমাধ্যমে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। ধর্মীয় উস্কানিমূলক এসব অপপ্রচার থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’
তো বেরাদারানে ইসলাম, আপনারা যারা সামান্য বাতাস পেলেই ঝড়ো বেগে নড়িয়া উঠেন, তাদের কি উচিত ছিলো না এসব গাঁজাখুরি জিনিস প্রচার করার আগে একটু তাহকিক করার? না জেনে, কোনো ধরনের সত্যতা যাচাই না করে কারো নামে এমন মিথ্যা সংবাদ, অপবাদ প্রচার করা কি কবিরা গোনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়?
মি. সুরঞ্জিত সাহেব নানা কারণে আপনার কাছে ব্র্যাত্য হতে পারেন, তাই বলে তার নামে মিথ্যা বক্তব্য প্রচারের অধিকার তো ইসলাম আপনাকে দেয়নি।
দ্বিতীয় বিষয় : মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে ঘটেছে আরও নির্মম ঘটনা। একে তো সুরঞ্জিত সাহেবের বক্তব্যের ঘটনাটাই বানোয়াট, তার ওপর দুদিন ধরে ফেসবুকে বাহবার জোয়ার পড়ে গেছে মাশরাফির পিঠে। তিনি নাকি সুরঞ্জিতকে উদ্দেশ্য করে বিশাল এক ওয়াজ ঝেড়েছেন! মাদরাসা-মসজিদ নিয়ে তার বক্তব্যের প্রতিবাদে তিনি তাকে একহাত নিয়েছেন আর কি! মজার বিষয় হলো, নেটে তার সেই বক্তব্যের হুবহু কপিও পাওয়া যাচ্ছে।
মানুষের মাথায় আক্কল বলে একটা জিনিস থাকার কথা! মাশরাফি কি ঘাস খায় যে এমন বানোয়াট খবরের ওপর ভিত্তি করে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি কথা বলবেন? সে তার খেলা বাদ দিয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় বক্তব্য দিয়ে বেড়াবে— এমন চিন্তা আপনার আক্কলে ধরলো কীভাবে?
সুরঞ্জিত এবং মাশরাফির বক্তব্য সংক্রান্ত দুটো প্রচারই বানোয়াট, ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
আমার যতোদূর ধারণা, এসব ভুয়া জিনিস বানিয়ে কৌশলে প্রচার করে অমি পিয়াল, আসিফ মহি এবং তাদের ভাড়াটে শাহবাগীরা। তারা এসব বানিয়ে ফেসবুকের আনাড়ি মুসলিম যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আনাড়িরা না জেনে না বুঝে মাতম করতে করতে সেসব ফেসবুকে শেয়ার শুরু করে। ব্যস, অমি-আসিফদের ষড়যন্ত্র শতভাগ সফল। কাঁটা দিয়েই তারা সুচতুরভাবে প্রতিদিন তুলছে কাঁটা। মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভেদ, অযথা মিথ্যাবাদিতা, প্রতিহিংসার মতো জঘন্যতম পাপাচার। আমরাও তাদের সেই সংবাদের ফাঁদে আটকা পড়ছি প্রতিনিয়ত।
একটা সময় ইহুদি-খৃস্টানরা অনেক টাকা খরচ করে মুসলমানদের মাঝে ইসলামের নামে নানা প্রোপাগান্ডা চালাতো। এখন তাদের এতো টাকা খরচ করতে হয় না, ফেসবুকে হাজার হাজার মূর্খ ধার্মিক রয়েছে; তাদের দিয়েই আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রচার চালানো যায়!
এ কারণে যেকোনো সংবাদ বা তথ্য প্রচার করার আগে অবশ্যই সেটার সত্যতা যাচাই করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। এর কোনো ব্যাত্যয় ঘটানো মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। ভয়াবহ গোনাহর কাজ!