বিবিসি : মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে থাকা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীরা দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, পুরুষদের হত্যার অভিযোগ করেছেন। বিবিসির সংগ্রহ করার এক দুর্লভ ভিডিও চিত্রে নিপীড়িত মানুষদের এসব আর্তি উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সেখানকার কোনো ভিডিও পাওয়া গেল। এর কারণ, ওই এলাকায় গণমাধ্যমসহ বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ভিডিওটির ওপর ভিত্তি করে ‘মিয়ানমার রাখাইন: ইনসাইড দ্য ক্লোজড রাখাইন রিজিয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনটি করেন বিবিসির মিয়ানমার প্রতিনিধি জোনা ফিসার। ভিডিওতে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ধানের খেত, জনমানুষহীন বসতবাড়ি। জোনা ফিসার বলেন, ‘দুই মাস ধরে এ অঞ্চলে সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের ঢোকা প্রায় বন্ধ। আমরা এই ভিডিওটি একটি সূত্র থেকে জোগাড় করেছি। কয়েক সপ্তাহ আগে এসব গ্রাম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ছিল। কিন্তু এখন সেখানে তারা কেউ নেই।’
ভিডিওতে পোড়া বাড়িঘর আর জনবিরান গ্রামের দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেসব গ্রামে সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী এই অভিযানকে শুদ্ধি অভিযান বলে বর্ণনা করছে। কেউ এটাকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান আবার কেউ গণহত্যা হিসেবেও বর্ণনা করছেন।
ভিডিওটি ধারণ করা হয় একটি গাড়ি থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক ঘণ্টা চলার পরে তাঁরা কয়েকজন রোহিঙ্গার সন্ধান পান।
ভিডিওতে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে বলতে শোনা যায়, তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এঁদের অনেকেই বাংলাদেশে চলে গেছেন।
এক নারীকে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেন, তাঁর স্বামীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ভিডিওতে বোরকা পরা একদল নারী কথা বলেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমাকে, আমার মেয়ে এবং ভাতিজিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেনাসদস্যরা এই ধর্ষণ করেছে। ওরা টাকাপয়সাও কেড়ে নেয়।’
আরেক নারী বলেন, ‘আমাকে ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে গিয়ে খেতের মধ্যে ধর্ষণ করা হয়। আমাকে রক্ষা করার মতো কেউ ছিল না।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে একাধিক সূত্রে রাখাইন অঞ্চলে নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নবনির্বাচিত সরকার এবং এর অঘোষিত প্রধান অং সান সু চি দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি জটিল সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তবে এই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে নীরবতার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সু চির এ অদ্ভুত সাযুজ্য লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন সু চির কার্যালয় থেকে গৎবাঁধা এক বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। এর মূল কথা হলো সেনাবাহিনী আইনের শাসন মেনে সবকিছু করছে। আর রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সু চি গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠন করেছেন। সেনাবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ জেনারেল এই কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাই এই কমিশন কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
Boys stand among debris after fire destroyed shelters at a camp for internally displaced Rohingya Muslims in the western Rakhine State near Sittwe, Myanmar May 3, 2016. REUTERS/Soe Zeya Tun - RTX2CMC2
Komashisha