শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৪৬
Home / আমল / হযরতজী ইলিয়াস রাহ. এবং সিলেট ইজতেমা

হযরতজী ইলিয়াস রাহ. এবং সিলেট ইজতেমা

ইলিয়াস মশহুদ :

বাংলাদেশে তাবলিগ আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৪ সালে। সে হিশেবে এবারের টঙ্গীর ইজতেমা হবে ৭২তম। সুদীর্ঘ সাড়ে তিন যুগ ধরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল থেকে একসাথে এতো ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্কুলান না হওয়ায় দু’পর্বে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায়ই আগামি ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
‘তাবলীগ’ অনুসারীদের একটি বৃহত্তম সমাবেশ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো, প্রচার করা, প্রসার করা, বয়ান করা, চেষ্টা করা, দান করা ইত্যাদি। পরিভাষায় একজনের অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানোকে তাবলিগ বলে। তাবলিগ আদর্শ যিনি পৌঁছান, তাকে মুবাল্লিগ বলে। বিশ্বনবী সা. এ প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে একটিমাত্র বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’
বর্ণিত আছে যে, আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতেগোনা ক’জন মানুষ নিয়ে হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবী রাহ. তাবলিগের মেহনত শুরু করেন। তাবলিগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আজকের তাবলিগ জামায়াতের সার্থক রূপকার হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবী রাহ. ১৩৫১ হিজরি সনে হজ থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি মহানবী সা. কে স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী সা. তাকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবীর সা. নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সূচনা করেন। তারপর এ কাজকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুযূর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিল্লীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধালবী রাহ. এ কর্মপ্রয়াসকে তখন বলতেন ‘ইসালে নফস’ বা আত্মশুদ্ধির প্রাথমিক পাঠ। প্রথমত তিনি টেস্ট কেস হিসেবে ভারতের সাহারানপুর ও মেওয়াত এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি ৬টি বিশেষ গুণ অর্জনের মেহনত করেন জনসাধারণ্যে। সেই  বিশেষগুণ হলো- কালেমা, নামায, ইলিম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের সেবা) সহীহ্ নিয়ত ও তাবলিগ। অন্য একটি গ্রন্থসূত্রে জানা যায়, ইলিয়াস রাহ. প্রথমে বর্তমান ধারার এ তাবলিগকে নাম দেন ‘তাহরীকুস সালাত’ বা নামাযের আন্দোলন।
এরপরই ক্রমেই তাবলিগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গ-ি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ রাহ.’র মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলিগ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সলে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলিগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, তাবলিগ জামায়াতের সদর দফতর দিল্লীতে থাকা সত্ত্বেও এর বার্ষিক সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। কথিত আছে, তাবলিগ জামায়াতের মুরুব্বিদের বৈঠকে ইজতেমার স্থান নির্ধারণের জন্য নাকি লটারি হয়েছিল, সেই লটারিতে বাংলাদেশের নাম ওঠে। আর সেই থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ এ বিশ্ব ইজতেমা। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং পাকিস্তানের রায় বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়।
কথিত আছে, ইলিয়াস রাহ. প্রথম যখন মানুষের কাছে ধর্মীয় প্রচার শুরু করেন, তখন তেমন কোনো সাড়া মিলেনি। তাই তিনি অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি আশপাশের দিনমজুর, শ্রমিক-কৃষকদের ডেকে এনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রেখে দু’বেলা খাবার দিতেন এবং তাদেরকে নামায শিক্ষা দিতেন, নামাযের সুরা শিখাতেন, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ বর্ণনা করতেন। অবশেষে বিদায় বেলা তাদের প্রত্যেককে মজুরি তথা পারিশ্রমিক দিয়ে দিতেন। এ পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হলো। অল্প সময়ের ব্যবধানেই তার নামাযের আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেল। মানুষ তখন নিজেরাই অর্থ ব্যয় করে ইলয়াস রাহ.’র পদাঙ্ক অনুকরণ করে দাওয়াতী কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
যখন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রচেষ্টা শুরু হয়, তখন এর নাম ছিলো শুধুই ইজতেমা। যা অনুষ্ঠিত হতো ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। ১৯৬৪ সালে কাকরাইলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইজতেমা শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে এগুতে এগুতেই আজকের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা। যে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় একশটি রাষ্ট্রের তাবলিগ প্রতিনিধিরা। শিল্পনগরী টঙ্গীতে ইজতেমাকে স্থানান্তরিত করা হয় ১৯৬৬ সালে। আর সে বছর থেকেই তাবলিগ জামাতের এই মহাসম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামে খ্যাতি অর্জন করে। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মিলন হজে যেমন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের মুসলমানদের সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের অভাবনীয় নজির দেখা যায়, বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায়ও দেখা যায় মুসলিম ঐক্যের অপূর্ব এক মিলনমেলা। এর ফলে পুণ্যভূমি মক্কা-মদিনার পর তুরাগ তীরে অবস্থিত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা পরিচিতি লাভ করে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিলনকেন্দ্র হিশেবে।
বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী। বর্তমানে দু’পর্বে ছয়দিন। কিন্তু টঙ্গীতে এর আমেজ থাকে প্রায় মাসখানেক। আর এ ইজতেমার প্রস্তুতি তো তিন/চার মাস আগ থেকেই শুরু হয়ে যায়। সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত তাবলিগ আন্দোলনকে বিশ্বের সবচে’ বড় ইসলামি আন্দোলন বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের কোটি কোটি মুসলমান এ আন্দোলনে সময় বিনিয়োগ করে থাকেন।
যতটুকু জানা যায়, ইজতেমা নিয়ন্ত্রণকারী তাবলিগ জামাতের কোনো সংবিধান নেই। অলিখিত সংবিধানও নেই। তারপরও এ আন্দোলন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং সুশৃঙ্খল আন্দোলন। তাবলিগ জামাতের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। এটিকে বলা হয় মজলিসে শুরা। এ কমিটির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। ২১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও বহু ব্যক্তি এ কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাবলিগে যারা অপেক্ষাকৃত বেশি অবদান রেখেছেন, তারাই এ কমিটির আলোচনায় কথাবার্তা বলেন। তবে কে কতো বেশি অবদান রেখেছেন, তা’ নির্ধারণের কোনো মাপকাঠি নেই। তাবলিগ আন্দোলনে ক্ষমতা বা পদমর্যাদার কোনো প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিদ্বন্ধিতা নেই। নেতৃত্বের কোন্দল নেই। যিনি একবার কেন্দ্রীয় শুরায় আমির নির্বাচিত হন, তিনি আমৃত্যু সে পদ অলঙ্কৃত করেন। তাবলিগ অনুসারীরা তাদের আমিরকে সম্বোধন করেন ‘হযরত জী’ বলে। ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশ তাবলিগ জমাতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা হেড কোয়ার্টার।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস রাহ. ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামি দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মেলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। বাংলাদেশে ১৯৫০’র দশকে তাবলিগ জামাতের প্রচলন করেন মাওলানা আবদুল আজিজ রাহ.। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। পুরো সমাবেশের আয়োজন করে থাকেন একঝাঁক ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক। আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তারা এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন।
পুরো সমাবেশস্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ; যা বাঁশের খুঁটির উপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধুমাত্র বিদেশী মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা ও পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান সনাক্ত করেন।
তবে এবার তাবলিগের কেন্দ্রীয় শূরার পরামর্শ ও সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে তাবলিগের বিভাগওয়ারি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেসব বিভাগে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে, সেসব বিভাগের তাবলিগ প্রিয় মুসল্লিরা এবার টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ইজতেমায় শরীক হতে পারবেন না। তারা আগমি বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ২৫ বছর পর তাবলিগ জামাতের সিলেট বিভাগের ইজতেমা আগামি ২৯, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক সংলগ্ন লতিপুর, খিদিরপুর এলাকার হাওরের মাঠে। তার আগে ১৯৬৫ ও ১৯৮৪ সালে সিলেট জেলার সুরমা নদীর দক্ষিণ তীর সংলগ্ন টেকনিক্যাল মাঠে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবার আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন ইউসূফ জি রাহ.  এবং দ্বিতীয়বার মোনাজাত আখেরী করেন এনামুল হাসান রাহ.। দীর্ঘ ২৫ বছর পর সিলেটের পূণ্যভূমিতে ইজতেমার আয়োজনে ব্যস্থ সময় পর করছেন সিলেটের মারকাজ মসজিদের মুরব্বীরা। এমনটি বলছিলেন সিলেট তাবলিগ জামাতের সিলেটের আমীর মোঃ সুয়েজ আফজাল খান।
ইজতেমা নিয়ে প্রতিটি মসজিদে তাবলিগ জামাতের সিলেট জেলার সকল হালকার ৩ চিল্লার সাথীসহ নতুন ও পুরাতন সাথীগন ইজতেমার দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেটে তিন দিনের ইজতেমায় বয়ান করবেন ভারতের দিল্লি ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদের তাবলিগ জামাতের মুরব্বীরা। বিশ্ব ইজতেমায় যারা বয়ান করে আসছেন সাধারণত তারাই সিলেটের ইজতেমায় বয়ান করবেন। আখীরাতের দাওয়াতের কাজে অবিজ্ঞ নতুনদেরও বয়ান দেয়ার সুযোগ দেয়া হতে পারে। তবে শেষ দিন আখেরী মোনাজাত কে করবেন এখনও নির্ধারণ (মাশওয়ারা) হয়নি।
সিলেট বিভাগের চার জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার থেকে মুসল্লিগণ ইজতেমার জন্য জমায়েত হবেন। চার লাখের অধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগম যাতে হয় সেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাবলিগের মুরব্বী ও সাথীরা। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন সিলেট ইজতেমায় আল্লাহ ও নবীপ্রেমী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামবে।
মহিলাদের পৃতক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ইজতেমায় মহিলাদের অংশগ্রহণ কড়াকড়িভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইজতেমার আদব রক্ষার্থে অনুরোধ জানানো হয়েছে মহিলারা যেন ইজতেমার ময়দান বা তার আশেপাশে না আসেন। যার যার ঘরে অবস্থান করেন।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য বিশাল মাঠে সাজানো হচ্ছে প্যান্ডেল। মাঠে ১১টি খিত্তা থাকবে। এ ছাড়া মাঠের দক্ষিণ পাশে ৫ থেকে ৬ হাজার মুসল্লি যাতে একসঙ্গে অজু করতে পারেন, সেজন্য থাকবে বিশাল অজুখানা। এই অজুখানা ছাড়াও আরও ৩৫ থেকে ৪০টি ছোট অজুখানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাঠের একপাশে অন্তত ২ হাজার শৌচাগার থাকবে; ৫টি গভীরসহ ১৫টি নলকূপ বসানো হবে।
তাবলীগ জামাতের দীনের কাজে নিয়োজিত চিল্লার সাথীদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ঢাকা টংগীতে বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামায় দু’বারে বিশ্ব ইজতেমা পালনের আয়োজন করা হয়। তার পরও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিভাগভিক্তিক ইজতেমার আয়োজন করার নির্দেশ দেন তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বীরা। সে মুতাবেক বিভাগভিত্তিক ইজতেমার আয়োজন প্রথমে সিলেট থেকেই শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগে ইজতেমাও অনুষ্ঠিত হবে।
তাবলিগ জামাতের একাধিক সাথি ও কর্মী জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে দু’ধাপে ৩২টি জেলার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তুরাগ তীরের এক সপ্তাহ আগে সিলেটের ইজতেমা হওয়ায় অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলেটের ইজতেমায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি মুসল্লিরও সমাগম ঘটবে জানিয়ে তারা বলেন, আল্লাহর নামে কোনো কাজ শুরু করলে তা আটকে থাকে না। এর কারণ হচ্ছে, সিলেটের তাবলিগের মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেটে তিন দিনের ইজতেমা আয়োজন করার। এ জন্য কোনো সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। কোনো টাকার ব্যবস্থা ছাড়াই ইজতেমার মাঠের কাজ শুরু হয়। আল্লাহর নামে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সিলেটের প্রায় সব কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক সহযোগিতা করছেন। কোনো শ্রমিক টাকায় আনা হয়নি। মানুষ নিজ উদ্যোগে শ্রম দিয়ে ইজতেমার মাঠ মুসল্লিদের জন্য করে দিচ্ছেন।
ইজতেমা উপলক্ষ্যে আশপাশের এলাকায় ভিন্ন রকম এক খুশির আমেজ বিরাজ করছে। বসানো হচ্ছে বিপুলসংখ্যক দোকান। বসেছে রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন খাবার দোকান। স্থানীয়রা বলছেন, ওই এলাকায় এবার ইজতেমা হওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা ভালো হবে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...