কুতায়বা আহসান :
খাইরুদ্দীন বারবারুসা একদিন সাগর তীরের বালুকাময় উপকুলে বসা ছিলেন। একদিক থেকে হাসান ক্রুসু, সালেহ, কাকাদ, সানআন, হাসান আগা এবং তাঁর অন্যান্য সালাররা সেখানে এসে পৌঁছালেন। তাঁরা তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার আগে তিনিই তাঁদেরকে হাত ইশারায় কাছে বসার আমন্ত্রণ জানালেন। সবাই বসে যাবার পর বারবারুসা তাঁদেরকে লক্ষ করে বলতে শুরু করলেন:
‘তোমরা বোধহয় জিজ্ঞেস করতে চাইছো— এ সময় আমি তোমাদের কেন আমার কাছে ডাকলাম?
আমার প্রিয় সাথীরা শুনো! ইতোপূর্বে আমি আমি যে রূপরেখো তৈরি করেছিলাম তা ছিল কতকটা অনুরূপ যে, প্রথমে আমরা তিউনিশে আক্রমণ পরিচালনা করে তা আমাদের কব্জায় নিয়ে আসব। এরপর আমাদের নৌশক্তি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করবো। কিন্তু এখন আমি সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছি।
কারণ, অল্পক্ষণ আগে পশ্চিম দিক থেকে আমার কয়েকজন গোয়েন্দা এসে আমাকে জানিয়েছে, আমরা যখন ডনমার্টনের পানুন দ্বীপে আক্রমণ চালিয়ে ছিলাম তখন সে রাতেই আফ্রিকার হিস্পানীয় শাসক মুনকিড তার নৌবহর নিয়ে সেখানে ডনমার্টনকে সহযোগিতা দিতে এসেছিলেন।
মুনকিডের পরামর্শে ডনমার্টন দ্রুত তার কতিপয় কাসেদকে তাদের শাহানশাহ বরাবারে পাঠিয়েছেন। কাসেদ মাধ্যমে তারা শাহানশাহর কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। তবে আফ্রিকার সেই ভূখণ্ড যা এককালে আমাদের অধীন ছিল, অতঃপর তাদের কব্জায় চলে গিয়েছিল সেই ভূখন্ডের পুনরুদ্ধারের ব্যাপারটি তারা চার্লসের কাছ থেকে চেপে যেতে চায়।
আমার প্রিয় বন্ধুরা শুনো! যখন ডনমার্টনের সাহায্যের আবেদন চার্লসের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে তখন তাকে আমি যতটুকু জানি তার ভিত্তিতে বলতে পারি সে সময় নষ্ট না করে দ্রুতই কেবল খাদ্য আর অস্ত্র সাহায্যই পাঠাবে না, বরং তার বিশাল নৌবহরের একাংশ এবং অগণিত সংখ্যক সেনা পাঠিয়ে দেবে। কেননা, হিস্পানিয়রা যে কোনো মূল্যে আফ্রিকান শক্তিকে দাবিয়ে রাখতে চায়।
অপরদিকে আমিও চাই না— আফ্রিকায় হিস্পানীয়রা এমন শক্তি সংহত করে নিক যারফলে তারা আমাদের আগামীর জন্য বাঁধার দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। আমি তোমাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই যতক্ষণে হিস্পানিয়া থেকে পানুনের নাসারাদের কাছে সাহায্য এসে পৌঁছাবে ততক্ষণে আমি পানুনের খোলনলছে বদলে ফেলতে চাই।
পানুনে আমাদের এবারকার আক্রমণের পদ্ধতিটা কেমন হবে, আমাদেরকে সেখানে কী করতে হবে এই মুহূর্তে আমি তার বিস্তারিত বলতে যাব না। কেবল এ টুকুই বলবো যে, কোনো একরাতে এশার পরে আমরা পানুনের চেহারা বদতে ফেলতে চাইবো।
পানুন পৌঁছেই আমি বলবো আমাদেরকে কীভাবে হামলা চালাতে হবে। শত্রুর শক্তি গুড়িয়ে দেয়ার জন্যে কী ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। এবার আপনারা আপনাদের প্রস্তুতি সেরে নিন। আজ রাত এশার পরেই আমরা সাগরে জাহাজ ভাসাবো। আপনারা সবসময় এ বিষয়টা মনে রাখবেন যে, এ অভিযানটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু‘একদিনের মধ্যেই হিস্পানিয়া থেকে আগত সাহায্য পানুনে এসে পৌঁছে যাবে। আল্লাহর যদি মর্জি থাকে তাহলে আমরা ঐদিনই আক্রমণ করব।
হিস্পানিয়ার রসদ ও অস্ত্র বোঝাই জাহাজগুলো আমরা দখলে নিয়ে নেবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাব। যদি আমরা সেটা বাস্তবায়ণ করতে পারি তাহলে আমাদের নৌশক্তি আশাতীত বেড়ে যাবে।
এবার আপনারা যার যার প্রস্তুতি শুরু করে দিন। আজ রাতেই আমরা সাগরে জাহাজ ভাসিয়ে দেব। আমাদের কিছু গোয়েন্দা বিভিন্ন বেশে অস্ত্রাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে যখন ওরা সংবাদ দেবে হিস্পানিয়া থেকে আগত রসদ এবং সব সরাঞ্জাম এসে পৌঁছে গেছে ঠিক সে সময় আমরা সেখানে অতর্কিতে ঝড়ো হামলা চালাব। এর আগ পর্যন্ত আমরা সাগরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করব’।
এ কথা বলেই খাইরুদ্দীন উঠে গেলেন। তাঁর উঠে যেতেই অন্যান্য সালাররাও উঠে গিয়ে স্ব স্ব প্রস্তুতিতে মনোযোগী হয়ে উঠেন।