Thursday 21st November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: সন্ধ্যা ৭:১৩
Home / খোলা জানালা / ইমামের পেছনে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া জায়েজ নয়

ইমামের পেছনে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া জায়েজ নয়

নামাজে কোরআন তেলাওয়াত করা ফরজ। সূরা ফাতেহা পড়া ওয়াজিব। তবে এটি হচ্ছে মুনফারিদ তথা একাকী নামাজ আদায়কারী এবং ইমামের আমল, মুক্তাদির নয়। মুক্তাদি ইমামের পেছনে চুপ থাকবে, তবে কেরাত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে। উল্লেখ্য, নামাজ দুই প্রকার- জাহরি নামাজ, যাতে কেরাত সশব্দে পড়া হয়। আর সিররি নামাজ, যাতে কেরাত নিঃশব্দে পড়া হয়। উভয় ধরনের নামাজেই মুক্তাদির জন্য ইমামের পেছনে কেরাত পড়া জায়েজ নয়। (আল্লামা ইউসুফ বিন্ধরী মা’আরিফুসসুনান; মাকতাবায়ে আশরাফিয়া, দেওবন্দ, সাহারানপুর, ভারত। প্রসঙ্গ : কেরাত খালফাল ইমাম সম্পর্কে ইমামদের মতামত পৃ. ১৮৮, খ ৩)।

এখানে কেরাত দ্বারা উদ্দেশ্য সূরা ফাতেহা পড়া। কেননা অন্য সূরা পড়া নাজায়েজ সম্পর্কে কারও দ্বিমত নেই। অতএব যেমনি ইমামের পেছনে অন্য সূরা পড়া জায়েজ নয়, তেমনি ফাতেহা পড়াও জায়েজ নেই। ইমামের কেরাতই তার কেরাতের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে। জাহেরি রিওয়ায়াত মোতাবেক ইমামের পেছনে কেরাত পড়া মাকরুহে তাহরিমি; এটাই বিশুদ্ধ অভিমত এবং এ অভিমতই ফাতওয়ার জন্য গৃহীত। (আল্লামা ইবন আবেদীন শামী : রাদ্দুল মুহতার : মাকাতাবায়ে যাকারিয়া, দেওবন্দ, ভারত, পরিচ্ছেদ : কেরাত, অধ্যায় : সালাত, খ ২, পৃ. ২৬৬)।

মাসয়ালায় অন্য ইমামদের ভিন্ন মত ও মতের পক্ষে দলিল রয়েছে। তাদের মতের প্রতি আমরা অশ্রদ্ধাশীল নই। তবে দুঃখজনক হলো, তারা অনেকে ইমাম আবু হানিফার (রহ.) মতকে ভিত্তিহীন আখ্যায়িত করতে চান। হানাফি মাজহাবের প্রমাণের কিয়দংশ এমন :

কোরআনের দলিল : সূরা আরাফের ২০৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর যখন কোরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয়। এ আয়াত প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) উক্তি, এটি ফরজ নামাজের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে। (তাফসিরে তাবারি : ৯/১০৩; তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/২৮)।

হাদিসের দলিল : ১. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা নবী করিম (সা.) জাহরি নামাজ শেষে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সঙ্গে কেরাত পড়েছে? এক ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবীজি বললেন, তাই তো বলছি, কী ব্যাপার, আমার কোরআন তেলাওয়াতে গোলমাল হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ কথা শোনার পর থেকে লোকেরা যেসব নামাজে তিনি সশব্দে কেরাত পড়তেন তাতে কেরাত থেকে বিরত থাকল। (ইলাউস সুনান : ১১৩২-১১৩৩, হাদিস : ১০৭২)।

২. আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। তাতে আমাদের সুন্নতের বিবরণ দিলেন এবং নামাজ শিক্ষা দান করলেন। তিনি বললেন, নামাজে কাতার সোজা করে দাঁড়াবে। অতঃপর তোমাদের কোনো একজন ইমামতি করবে। সে তাকবির দিলে তোমরাও তাকবির দেবে। আর সে কেরাত পড়লে তোমরা চুপ থাকবে। আর যখন ‘গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দালিন’ বলবে তখন তোমরা বলবে, আমিন। (মুসলিম : ৪০৪)। ইমাম আহমদ, ইমাম মুসলিম, ইমাম ইবনে জারির তাবারি (রহ.) প্রমুখ এ হাদিসকে সহিহ বলেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারি গ্রন্থে বলেছেন, এটি সহিহ হাদিস।

৩. হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম এরশাদ করেন, ইমামের পেছনে নামাজ পড়লে ইমামের কেরাতই তার কেরাতের জন্য যথেষ্ট হবে। (মুআত্তা মুহাম্মদ : ৯৮, মুসনাদ আহমদ : ৩/৩৩৯)।

লিখেছেন: মাওলানা মু. সিরাজুম মুনীর তাওহীদ মুহাদ্দিস, ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদরাসা

bitorko‘উমদাতুল কারি’ গ্রন্থকার আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। মুহাম্মদ ইবনে মানী এবং ইমাম ইবনুল হুমাম বলেন, এটির সনদ সহিহ এবং বোখারি ও মুসলিমের শর্তে উন্নীত। আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী (রহ.) বলেন, এর সনদে বিদ্যমান রাবিদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ব্যতীত বাকি সবাই সিহাহ সিত্তা গ্রন্থকারদের রাবি। তারা সবাই সিকা তথা বিশ্বস্ত।

এ হাদিসটি সহিহ এবং আলোচ্য বিষয়ে সর্বাধিক সুস্পষ্ট প্রমাণ। কেননা এ হাদিসের বক্তব্য অপরাপর হাদিস থেকে ব্যতিক্রম। ইমামের পেছনে মুক্তাদি চুপ থাকলে তার কেরাতের কী অবস্থা হবে তা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে একটি মূলনীতির মধ্য দিয়ে। সেটা হলো, ইমামের কেরাতই মুক্তাদির কেরাতের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে। সুতরাং তার কেরাত পড়ার প্রয়োজন নেই। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখানে বিষয়টি সাধারণভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, তাতে ফাতেহার সঙ্গে অন্য সূরাও শামিল। সুতরাং উভয়টির ক্ষেত্রেই ইমামের কেরাত মুক্তাদির কেরাতের জন্য যথেষ্ট বলে গণ্য হবে। কাজেই মুক্তাদি কেরাত না পড়ার দ্বারা এ হাদিসের ‘ফাতিহা না পড়লে নামাজ হবে না।’ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে না।

(দরসে তিরমিজি পৃ. ৯৬)।

সাহাবিদের মত : আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) বলেছেন, তিনি ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়া সম্পর্কে জায়দ ইবনে ছাবিত (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জবাব দিলেন, কোনো নামাজেই ইমামের সঙ্গে কোনো কিছু পড়বে না। (মুসলিম : ৫৭৭)।

– See more at: http://www.alokitobangladesh.com/islam/2014/09/05/94546#sthash.SlytkMG9.dpuf

Check Also

atheist

নাস্তিকতার মূলে রয়েছে ইসলাম বিদ্বেষ। (শেষ পর্ব)

মাসুম আহমদ ::  ১ম পর্বের পর : ইসলাম শব্দ থেকেই স্পষ্ট হয় ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ ...