‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে সংসদে নানা যুক্তি তুলে ধরে শিক্ষা ও নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ও্ই সব প্রতিষ্ঠানের সমালোচনার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন করেছেন তিনি।
বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাল্যবিবাহ নিয়ে ঘাবড়ানো বা চিন্তা করার কিছুই নেই। আমাদের আর্থ-সামাজিক বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।”
সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে’ মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এবং বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়।
এতে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে উৎসাহিত হবে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা আজ এটা নিয়ে কথা বলছেন তারা কোনো দিন গ্রামে বাস করেনি। গ্রামের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। শুধু একবার গেলাম দেখলাম আর মুখের কথা শুনলাম, তাতে সব কিছু জানা হয় না।
“গ্রামের পারিবারিক মূল সমস্যা সম্পর্কে উনাদের কোনো ধারণা নেই। এছাড়া আমাদের দেশে কিছু বিষয় রয়েছে সে সম্পর্কে তাদের কোনো চিন্তা নেই। সেই কারণে তাদের অনেক বড় বড় কথা।”
‘বাস্তবতা’ বিবেচনায় নিয়েই আইনটি সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ‘তবে’ কেন লাগালাম, এটা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠছে। যেহেতু তারা বাস্তবতার অনেক উর্ধ্বে রাজধানীতে বসবাস করছে। রাজধানীর পরিবেশটাই তারা দেখে। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ পরিবেশ সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।”
কোনো আইন ‘রিজিড’ হতে পারে না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেক আইনেই তো বিশেষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে একটা সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। না হলে সমাজের জন্য অনেক বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে।”
‘বিশেষ অবস্থা’ বোঝাতে দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু একটি মেয়ে যদি… যে কোনো কারণে ১২-১৩ বা ১৪-১৫ বছরের সময়ে গর্ভবতী হয়ে যায়- তাকে গর্ভপাত করানো গেল না। তাহলে যে শিশুটি জন্ম নেবে তার অবস্থান কী হবে? তাকে কী সমাজ গ্রহণ করবে?
“তাহলে এই বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ কী হবে? তার ভাগ্য কী হবে? এ রকম যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে কী হবে?”
“যদি অ্যাবরশনের বিষয়টি আইনে থাকে, তাহলে সমস্যা নেই। অ্যাবরশন করিয়ে নেবে। আর যদি না হয় তাহলে যে মেয়েটি সন্তান জন্ম দিল তার ভবিষ্যৎ কী আর সন্তানটিরও ভবিষ্যত কী হবে?”
এই ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেখানে বাবা-মার মত নিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলে বাচ্চাটি ‘বৈধতা’ পাবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে বলতে গিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বাল্যবিয়ের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
ইউরোপের অনেক দেশে বিয়ের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এসব দেশে অল্প বয়স্ক মায়ের সংখ্যা অসংখ্য। ১২-১৩ বছরের বাচ্চা মেয়েরা মা হয়ে যায়। তারা গর্ভপাত করাতে চায় না। কিন্তু বাচ্চাটা হওয়ার পর ২-৩ বছর লালন পালন করে ওই মেয়ে বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে ফেলে রেখে চলে যায়।”
পশ্চিমে বাবার পরিচয় না থাকলেও শিশুর শিক্ষাগ্রহণে কোনো সমস্যা না হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই দেশে বাবা-মা কে তা কেউ জানতে চাইবে না। কিন্তু আমাদের দেশে কী হবে?”
বাংলাদেশে স্কুলে ভর্তির জন্য শিশুর বাবা-মা’র নাম উল্লেখ জরুরি বলে জানান তিনি।
“বাবার নাম কী, মায়ের নাম কী সমস্ত তথ্য দিতে হবে। কেউ ওকে গ্রহণ করবে না। ছেলে হোক মেয়ে হোক তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাকে কেউ চাকরিও দেবে না। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এটা কোনো বিষয় নয়, তারা এটাকে গ্রহণ করে নেয়।”
পশ্চিমের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক পরিস্থিতির তুলনামূলক এই চিত্র আইনের সমালোচকরা ভেবে দেখেছেন কি না তা জানতে শেখ হাসিনা।
“যারা খুব উচ্চ স্বরে কথা বলছেন তারা কী এই বাস্তবতাটা চিন্তা করছেন? চিন্তা করছেন না বলেই এভাবে কথা বলতে পারেন।”
“আমি যতদিন সরকারে আছি, মনে করি এটা আমার দায়িত্ব। সমাজের এই সন্তানটাকে একটি স্থান করে দেওয়া। তার জন্য এই বিশেষ বিধান করে দিয়েছি। কারণ এটা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত চিন্তা।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিত্তবানদের সন্তানদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সরকারকে ভাবাচ্ছে।”