ফারুক ফেরদৌস ::
আগের সব জরিপ ফলাফল উল্টে দিয়ে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারি ক্লিনটন পরাজয় মেনে নিয়েছেন। সপ্তাহ খানেক আগেও ধারণা করা হচ্ছিলো হিলারি আগাম বিজয় পেয়ে যাবেন। গত কয়েকদিনে ট্রাম্পের পক্ষে কিছুটা জনসমর্থন দেখা গেলেও খুব বেশি হলে সবাই ভাবছিল হয়তো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে কিন্তু শেষ নাগাদ হিলারিই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। কিন্তু ফলাফল যে সেদিকে যায়নি সেটা এখন পরিষ্কার। মোটামুটি বড় ব্যবধানে হিলারিকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। এই বিষয়ে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে কথা হয় দেশের শীর্ষ ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সাথে।
মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি সমান সমান সম্ভাবনা দেখছিলাম। আগে থেকে প্রচারণা যেভাবে চলছিলো, ট্রাম্প ক্ষতিকর আর হিলারি ভালো এই প্রচারণাটাই ক্ষতি করেছে। অনেক দিক থেকে এই নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ই স্বাভাবিক ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনো কোনো দল একাধারে দশ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকেনি। দশ বছর ডেমক্রেটরা ছিলো এবার রিপাবলিকানদের বিজয়ই স্বাভাবিক। শ্বেতাঙ্গরা বরাবরই ট্রাম্পের পক্ষে ছিলো আর যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা নারীকে প্রেসিডেন্ট মানতে প্রস্তুত হয়নি এসব কারণে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা সব সময়ই ছিলো। বাইরের প্রবাহ বা স্রোত যেদিকেই থাকুক, ভিতরগতভাবে তিনি শক্তিশালী ছিলেন এটাই নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই বিজয়ের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিপুল অর্থ বিত্ত ও ইহুদি লবিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন মাওলানা নদভী।
উগ্রবাদকে উস্কানি দিয়ে, মুসলিম বিরোধী স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েও ট্রাম্প বিজয়ী হলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক মানবাধিকার বা তৃতীয় বিশ্বের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর পক্ষে না। তারা তাদের শক্তি, ক্ষমতা, সাম্প্রদায়িকতা, অমানবিকতা, দমননীতি এগুলোর পক্ষেই রায় দিয়েছে। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চরিত্রে এত সমস্যা থাকার পরও তার বিজয় প্রমাণ করে তারা এরকম চরিত্রের মানুষকে ঘৃণা করে না।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, এটা এখনই বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অনেক ক্ষমতাধর কিন্তু তিনি একাই পলিসি বানান না। যুক্তরাষ্ট্রের যে নিজস্ব পলিসি থাকে, সেটাই প্রেসিডেন্ট ফলো করে থাকেন। তাদের পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধনীতি এগুলো তৈরি করা জন্য শক্তিশালী ব্যুরোক্রেসি আছে। কাজেই সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে ট্রাম্প কোন পথে আগাবেন তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তার আগের বক্তব্যগুলো নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য ছিলো মন্তব্য করে মাওলানা নদভী বলেন, তিনি জানতেন, তিনি এগুলো বললেই তরুণ ও অভিজাত শ্রেণি খৃষ্টান সাম্প্রদায়িক শ্রেণি তার পক্ষে আসবে এজন্য তিনি এভাবে বলতেন। পরে তার পলিসি কী হবে তা এখনো বোঝা বলা যাবে না।
মিডিয়ায় প্রকাশিত সবগুলো জরিপে বরাবরই হিলারি এগিয়ে থাকার পরও ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে মাওলানা নদভী বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত জরিপগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজানো ছিলো বলে আমি মনে করি। হিলারিকে অতি আত্মতুষ্টির মধ্যে রাখার জন্যই ইহুদি প্রভাবিত মিডিয়া এই প্রতারণামূলক কাজটি করেছে।
ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেও রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ট্রাম্পের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে মন্তব্য করে মাওলানা নদভী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক মানুষ লিবারেল অর্ধেক মানুষ উগ্র। উগ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়াতেই ট্রাম্প জিতে গেলেন। এর অর্থ এই না যে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাকার হয়ে গেছে। ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে গেলেও সামনে তাকে বিশ্ব পরিস্থিতি, মার্কিন অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। তিনি রাজনীতিবিদ না ব্যবসায়ী, তাকে নিয়ে অন্যরা রাজনীতি করবে। তার অপরিপক্বতা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মাধ্যমে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ট্রাম্পের আমলে পৃথিবীর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আর আগের মত নাও থাকতে পারে।
আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে