Friday 22nd November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: সকাল ৬:৩৬
Home / খোলা জানালা / প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্যনৈমত্তিক রুটিন ওয়ার্ক!

প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্যনৈমত্তিক রুটিন ওয়ার্ক!

Ahsan Bin Komashisa
এহসান বিন মুজাহির ।।

সম্প্রতি দেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে! প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগেও বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। গত এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট গুণী ও শিক্ষাবিদগণ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় দৈনিকে ধারাবাহিক কয়েকটি কলামও লেখেছেন। শাবির অধ্যাপক জাফর ইকবাল তার স্ত্রীসহ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন যা দৈনিক বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার কল্যাণে দুনিয়াবাসি দেখেছেন।
অতীত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এ সরকারের আমলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন এখন একটি নৈমিত্তিক রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি যে হাল আমলের সমস্যা এমন নয়। রাষ্ট্রপতি এরশাদসহ চারদলীয় জেট সরকার আমলের আগেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিলো! এরশাদ সরকারের আমলে দশম বিসিএস পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের কারণে স্থগিত করা হয়েছিলো। বিএনপি জোট সময়েও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিলো। তবে বর্তমান সরকারের আমলের মতো নয়! শুধু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নয়! বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্যনৈমত্তিক রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়ে গেছে!
পত্রিকা সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে মহামারী আকারে ধারণ করেছে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় নিয়মিতভাবে ঘটে চলেছে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা।
বিগত কয়েক বছরে শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি জর্জরিত এবং কলঙ্কিত হয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের কেলেঙ্কারিতে। শিক্ষামন্ত্রী নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে গত পাঁচ বছরে প্রায় সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের রেকর্ড সম্পন্ন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার মান। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও অস্থিরতা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগের রাত থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। পত্রিকা সুত্রে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানায় মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে পরীক্ষা বাতিল করা হবে না এবং মঙ্গলবার থেকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষারয় প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস-কে কেন্দ্র করে গত ১১ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে দেশে আবারো চরম অশান্তি-অস্থিরতা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ঢাবি ক্যম্পাস, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-শহরে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রিরা মিছিল-মানববন্ধন, প্রতিবাদ, সমাবেশসহ নানাভাবে শান্তিুপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন পালন করে শিক্ষার্থীরা।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন পরীক্ষার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, প্রেসক্লাব চত্বর, শাহবাগসহ
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করে। গত
২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ক্ষোব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিশাল মানববন্ধন করে। এসময় দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে চট্রগ্রাম নগরী প্রকম্প্রিত করে তকুলেছে। ‘ফাঁসকৃত পরীক্ষায় ডাক্তার হলে, রোগী মরবে গণহারে’, ‘প্রশ্ন যদি হবে ফাঁস, পড়বো কেন বারো মাস’, ‘শিক্ষার্থীদের শ্রম, মেধা, স্বপ্ন ও যোগ্যতা নিয়ে আর কত ছিনিমিনি’, ‘শিক্ষা কারো বাপের মাল নয়, অর্থ দিলে সব হয়’, ‘প্রশ্ন ফাঁস বারো মাস, এই আমাদের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্লোগান ও লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া রাজধানীর অংশগ্রহণ করে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পুলিশ লাঠিপেটা করেছে যা মিডিয়ার কর‌্যাণে দুনিয়াবাসী দেখেছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশী বাঁধা, নির্যাতন! সমাবেশ, বিক্ষোভ থেকে ছাত্র-ছাত্রিদের আটক! আজিব দেশে আমরা বাস করছি!
মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে দেশে এমুহুর্তে আন্দোলনের মাঠ দখল করে রেখেছে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-‘মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস’ হয়েছে যা জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রমাণসহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে! মেডিকেল পরীক্ষা ফাঁসকৃত প্রশ্নে নেওয়া হয়েছে এটি দেশবাসীর কাছে পরিস্কার। সরকার বরাবরের ন্যায় এবারও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রশ্ন ফাঁসের হোতাদের ধরতে র‌্যাবে অভিযান সফল হয়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দুদিন আগে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন ইউজিসি কর্মকর্তা, তিন চিকিৎসকসহ ১১ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃত তিন চিকিৎসক হলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর হোসেন, সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার শরিফুল ইসলাম ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। অন্য চারজন হলেন রংপুরের প্রাইমেট কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল রহমান, এ ওয়ান কোচিং সেন্টারের কর্মকর্তা জামিল উদ্দিন ও আতিকুর রহমান এবং সাজরাতুল ইয়াদিন রানা।
পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দু’দিন আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহাখালী থেকে ৪ জনকে এবং ২২ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজের ৩ জন ডাক্তারসহ ৭ জনকে আটক করে র‌্যাব। ‘ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের’ পাশাপাশি আটককৃতদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা এবং ১ কোটি ২১ লাখ টাকার ১৩টি চেক জব্দ করা হয়েছে। যা পরদিন জাতীয় দৈনিক কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছে দুটি মডেল টেস্টের ৮৮টি প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পেয়েছে র‌্যাব জানিয়েছে।
গতকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের র‌্যাব ও পুলিশ আটক করে আদালতে হাজির করেছে। বিজ্ঞ আদালত আটককৃত ব্যক্তিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিবৃতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অযৌক্তিক নয়! প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেয়া থেকে বিষয়টি দেশবাসির কাছে আরো বেশি পরিস্কার হয়েছে। সরকার তাদের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপক্ষো করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছ পা হবে না এমন হোশিয়ারিও দিয়েছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে পরীক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রমাণসহ প্রকাশিত হওয়ার পরেও তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ এটা প্রকৃতপক্ষে দোষীদের সুরক্ষা দেয়া এবং অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়ারই নামান্তর বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসকগণ ও গুণীজন!
সর্বশেষ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে ইতোমধ্যে সোশ্যালরমিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন সমর্থন জানিয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রিদের চলমান আন্দোলনে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন, মেডিকেল শিক্ষক, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ সহমত পোষণ অব্যাহত রেখেছেন। মিডিয়ার কল্যাণে জানা যায়, প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ছিলো ‘যে দেশে পিএসসি, এসএসসি, বিসিএস, মেডিকেলসহ সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়, সেদেশে মেধার মূল্যায়ন হবে কীভাবে। সরকারের মন্ত্রীরা অনেক বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে না। সারাবছর পড়ালেখা করা কি আমাদের অপরাধ। টাকা থাকলে যদি সবকিছু হয়, তবে মেধা ও শ্রমের কী দরকার। সরকার প্রশ্ন ফাঁসের দায় কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।
তিক্ত হলেও কঠিন সত্য যে এমুহুর্তে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রিদের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। চিন্তার বিষয় যারা দিনে-রাতে ১৮-২০ ঘণ্টা পড়াশোনা করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, তারা আজ পরাজিত অসৎ লোকের অর্থশক্তির কাছে। তাদের স্বপ্নকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাদের স্বপ্ন আর পরিশ্রম বিফল।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগেঅনুষ্ঠিত এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ারও দাবি এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগে বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পদত্যাগ দাবি করেছেন মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা
যেহেতু প্রশ্নপত্র ফাসের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে এবং জড়িতদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সরকারের সহমত থাকা সরকার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর ছিলো। কিন্তু সরকার তা না করে উল্টে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশী নির্যাতন চালাচ্ছে! চরম বাস্তবতা বুঝা সরকারের জন্য উচিত ছিলো। কারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নয়! সরকারের ক্ষমতা ছিনিয়ে আনা বা বিরোধী দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়! নিছক শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নের জন্য আন্দোলন।
জাতিকে মেধাশুন্য করারর জন্য প্রশ্ন ফাঁসই যথেষ্ট! ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা মানে হলো দেশে মেডিক্যালসহ উচ্চ শিক্ষার মান পদদলিত করা! প্রশ্নফাঁস ভেঙ্গে দেয় জাতির মেরুদণ্ড। নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রি। কিন্তু সমাজে ভদ্রতার মুখোশধারী কিছু দুর্বৃত্ত তাদের সে স্বপ্নকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিল। প্রশ্নফাঁস নিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা। শিক্ষার মান আজ সবার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ! প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয় না বলেই বার বার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে!
অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করলে তারা অদক্ষ- অযোগ্র ডাক্তার হবে, এমন মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ শিক্ষকসহ বিভিন্ন খ্যাতিমান চিকিৎসকগণ! জাতি অনভিজ্ঞ ডাক্তার নয়, চায় বিজ্ঞ ডাক্তার! প্রশ্ন ফঁসের পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হলে ক’জন বিজ্ঞ ডাক্তার হরেবন এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ডাক্তার পাড়ায়!
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সুযোগে অবৈধ উপায়ে মেধাহীনরা ভর্তির সুযোগ পেলেও যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীরদের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বাদ পড়লে ডাক্তারপাড়ায় চরম-উদ্বেগ ও ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাবে! এরকম হলে চিকিৎসা জগত দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশ- জাতি সীমাহীন সংকটের মুখোমুখি হবে। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ কোনোভাবেই উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কাজেই দেশে বিজ্ঞ ডাক্তার তৈরী করতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ন্যায়্য ও যৌক্তিক দাবি ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ শিগগির ঘোষণা করা সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে অগ্রাহ্য করে তাদের উপর নির্যাতন চালানো দেশ ও শিক্ষার জন্য কল্যাণকর নয়! প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষার জন্য যেমন সীমাহীন ক্ষতির কারণ তেমনি দেশের জন্য সীমাহীন দুনার্মের। আমরা আশাবাদি সরকারের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, এখনো সময় আছে। তদন্ত করুন, সত্য উদ্ঘাটন করুন।
দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে এই মহামারী কেউ থামাতে পারবে বলে মনে হয় না! প্রশ্ন ফাঁস হওয়া পরীক্ষা নিয়ে পরিশ্রমি, উদ্যম মেধাবী তরুণ-তরুণীরর গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলাবেন না! অনতিবিলম্বে পুনরায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

এহসান বিন মুজাহির, সাংবাদিক, কলামিন্ট

Check Also

atheist

নাস্তিকতার মূলে রয়েছে ইসলাম বিদ্বেষ। (শেষ পর্ব)

মাসুম আহমদ ::  ১ম পর্বের পর : ইসলাম শব্দ থেকেই স্পষ্ট হয় ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ ...