শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৫৯
Home / কওমি অঙ্গন / বেফাক তুমি কার?

বেফাক তুমি কার?

আবদুর রহীম সাঈদ : কওমী অঙ্গনের সর্ববৃহৱ ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম বেফাকুলল মাদারিসিল আরাবিয়্যা বাংলাদেশ। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ. ও শায়খুল হাদীস আল্লামা গহরপুরী রহ. এর চিন্তা ও পরিশ্রমের ফসল। উনাদের ইন্তেকালের পর সর্বশেষ ভরসা ছিলেন সদ্য সাবেক মহাসচিব মরহুম আল্লামা আব্দুল জব্বার রহ.। তাঁর ইন্তেকালের পর টালমটাল বেফাক। শকুনের বিষাক্ত চোখ বেফাকের উপর। সঙ্গত কারণে কৌতুহলী মানুষের প্রশ্ন বেফাক তুমি কার?

502হাটহাজারী মাদরাসায় বেফাকের বৈঠক!
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)এর কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরী সভা গতকাল ২১ নভেম্বর সোমবার দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেফাকের প্রশাসনিক বিষয়াদি এবং কওমি মাদ্রাসা সনদের মানের সরকারী স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়। খোলামেলা ও প্রাণবন্ত পরিবেশে বেফাক কর্মকর্তাগণ আলোচ্য বিষয়ের উপর স্ব স্ব অভিমত প্রকাশ করেন। সভায় বেফাকের প্রশাসনিক বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কওমি মাদ্রাসা সনদের মানের সরকারী স্বীকৃতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলে একমত পোষণ করে বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের অষ্ট মূলনীতি অক্ষুন্ন রেখে মাদ্রাসা পরিচালনায় কোনরূপ সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং সিলেবাসে হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদ্রাসার স্বকীয় বৈশিষ্ট বজায় রেখে বেফাকের মাধ্যমে দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কোনরূপ প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং কওমি বৈশিষ্ট ও ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের উসূলে হাসতেগানা বা অষ্ট নীতিমালার সাথে কোনরূপ আপোষ করে সনদের মানগ্রহণের সুযোগ নেই বলেও সকলে একমত পোষণ করেন। কওমি সনদের বিষয়ে বেফাকের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরার জন্য শীঘ্রই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ সদস্যের বেফাক প্রতিনিধি দল আল্লামা শাহ আহমদ শফীর চিঠি হস্তান্তর করবেন বলেও সভায় জানানো হয়।
দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বেফাক কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় উপস্থিত ছিলেন,শায়খুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ফরিদাবাদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা আনওয়ার শাহ, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, মাওলানা মাহফুযুল হক, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মুফতী নূরুল আমীন, মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা ছফি উল্লাহ, মুফতী ওমর ফারুক, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা ইয়াসীন, মাওলানা মুনীরুজ্জামান, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মাসউদুল করীম, মুফতী গোলামুর রহমান, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, মাওলানা মোস্তাক আহমদ, মাওলানা আইনুদ্দীন, মাওলানা আব্দুল হামিদ কুষ্টিয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস মিরপুর প্রমুখ।
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী ইন্তেকাল করায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত গতকালের (২১ নভেম্বর) কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বেফাকের কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে ঢাকা ফরিদাবাদ মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে বর্তমান সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।
সভায় বেফাকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে অতিরিক্ত আরো ৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তারা হলেন মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি.বাড়ীয়া), মাওলানা সফি উল্লাহ (মুহতামিম-জামেয়া দ্বীনিয়া শামছুল উলুম মতিঝিল), মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা আবদুর রব লালবাগ ও মাওলানা মোসলেহ উদ্দীন রাজু গহরপুরী।
বেফাকের কার্যক্রম পরিচালনায় আরো স্বচ্ছতা আনয়ন ও সহজতর করার লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যগণ হলেন বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী (প্রিন্সিপাল-মালিবাগ), মাওলানা আনোয়ার শাহ (কিশোরগঞ্জী), মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস (মনিরামপুরী), মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (বারিধারা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ), মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজিদুর রহমান (দারুলআরকাম, বি.বাড়িয়া), মাওলানা মাহফুজুল হক (প্রিন্সিপাল -রাহমানিয়া), মাওলানা মুফতী নূরুল আমীন, মাওলানা আব্দুর রব (লালবাগ), মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু গহরপুরী ও মাওলানা মুনিরুজ্জামান।
সভায় বেফাকের পক্ষ থেকে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মায়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন কর্তৃক বর্বরোচিত হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে উচ্ছেদসহ জাতিগত নির্মুল অভিযানের বিরুদ্ধে মায়ানমার সরকারের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদের পাশাপাশি জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়। বেফাক কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বি.বাড়ীয়ার নাসিরনগরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনসহ তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে বেফাকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইন্তিকালের আগে পর্যন্ত মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদির বুদ্ধিমত্তা, ধৈয্য ও আত্মত্যাগের সাথে মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকে সভায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় এবং তাঁর পরিবার ও আত্মী-স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। বেফাক নেতৃবৃন্দ মরহুম মাওলানা আব্দুল জাব্বারের কর্মমুখর জীবনের ইতিবাচক দিক নিয়ে স্ব স্ব অভিমত ব্যক্ত করেন। সবশেষে বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পরিচালনায় দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মুনাজাতে তিনি দেশ-জাতির কল্যাণ ও রহমত কামনা করেন এবং নির্যাতিত আরাকানী মুসলমানদের জন্যে বিশেষ দোয়া করেন।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...