(৩য় পর্ব) গত পর্বে প্রাথমিক শিক্ষার রুপরেখা সম্পর্কে আলোচনা ছিল৷ এ পর্বে মাধ্যমিক শিক্ষার রুপরেখা সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই৷ প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি তৃতীয় পর্বটি আরো আগেই লিখার কথা ছিল; কিন্তু শারিরিক অসুস্থতায় আমাকে নিয়মিতভাবে লিখতে দিচ্ছেনা৷ এখনও সুস্থ হই নি; নাকের মাংশপেশী বৃদ্ধি হওয়ায় সর্দি-কাশি, মাথাব্যাথা ইত্যাদি আমাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে৷ বর্তমানে ডাক্তারের পরামর্শ মুতাবিক সাময়িক কিছু ঔষুধ ব্যবহার করছি৷ সপ্তাহের শেষ দিকে বা আগামি সপ্তাহ’র শুরুতে অপারেশন করানোর ইচ্ছা (ইনশাআল্লাহ)৷
পাঠকদের কাছে দুআ চাই আল্লাহ যেন সুস্থ্যভাবে ফিরিয়ে আবার আপনাদের মাঝে নিয়ে আসেন৷ সাথে সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যারা আমাকে সুন্দর ও সুপরামর্শে এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করছেন৷ উনাদের নাম নিয়ে ছোট করতে চাই না৷ বিষেশ করে ঐ দ্বীনদার ভদ্র মহিলার যিনি বারবার খরব নিচ্ছেন৷ আল্লাহ উনাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন৷ আমিন৷
খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দীক সাহেব রহঃ এর মূল চিন্তাধারাই হল শাহ ওলিউল্লাহ রহ.’র চিন্তা-চেতনা, তার দর্শন-নমুনা ৷ তিনি ছিলেন ততকালীন জামানার সংস্কারক৷ তার চেতনার মৌলিক বিষয় ছিল ইসলামকে সর্বজনীন করা; যেকোন বিষেয়ে অন্ধ অনুসরণ না করা ৷ যেই চেতনার বাতি উজ্জল করতে খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দীক সাহেব রহ. নিম্নের নিয়মানুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার রুপরেখা পেশ করেন৷ মাধ্যমিক শিক্ষার রুপরেখা
(ক) ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীকে বাধ্যতামূলক রেখে যেমন আরবী সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, হাদিস, উসূলে হাদিস, তাফসির, উসুলে তাফসির, আকাইদ ইত্যাদী- এমন সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে যাতে উদ্দেশ্যর মূলে বেঘোর না হয়৷ আবার কর্মহীন যেন না হয়৷ যদি মাধ্যমিক শিক্ষার পর কোন ছাত্র- ছাত্রী ঝরে পড়ে সে যেন বেকারত্বের অভিশাপে কর্মহীন না হয় নতুবা হিতে বিপরীত হবে৷
এখানেই আমাদের অনেক সমস্যা৷ যে ছাত্রটি এখানে ঝরে পড়ে সে কর্মহীন হওয়ায় এমন নষ্ট হয়, যা সাধারণ ছাত্রের চেয়ে অনেক বেশী কষ্টকর৷ এজন্য কর্মহীন ধর্মশিক্ষা, ধর্মহীন কর্মশিক্ষা ইসলাম বিস্তারের জন্য উপকারী নয়৷
(খ) এজন্য মৌলিক সিলেবাসের পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার যেকোনো বিষেয়কে অপশনাল হিসেবে রাখা উচিৎ৷ যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদী৷
(গ) স্তরবিন্নাস করতঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাকে আলাদা করতে হবে৷ কারন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ এক নয় ৷ ঠিক শিক্ষক নিয়োগে ও সময়সূচিতেও ভিন্নতা আছে ৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচি সকাল ৮টা থেকে ১২টা করা যেতে পারে, আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা প্রথম সেশন ৷ মধ্যখানে নামায ও খাবারের জন্য দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি দেয়া যেতে পারে ৷ হ্যাঁ, গ্রীষ্ম ও শীতের মৌসুমে সময় তারতম্য করা যেতে পারে৷
আবার গ্রীষ্মে দুপুরে ঘুমানোর ব্যবস্থাও করতে পারেন৷ সকালের ক্লাস দশটার আগেই যেমন- আটটা থেকে শুরু করতে পারেন৷ যাতে শিক্ষক ও ছাত্রদের অসহ্য না হয়৷
(ঘ) ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহে পুরাতন ধাচের কিতাবগুলোকে পরিবর্তন করতঃ নতুন আঙ্গিকে সুন্দর ও সহজ-সরল ভাষায় প্রণয়ন করতে হবে৷ আগেকার মন-মেজাজ ও চাহিদা বর্তমানের মন মেজাজ ও চাহিদা এক নয়৷ তাই সিলেবাস প্রণয়ন করতে আলাদা কমিটি নির্বাচন করতে হবে যাতে করে দেশ-বিদেশের চাহিদা ও তাদের মেজাজ বুঝে সিলেবাস প্রণয়ন করা যায় ৷
(ঙ) মাধ্যমিক শিক্ষার সময় যেহেতু পাঁচ বছর তাই প্রতি বছরের ক্লাস পরিবর্তনের সময় অকৃতকার্য ছাত্রদের ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে, যেন কৃতকার্য হয়েই ক্লাস পরিবর্তন করে৷ এর জন্য বেতাকা (ছাড়পত্র) জরুরী ৷
(চ) মাধ্যমিক ক্লাসগুলোতে কিতাবভিত্তিক না পড়িয়ে বিষয়ভিত্তিক পড়ানো আমার কাছে শ্রেয় ৷ হ্যাঁ, তার জন্য মাতৃভাষায় সাহিত্যের সাথে হওয়া উচিত৷ আরবী সাহিত্যরীতির জন্য নতুন নতুন বিষয়ে পাণ্ডুলিপি করে পড়ালে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস৷
(ছ) আধুনিক বিষয়াদিকেও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ এমন যেন না হয় যাতে মাদরাসার ছাত্ররা বর্তমান হালত থেকে একেবারেই বেখবর৷ এমন হওয়া উচিত যাতে মাদরাসা ছাত্ররা সর্বাংশে, সবার শীর্ষে ভূমিকা রাখতে পারে ৷
(জ) মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের আমলিয়াতের প্রতি খুবই খেয়াল রাখতে হবে৷ যেহেতু এই বয়সটি নাজুক, তাই প্রথমেই ফারাইজ ওয়াজিবাতের প্রতি খুবই খেয়াল রাখা ও সুনামের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা৷ কোনোক্রমেই যেন ছাত্ররা সুনানের বিধি পালন করতে যেয়ে হারাম বা অবৈধ কাজে লিপ্ত না হয়ে পড়ে৷ যেমন- একটি ছাত্র মাসবুক হয়ে গেল, এখন কেন মাসবুক হল এজন্য এমন কঠোর ব্যবস্থা দিলেন যাতে পরেরদিন ছাত্রটি বিনা অজুতেই নামাযে, অথবা মযবুত হওয়ার ভয়ে সে নামাযই এক রাকাত ছেড়ে দিল; যা মোটেও কাম্য নয়৷ তাই আমার মতে শ্রেশিশিক্ষক বা তালিমী মুরুব্বী নিয়োগ করা যেতে পারে পরিমাণমত ছাত্রদের জন্য ৷ (চলবে)
লেখক : তরুণ আলেম, চিন্তক