০১. এখন চলছে কেয়ামতের নিকটবর্তী অজ্ঞতা-অসততার স্বর্ণযুগ। দীন সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ এবং যারা কিছু জানে, তাদের অধিকাংশই অসৎ ও নীচুমনের/সঙ্কীর্ণমনা أشِحَّة। যথেষ্ট না পড়ে লেখালেখি ও পর্যাপ্ত যোগ্যতা অর্জন না করে ‘সেরা’ হওয়ার কুৎসিত প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
০২. দীনি ও দুনিয়াবী যে কোন জ্ঞানে গভীরতা অর্জন অনেক ত্যাগ, কষ্টসাধ্য ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর আর শুধুমাত্র ভাষাগত জ্ঞান যাদের আছে, তাদের অবস্থাও খুব ভালো নয়। যারা একটু বাংলায় লেখতে পারে, তারা আরবীতে লেখতে পারে না। আবার আরবীতে লেখতে পারলে বাংলায় লেখতে পারে না। কারো উভয় ভাষায় লেখার বিরল সৌভাগ্য হলে দেখা যাবে, তিনি পর্যাপ্ত ইংরেজি জানেন না।
০২. মাদরাসায় যতগুলো বেয়াদব দেখেছি, তাদের কেউ ক্লাসে এক নম্বর হওয়াতো দূরের কথা ممتاز ও جيد جداও ছিল না। ফেসবুকের বেয়াদবগুলোর অবস্থাও দেখলাম একই। মূলত বেয়াদবরা একটি হতভাগা গোষ্ঠী। এ বেয়াদব যারা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে জানে না, তাদেরকে আমাদের নবী ছঃ তাঁর উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। من لم يرحم صغيرنا ولم يؤقر كبيرنا فليس منا
০৩. নিজের গান নিজে গাওয়া আমার কাছে অশোভন। মনের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যারা আমার বাহির ظاهر দেখতে চান, তারা দয়া করে আমার ফেসবুক টাইমলাইন ও ওয়েবসাইট ভ্রমণ করে আসুন। ওয়েবসাইটের ঠিকানাqoranbd.info/alegaji.html
০৪. অনেক ত্যাগ ও অর্থব্যয় করে চালু করা আমার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা সত্ত্বেও ইহুদীর ফেসবুকে এসেছি সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে; কোন দল-গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়। লাইক-কমেন্টে আমার কোন লাভ নেই। এতে না আমার আর্থিক সংকট দূর হয়, না আমার অসুস্থতা ভালো হয়। তাই লাইকের কথা মাথায় রেখে কখনও লিখিনিও। তবে কেউ কারো লেখা বা অন্য কিছু পছন্দ করলে, তাতো যে কারো ভালো লাগবেই।
০৫. স্বস্বীকৃত চরমপন্থী ইবনে তাইমিয়া, শায়খে নজদ, সালাফীজম, ইখওয়ানিজম ও উগ্র জিহাদপন্থীদের গঠনমূলক সমালোচনা করায় ইতোমধ্যে যেসব ফহিন্নীর বেয়াদব পোলা আমার উপর অনধিকার চর্চা করেছে, তাদেরকে ব্লক করেছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরো করতে হবে। তাই বেয়াদবদের কাছে আশা করছি, আমার কথা খারাপ লাগলে ওরা নিজেরাই যেন আমাকে ব্লক করে দেয়।
উল্লেখ্য, বেয়াদব প্রকৃতির লোকজন সবখানে ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে। উগ্র জিহাদপন্থীরা সবাই বেয়াদব নয়। ওখানেও ভদ্র পরিবারের অনেক লোক রয়েছে।
০৬. ছাত্রাবাস্থায় আমি আবেদ/ছূফী থাকলেও একসময় উগ্র জিহাদপন্থার কঠোর সমর্থক হয়ে পড়ি। এতে আমার ‘ক্যারিয়ার’ ধ্বংস হলেও তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। কারণ, আমি সত্যের সন্ধ্যানী ছিলাম। দুনিয়ার সম্মান-সম্পদের প্রতি আমার অদম্য কোন লোভ ছিল না। তখনও আমি জিহাদের সাথে সাথে যুহদেরও সমান গুরুত্ব দিতাম। ওই সময় পরম সাহসী লেখার জন্য অনেকে আমাকে ইবনে তাইমিয়ার সাথে তুলনা করেছিল। ২০১৪ সালে উগ্র জিহাদপন্থার বিষফল দায়েশ তথা আইএসের উত্থানের পর আমি দায়িত্ব মনে করে উগ্র জিহাদপন্থার ক্ষতিকর দিককগুলো গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
০৭. সত্যসন্ধানী জ্ঞানীদের কেউ যদি আসালাফ-আকাবিরের শানে বেয়াদবিমূলক আচরণকারী তকফীরি ও তফজীরি দায়েশের داعش ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্য আলকায়েদার সমালোচনা করতে হবে। আর আলকায়েদার সমালোচনা করতে গিয়ে যে কেউ বান্না, কুতুব ও মওদূদীর সমালোচনার সাথে সাথে সালাফিজম/আহলে হাদীছিজমের সমালোচনা করতেও বাধ্য হবেন। আর যারা সালাফিজম/আহলে হাদীছিজমের সমালোচনা করতে বাধ্য হবেন, তারা নিশ্চয় সৌদি শাসকগোষ্ঠীর আদি মিত্র শায়খে নজদ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের সমালোচনাও করতে বাধ্য হবেন। আর যারা শায়খে নজদ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের সমালোচনা করতে বাধ্য হবেন, তারা নিশ্চয় ইবনে তাইমিয়ারও সমালোচনা করতে বাধ্য হবেন।
০৮. একথা সত্য যে, ইবনে তাইমিয়া ابن تيمية (٦٦١ – ٧٢٨ هـ) আধুনিক সালাফিজমের গুরু শায়খে নজদ, আলবানী, বিন বায ও বিন উছাইমীনের মত কম জ্ঞানী ও সঙ্কীর্ণমনা ছিলেন না। যে কারণে আমাদের আলেমদের অনেকে তাঁকে আক্রমণ করা থেকে বিরত ছিলেন এবং আছেন। তবে তাদের কথিত সালাফী ধ্যান-ধারনা গঠনে ইবনে তাইমিয়ার রচনাবলীরই مؤلفات ابن تيمية যে মূখ্য ভূমিকা রয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এ কারণেই তাকে সালাফিজমের আদিগুরু বলা হয়। হাসির বিষয়, বর্তমান সালাফীরা সবখানে শিরক-বেদআত আবিষ্কার করতে করতে এখন কোরআন তেলাওয়াত শেষে صدق الله العظيم বলাকেও বেদআত বলা শুরু করেছেন।
০৯. ইবনে তাইমিয়ার চরমপন্থী চিন্তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। আধুনিক যুগে আল্লামা জাহেদ আল-কওছারী রহঃ ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় লিখে গেছেন। ইবনে তাইমিয়ার আকীদা সম্পর্কে জানতে শায়খ সাঈদ ফূদার الكاشف الصغير পড়া যেতে পারে। منتدى الأصلين ব্লগ aslein.net ও ibnoutaymiyya.com ভ্রমণ করলেও অনেক কিছু জানা যাবে।
১০. ইবনে তাইমিয়া যে কি ছিলেন, তা একটি হাদীছের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে তার ‘নবী ছঃ এর রওজা মোবারক জেয়ারত করতে যাওয়া হারাম’ ফতওয়া থেকে বুঝা যায়। অন্যদিকে নবী ছঃ এর রওজা মোবারক জেয়ারতের ফযীলত সম্পর্কিত যত হাদীছ শরীফ রয়েছে, সবগুলো তার ও সালাফী নামধারী তার প্রেতাত্মাদের মতে নাকি দুর্বল এ বানোয়াট।
১১. যে হাদীছকে ভিত্তি করে এসব লোক নবী ছঃ এর রওজা মোবারক জেয়ারত করতে যাওয়া হারাম ফতওয়া দিয়ে তাঁর শানে বেয়াদবি করছে, তাহলো ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত “তিন মসজিদ; মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকছা ব্যতীত অন্য কোথাও তোমরা ছওয়াবের নিয়তে সফর করিও না” এ হাদীছ। কিন্তু এ হাদীছের বাক্য “অন্য কোথাও”র অর্থ সালাফের সবাই ‘অন্য কোন মসজিদ’ উদ্দেশ্য করলেও ইবনে তাইমিয়া এসে তার অপব্যাখ্যা করেন। তা ছাড়া মুসনদে আহমদের একটি বর্ণনায় ‘অন্য কোন মসজিদ’ শব্দটি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। উগ্র ইবনে তাইমিয়া ও তার নির্বোধ প্রেতাত্মাদের মতে কোন মানুষের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনোদন-পর্যটনের উদ্দেশ্যে যে কোন জায়গায় সফর করা জায়েয হলেও নবী ছঃ এর রওজা মোবারক জেয়ারত করতে যাওয়া জায়েয নেই; হারাম ও বেদআত। মদীনা শরীফে কেউ যেতে চাইলে তাকে নাকি শুধুমাত্র মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের নিয়তেই যেতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে সৌদি নজদী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিতরণ করা হজ গাইডের উর্দূ-বাংলা দুটোর কোন একটি দেখা যেতে পারে।
১২. উপরোল্লিখিত জঘন্য ও মালাউন মার্কা ফতওয়ার প্রেক্ষিতে কেউ যদি ওয়াহাবী তথা সালাফীদেরকে নবী ছঃ এর দুশমন ভাবে, তাহলে তা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। তবে সব না হলেও কিছু কিছু ওয়াহাবী যে নবীঃ এর দুশমন, তা আমি ওদের নিয়ে পড়া-শোনা করে নিশ্চিত হয়েছি। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ যুগে বিশ্বব্যাপী হকের শ্রেষ্ঠ ঝান্ডাবাহী ওলামায়ে দেওবন্দের সাথে সালাফীদের চিন্তার কোন মিল নেই। সালাফী-ওয়াহাবীদের মতে ওলামায়ে দেওবন্দ فرقة باطلة ফেরকায়ে বাতেলা। كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا “এ এক সাংঘাতিক কথা, যা তাদের মুখ থেকে নির্গত হয়। তারা যা বলে তা মিথ্যা বৈ কিছু নয়।”
হানাফী মযহাব এবং ওলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে সালাফীদের চরম বিষোদগারের বিস্তারিত জানতে অল্পবয়সে ধ্বংস হওয়া বেয়াদব شمس السلفى এর الماتريدية ও جهود علماء الحنفية فى إبطال عقائد القبورية পড়ুন। এ দুটি সালাফী তৈরির ঘুষ ভিত্তিক কারখানা ‘মদীনা ইউনিভার্সিটি’ থেকে প্রকাশিত হওয়া লেখকের মাষ্টার্স ও ডক্টরেট ‘থিসিস’।
আলা হযরত নামে খ্যাত ‘আহমদ রেজা খান’র অনুসারীরা শুধুমাত্র অন্ধবিদ্বেষের কারণেই ওলামায়ে দেওবন্দকে ওয়াহাবী বলে প্রচার করে। অবশ্যই সাধারণ লোকজন ইতোমধ্যে এ মিথ্যাচার প্রত্যাখ্যান করা শুরু করেছে।
১৩. ইবনে তাইমিয়ার কথিত জিহাদের কারণেও অনেকে তার প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তার এ জিহাদ ছিল ১৯৭১ সালের আমাদের দেশের রেজাকারদের জিহাদের মত রাজনৈতিক জিহাদ। মমলূকদের পক্ষ নিয়ে মোঙ্গল বংশীয় সুলতান মাহমূদ গাযানকে কাফির ফতওয়া দিয়ে তিনি জিহাদের যে বুলি আওড়িয়েছেন, তা ছিল একান্তই রাজনৈতিক। সুলতান মাহমূদ গাযান কেমন ছিলেন, তা এক সৌদি সালাফী سلطان بن عبدالرحمن العميري এর বক্তব্যে দেখুনঃ
“حين توجه غازان – أحد ملوك التتار الذين اعتنقوا الإسلام – إلى الشام وقصد غزوها توجه إليه ابن تيمية مع عدد من علماء المسلمين ووجهائهم يحذرونه من مغبة فعله , وكان مما قال له ابن تيمية :” أنت تزعم أنك مسلم ومعك مؤذنون وقاضٍ وإمام وشيخ على ما بلغنا , فغزوتنا وبلغت بلادنا على ماذا ؟! وأبوك وجدك هلاكو كانا كافرين وما غزوا بلاد الإسلام، بل عاهدوا قومنا، وأنت عاهدت فغدرت , وقلت فما وفيت”. وحذره من قتل المسلمين وأخذ أموالهم , وحين قدّم لهم الطعام أبى ابن تيمية الأكل منه , فقيل له : ألا تأكل ؟! فقال : كيف آكل من طعامكم وكله مما نهبتموه من أغنام المسلمين , وطبختموه بما قطعتموه من أشجارهم . وكان في أثناء حديثه لغازان يرفع صوته ويقترب منه حتى كادت ركبته تلاصق ركبة السلطان يحذره ويخوفه , فخافه السلطان وأنصت له , وحين خرجوا منه عنده قال له أصحابه :” كدت تهلكنا وتهلك نفسك” . هكذا يضرب ابن تيمية أروع الأمثلة في مواجهة الأمراء المستخفين بأموال المسلمين ودمائهم”.
(موقع “صيد الفوائد”، مقال بعنوان ” بطولات ابن تيمية في جهاد أعداء الإسلام”).
এখানে দেখা যাচ্ছে, কুফরের ফতওয়া আরোপ করা সত্ত্বেও সুলতান মাহমূদ গাযান ইবনে তাইমিয়াকে আপ্যায়নের চেষ্টা করছেন। শায়খ বিন বায ও বিন উছাইমীনের পছন্দের সৌদি সরকার তাদের বিরোধীদের উপর কি নিষ্ঠুরতা চালায়, তা আলকায়েদার লোকজন ছাড়াও সাধারণ সৌদিরাও জানে। অথচ একজন মিসকিন ইবনে তাইমিয়া একজন প্রতাপশালী মোঙ্গল রাজাকে জনসম্মুখে জালেম-লুটেরা বলেও খাওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হচ্ছে। এখানে ইবনে তাইমিয়ার কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে, সুলতান মাহমূদ গাযান নামাযী ছিলেন। তার কথা থেকে আরো অনুমিত হচ্ছে, ইচ্ছামত আইন তৈরি করলেও সুলতান মাহমূদ গাযান এ যুগের সৌদি রাজা ও তাদের মিত্র মিসরের মোবারক, সিসী, তিউনিশিয়ার বেন আলী, লিবিয়ার একনায়ক গাদ্দাফী প্রমুখ থেকে অনেক ভালো ছিলেন।
১৪. ইবনে তাইমিয়ার করুণ মৃত্যু হওয়ায় অনেকে তাকে মজলুম আখ্যা দিয়ে হাইলাইট করার চেষ্টা করছে। ওই জাহিল-মজহুলরা জানে না, তিনি কি কারণে গ্রেফতার হয়ে জেলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তার অনুসারীদের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, তিনি উগ্রপন্থী কথাবার্তা বলায় আলেমদের সম্মতিক্রমে সর্বমোট সাতবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। শেষের বার তিনি আফসোসরত অবস্থায় দামেস্কের কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তিনি নবী ছঃ এর রওজা মোবারক জেয়ারত করতে যাওয়া হারাম ফতওয়ায় إصرار করার কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
১৫. ইবনে তাইমিয়ার ব্যপারে তার সমকালীন ও পরবর্তী আলেমদের মতামত বিভিন্নভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তার অন্ধভক্তদের মত তিনি شيخ الإسلام ইসলামের মহান ব্যক্তি। তার অন্ধবিদ্বষীদের মতে তিনি شيخ الزندقة ধর্মের মহা অপব্যখ্যারী। তবে অধিকাংশের মতে তিনি شيخ التشدد ধর্মীয় চরমপন্থার গুরু, যার ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। আমি শেষোক্ত মতে বিশ্বাসী। তাকে নিয়ে قصة شيخ التشدد العلامة ابن تيمية ও آراء العلماء فى ابن تيمية শিরোণামে আমার দুইটি আরবী প্রবন্ধ রয়েছে। আমার টাইমলাইন ও সাইট উভয় জায়গায় গিয়ে তা পড়া যাবে।
১৬. জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ইবনে তাইমিয়া আল্লাহর দীন নিয়ে অসার তর্ক-বিতর্কে জীবন ধ্বংস করায় আক্ষেপ করে গেছেন। বিগত ০৯ জুন ২০১৫ এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বিখ্যাত সৌদি চিন্তাবিদ আল্লামা سلمان بن فهد العودة সালমান বিন ফাহাদ আল-ঊদা। তিনি লিখেছেনঃ
راقتني كلمة نقلها ابن رجب عن ابن تيمية أنه حين سجن في القلعة في آخر حياته ندم! (ندمت على تضييع أوقاتي في غير معاني القرآن) ذيل طبقات الحنابلة (٢/٤٠٢).
“ইবনে রজব হাম্বলী ابن رجب الحنبلى (736 هـ – 795 هـ) সঙ্কলিত একটি কথা আমার খুব ভালো লেগেছে। ইবনে তাইমিয়া জীবনের শেষের দিকে যখন কিল্লা কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন, তখন অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আমি কোরআনের অর্থ উপলব্ধির বাইরে আমার সময়গুলো নষ্ট করার জন্য অনুতপ্ত।’ (যাইলু তবকাতিল হানাবিলাঃ খন্ড-২, পৃষ্টা-৪০২)
১৭. ইবনে তাইমিয়ার ব্যপারে ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী العسقلانى বলেছেনঃ
“ومنهم ( أي من العلماء ) من ينسبه إلى النفاق لقوله في عليّ ما تقدم ولقوله أنه كان مخذولاً حيثما توجه ، وأنه حاول الخلافة مراراً فلم ينلها وإنما قاتل للرياسة لا للديانة ، ولقوله أنه كان يحب الرياسة وانّ عثمان كان يحب المال ، ولقوله أبو بكر أسلم شيخاً يدري ما يقول وعليّ أسلم صبياً والصبي لا يصح إسلامه”.
১৭. ইবনে তাইমিয়ার ব্যপারে ইমাম ইউসুফ নবহানী النبهانى বলেছেনঃ
“اعلم أني اعتقد في ابن تيمية وتلميذيه ابن القيم وابن عبد الهادي أنهم من أئمة الدين وأكابر علماء المسلمين وقد نفعوا الأمة المحمدية بعلمهم نفعاً عظيماً وإن أساءوا غاية الإساءة في بدعة منع الزيارة والإستغاثة ، وأضروا بها الإسلام والمسلمين أضراراً عظيمة ، وأُقسم بالله العظيم إني قبل الإطلاع على كلامهم في هذا الباب في شئون النبي صلى الله عليه (وآله) وسلم لم أكن أعتقد أن مسلماً يجترئ على ذلك، وإني منذ أشهر أتفكر في ذكر عباراتهم فلا أتجاسر على ذكرها ولو للرد عليها خوفاً من أن أكون سبباً في زيادة نشرها لشدة فظاعتها”.
১৭. ইবনে তাইমিয়ার ব্যপারে ইমাম জাহেদ আল-কওছারী الكوثرى الحنفى বলেছেনঃ
“ولو قلنا لم يبل الإسلام في الأدوار الأخيرة بمن هو أضر من ابن تيمية في تفريق كلمة المسلمين لما كنا مبالغين في ذلك”.
আল্লাহ আমাদেরকে ইবনে তাইমিয়া ও শায়খে নজদসহ পুরাতন-নতুন সকল চরমপন্থী থেকে মুক্ত রেখে ইমাম গাজালী, ইমাম জিলানী, ইমাম নবভী, ইমাম সুয়ূতী, ইমাম থানবীসহ মধ্যপন্থার অনুসারী সকল আসলাফে উম্মত ও আকাবিরের পথ ধরে জীবন পরিচালনা করার তৌফীক দান করুন। আমীন।
আবুল হুসাইন আলেগাজী
১৩. ১০. ২০১৫