এহসান বিন মুজাহির ::
প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। ভাদ্র-আশ্বিন এ দু’মাস শরৎকাল। শরতে প্রকৃতি হেসে ওঠে। শরৎকালের প্রকৃতি হয় কোমল, শান্ত, স্নিগ্ধ,উদার। অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঋতুর রাণী শরতের আগমন। শরতে রকমারী ফুলে ফুলে সেজে ওফে প্রকৃতী। এখানে শরতের ফুল নিয়ে আলোকপাত করা হলো। এ সময়ে নদীর কিনারে বালির চরে হেসে ওঠে কাশবন। শুধু কাশবনই নয়, শরতে ফুলে ফুলে সেজে ওঠেছে গোটা প্রকৃতি। এ প্রকৃতিতে শাপলা,শালুক,পদ্ম, জুঁই, কেয়া, কাশফুল,শিউলি জবা, কামিনী, মালতি,মল্লিকা, মাধবি, ছাতিম ফুল, ব্ড়ই ফুল, দোলনচাঁপা, বেলি জারুল, কামিনি, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, জয়ন্ত্রী, শ্বেতকাঝন, রাধুচূড়া, স্থল পদ্মা, বোগেনভেলিয়াসহ নানা রকমের কত ফুলে হেসে ওঠে প্রকৃতী।
শাপলা:
এ সময়ে পুকুর, ডোবা, হাওর, বিল সব জায়গায় ফুটেছে শাফলা ফুল। শাপলা কন্দজাতীয় জলজ । বাঁচে বহুদিন । শাপলার কন্দ বা মূল পানির নিচে মাটিতে থাকে। পদ্মের সঙ্গে শাপলার মিল আছে। শাপলার পাতা পানিতে ভাসমান থাকে আর পদ্মপাতা থাকে পানির উপরে। পাতা বড় গোলাকার, বোঁটা লম্বা। ফুল বড়, রঙ সাদা। গাঢ় লাল ও গোলাপি রঙের শাপলা দেখতেও সুন্দর। ফুল ফোটে সারা বছর। ফল ছোট ছোট বীছে ভরা। খৈ ভেজে খাওয়া যায়। শাপলার পরিণত ফলকে ঢ্যাপ বা ভেট বলে। ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁচা ঢ্যাপ খেতে ভালবাসে। এশীয়শাপলার লম্বা ডাঁটা ও ফুল সবজি হিসেবে রান্না করে করে খাওয়া যায়।
কাশফুল:
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি এসেছে শরৎ। কারণ কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক । বাতাসে দোলে মোহনীয় ভঙ্গিমায়। কাশ তৃণ বা ঘাসজাতীয় গাছ। কাশগাছ ৫ থেকে প্রায় ২৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। শরৎকালে কাশের সাদা ও ও রূপালি ফুল ফোটে। কাশফুলের সৌন্দর্যের রুপে মুগ্ধ দর্শক ভিড় জমায় কাশ নদী বা তীরবর্তী এলাকায়। কাশফুলের মাঝখান দিয়ে স্বচ্চ নীল আকাশ দেখাও খুব আনন্দের। আশ্বিন মাসে নদীর চরে সাদা কালফুলের অবারিত বন যেন অজস্র শুভ্র পালক শোভিত উদ্যান। শরতের হালকা বাতাসে যখন সাদা কাশফুল ঢেউয়ের তালে দুলতে থাকে তখন বাংলার প্রতিটি মানুষকে যেন কবি করে তোলে। মোহাবিষ্ট সবুজ ঘাস ফড়িং টিং করে লাফ দিয়ে পড়ে কাশফুলের ডগায় । তখন মিলনের চরম তৃপ্তিতে সদা হারিয়ে যায় সবুজ ঘাস ফড়িং কাশফুলের বনে ।
কাশের ঘাস দিয়ে মাদুর ঘরের ভেড়া ও চাল ছাওয়া যায় । কৃষকের নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যায় । গ্রামের গৃহিণীরা অবসরে তৈরী করেন মাদুরসহ না রকমের বব্যহার্য সামগ্রী ।
কামিনি:
কামিনি ফুটে সন্ধায় ঝরে যায় ভোরবেলা। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় বের হয় কামিনি। ফুল ফুলের গন্ধে চারদিক হয় সুবাসিত। ঝোপ জাতীয় এ ফুলগাছ কেটেছেঁটে আকর্ষণীয় করে তুলা যায়। বাগান সজ্জায় অনন্য । এ ফুল গাছটির আদিনিবাস চিন। শরতের এ সময়ে অনেক বাগানে ফোটে।
শিউলি ফুল:
শরতের রাতে ফুটে শিউলি ফুল। ঝরে যায় ভোরবেলায়। এ জন্য শিউলির ফুটন্ত ফুল দেখার সুযোগ কম লোকরই ঘটে। শেষ রাতে শিউলির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর পর্যন্ত। এ জন্য এর ইংরেজি নাম নাইট জেসমিন এবং হিন্দি ও উর্দুতে একে ডাকা হয় রাতকা রানী বলে। ভোরের শিউলিতলা সাদা ফুলে ভরে থাকে। মনে হয় যেন ফুলের বিছানা। শীতের সময় শিউলির পাতা ঝরে যায়। গ্রীষ্মকালে উজ্জ্বল সবুজ রঙের পাতায় শিউলি তার যৌবনশ্রী ফিরে পায়। সুবাসের জন্য শিউলির যেমন কদর তেমনি গৃহসজ্জা ও মালা গেঁথে কোন বিশেষ জায়গা সাজানোর জন্যও এর সমাদর বেশি। ছোট আকারের বৃক্ষ জাতের আকর্ষণীয় ফুল শিউলির উচুঁভূমির চেয়ে সমতল ভূমিতে চাষ হয় বেশি। পাতায় রঙ ফিকে সবুজ। আকার ডিমের মতো। পাতায় প্রথমে দাঁতালো দেখায় পরে সমান হয়ে যায়। ফুল ছোট রঙ সাদ।
দেখতে কিছুটা জুঁই ফুলের মতো বাসন্তী রঙের বোঁচা ফুলের মাঝখানে দেখা যায়। শরতের শিউলি ফুলকে নিয়ে এ দেশে কাব্যের আর শেষ নেই। শরতে শিউলির উপস্হিতি ভিন্ন বাংলা কবিতার ছন্দ কোন গতিই পায় না। শরতের সকালে হালকা শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের উপর যেন শুভ্র শিউলি ফুল ছড়িয়ে পড়ে, তখন নবদম্পতির বিছানার চাদর বলে মনে হয় ।
জবা:
পাতার অকূতি অনেকটা ডিমের মতো। পাতার চারদিকে করাতের মতো দাত। সম্মুখভাগ সরু। এসময়ে জবা শুধু ফুলবাগানেই নয়, পথের দুধারা কিংবা শহরের লনে সবুজ ঘাসের সঙ্গে হলদে। এটা মোহনী করেছে প্রকূতিকে।
টগর:
ঝাঁকড়া মাথার জন্য টগর গাছ সুন্দর । ডালগুলোঐ সোজা ওঠেনা । বহু শাখা প্রশাখা নিয়ে ঝোপের মতো। বাগানের শোভা বাড়ায় সুন্দর করে ছেঁটে দিল দারুণ ঘন ঝোপ হয়। কলম করে চারা করা যায়। আবার বর্ষাকালে ডাল পুঁতলেও হয় । সমতল ভূমির গাছ টগর পর্বতের প্রত্যন্ত অনজলেও দেখা যায়। বাংলাদের বনে বাদাড়ে টগর এমনিতেই জন্মে । টগরের কান্ডের ছাল ধূসর ভ গাছে পাতা বা ডাল ছিড়লে সাদা দুধের মতো কষ ঝরে বলে একে সিলেটে দুধফুল বলে ডাকে। সারাবছর ফুল ফুটে। থোকা টগরের সূন্দরমুদু গন্ধ হয়। কিন্তু এখ টগরটর গন্দ নেই। ফুল থেকে ফলও হয় । তার মধ্যে ৩ থেকে ৬ টি বীজ হয়। বড় টগর বোঁটে ভোটা এখ ফুট হয়। পাতাও এক ফুট । পৃথিবীতে টগরে ৪০ প্রজাতিন আছে। বাংলাদেশে ও ভারতে মাত্র ৪টি প্রজাতি পাও যায়। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এ গাছে ভারত উপমহাদেশে টগরের গাছ রয়েছে । ঐষুধি কাজেও ব্যবহৃত হয়।
লেখক; সংবাদকর্মী, কলাম লেখক