শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:৪৯
Home / প্রতিদিন / যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (পর্ব-২)

যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (পর্ব-২)

খতিব তাজুল ইসলাম::

educationalযৌনশিক্ষা কতটুকু জরুরী? এই বিষয়ে আমি আমার পূর্বের আলোচনায় (নিচে লিংক) দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেছি। মুক্ত যৌনাচারে বিশ্বাসী, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ডে-নাইট পার্থক্য। যৌবনের শুরুকে জানা-বুঝা আবশ্যকীয়। মানুষের জন্য ফিতরাতের কাজ হিসেবে নখ, চুল কাটা, মুসলমানি করানো আবশ্যকীয়। মুসলমানরা তা ফলো করে।

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের এই মৌলিক ফিতরাতের বিষয়ে ততটুকু ওয়াকিফহাল নয়; যতটুকু থাকা জরুরী। বর্তমানে যা চালু হয়েছে তাতে কি আছে, না আছে আমি স্বচক্ষে দেখেনি; তবে শুনেছি যে, মূল বক্তব্য হলো যৌবন কিভাবে শুরু, তার আলামতসমূহ। কামনা-বাসনার ব্যাখ্যা। নিরাপদ যৌনাচারের টিপস। দুর্ভাগ্য যে ৯৫% মুসলমানের দেশে ইসলামবান্ধব কোনো শিক্ষা এখন পর্যন্ত চালু নেই। স্কুলগুলো কড়া সেকুলারিজমের দিকে আর কওমি মাদরাসাগুলো ঠিক তার বিপরীত জাগতিক শিক্ষা বর্জিত। দুটো শিক্ষাই মুসলমানদের জন্য খণ্ডিত-অপূর্ণাঙ্গ।

ছেলে-মেয়েদের বয়সন্ধিকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানদের মাঝে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। মায়েরা নিজেই যখন অজ্ঞ তখন স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে তিনি কি শিক্ষা দিবেন? ছেলেদের বেলায়ও পিতার অবস্থা সমান। পারিবারিকভাবে এসব আলোচনা করাও লজ্জার বিষয়। মায়ের জন্য মেয়ের সাথে যতটুকু সহজ, পিতার পক্ষে ছেলের কাছে ততটুকু সহজ নয়। ধর্মীয় গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে স্বাভাবিক জ্ঞান হয়তো পাওয়া যাবে; কিন্তু এই স্পর্শকাতর মােআলা বয়ান করে অনেকে বিপাকে পড়েছেন। এসব বিষয় আলোচনা করাটাও মনে করা হয় খুবই মারাত্মক। মহিলা ধার্মিক শিক্ষিকা মেয়েদের জন্য যোগাড় করা কি খুব সহজ ব্যাপার? পুরুষ শিক্ষক দ্বারা বালিগা মেয়েকে পড়ানোও তো আরেক অধার্মিকের কাজ।

অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, শিশুরা যখন প্রাইমারিতে পড়ে তখন তারা থাকে ধর্মীয় শিক্ষকের নাগালে। যখন হাইস্কুলে যায় তখন পড়াশোনার চাপে উপযুক্ত বয়সে তার সেই মাসআলাগুলো আর জানা হয় না। কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে বই-পুস্তক পড়ে জানার চেষ্টা করে। আজকাল অবশ্য ইন্টারনেটের বদৌলতে বিষয়টি আরো সহজ হয়েছে। জানার উপায়ের বিস্তৃতি ঘটেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হয়তো ততো সহজ হয় নি এখনো। উন্নত বিশ্বে সকল বয়সের ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরি, নারী-পুরুষদের জন্য প্রাক্টিস ক্লাস খুব নজরে পড়ে।

তাই ভাবনা হলো, বাংলাদেশের হাইস্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বেলায় যে, তারা যৌবন ও যৌনতা সম্পর্কীয় জরুরী বিষয়গুলো কার কাছ হতে শিখবে? যারা ইসলামি আন্দোলনে শরিক আছে তারা হয়তো সেসব দলীয় অভিজ্ঞ আলেম-আলিমার কাছ হতে শিখলো, জানলো। কিন্তু যারা এসবে নেই তারা শিখবে কিভাবে ?

সেজন্য আমি বলতে চাই, কেবল মাসজিদ-মাদরাসা করেই যেন ক্ষান্ত না হই। যারা মাদরাসায় পড়লো তাদের জানা হলো। যারা পড়লো না, ইসলামি আন্দোলনে শরিক হলো না তাদের ব্যাপারে ও আমাদের একটা কর্তব্য চাই ।

ইউরোপ আমেরিকায় মসজিদ ও ইসলামি সেন্টার কেন্দ্রিক সেই ব্যবস্থা এখন গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে মসজিদকেন্দ্রিক এই ফর্মুলা আমরা চালু করে নিতে পারি। প্রতিটি মসজিদে ইমাম সাহেব কর্তৃক ইমামতির পাশাপাশি পুর্ণবয়স্ক বা উঠতি বয়সী যুবক ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা আলোচনা বা ফেকহি ক্লাস চালু করা। প্রতিটি মসজিদে প্রয়োজনীয় প্রাত্যহিক জীবনের জন্য জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়ের উপর লিখিত বইয়ের সংগ্রহশালা বা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা। এই সমাহার থেকে এলাকার ছেলে-মেয়েরা অবশ্যই উপকৃত হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেনো পড়ার পর আবার তারা বইগুলো ফেরত এনে জমা দেয়। প্রতি সপ্তাহে ১ ঘণ্টার ১টি ক্লাস নিন। প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখুন।

এভাবে ৫২ সপ্তাহে ৫২ টি ক্লাসই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে। যাদের কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়, তাদের শুদ্ধ করার বিরাট সুযোগ এসে গেল হাতের নাগালে। আর উঠতি বয়সের কিশোরি, বয়স্কা নারীদের জন্য একজন মহিলা শিক্ষিকা বা আলেমার প্রয়োজন। যে সকল মসজিদে পর্দা সহকারে বসার ব্যবস্থা নেই, তারা গ্রামের বা শহরের উপযুক্ত কারো বাড়িকে বেছে নিতে পারেন। আজকাল মাদরাসা পড়ুয়া আলেমা শিক্ষিকা খুব কম নয়।

মনে রাখবেন! এই ক্লাসগুলোতে কোন দল বা গোষ্ঠীর লেভেল লাগানোর চেষ্টা করবেন না। আমরা ছাত্রীসংস্থা, ছাত্রীসেনা, মহিলা মজলিস, মহিলা আন্দোলন, মহিলা তাবলিগ জামাতসহ অনেক কিছু দেখলাম। কেবল বিভাজন বিভক্তি। আমাদের মতে যারা ইমামতি করবেন দয়া করে প্রথমদিনেই কোনো দলের সাথে থাকলে রিজাইন দিয়েই শুরু করুন। আপনি আল্লাহর দ্বীনের উপর পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব পালন করুন। কারণ আমাদের দেশের কোন দলই পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক দল বলে মনে হয় না। কারণ, তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না; যা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাই দলের লেজুড়বৃত্তি পরিহার করুন। উম্মাহর অংশ হয়ে কাজ করলে আল্লাহপাকের নুসরাত ও রহমত আপনার পাশে থাকবে।

আমাদের সমাজের মসজিদের ইমাম অথবা মুয়াজ্জিন বলেন, তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ’র আযান ও ইমামতি এবং মসজিদ তদারকির দায়িত্ব ছাড়া আর কিছুই থাকে না। থাকে হয়তো বাচ্চা পড়ানো বৈকালিক বা সবাহি মক্তব। এইসব কাজ ছাড়াও সামাজিক অন্য কোনো জিম্মাদারি বা রুটি-রুজগারির জন্য কোনো পথ ও পন্থা বের করলে ব্যক্তিগত জীবনে স্বাচ্ছন্দ আসবে। সে বিষয়ে অন্যদিন অন্য কলামে লিখবো ইনশাআল্লাহ।Teaching-Assistant-009

অতএব পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা যখন দেশে নেই, সেহেতু উলামায়ে কেরামগণকে সে বিষয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। এভাবে কোটি কোটি মুসলমান বংশধরদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পরিনা। স্কুল ‘কলেজ পড়ুয়াদের যৌনশিক্ষা মানি না মানবো না’ কিছু ভার্চুয়াল প্রতিবাদ লিখনিতে যেন আমরা সীমাবদ্ধ না রই। বাতিল যখন ময়দানে তখন আমাদের করণীয় ঠিক করে কাজ শুরু করে দেয়া ঈমানী ফরিজা ও নৈতিক কর্তব্য বলে মনেকরি।

লেখক : খতিব ও গবেষক

আরও পড়ুন : প্রথম পর্ব

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...