—————————-
সুন্দর কথা, ভালো কথা, সুবচন সকল মানুষের প্রিয়। অবুঝ একটি শিশু ও সুন্দর কথা শুনলে মিটমিটে হাসে। ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকলে বন্ধ করে তার ক্রন্দন। বড়দের তো সুন্দর ও সুবচন শুনলেই কত যে ভালো লাগে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সব মানুষই সুন্দর কথা প্রত্যাশা করে অন্যের কাছে। প্যাচাল কথা, মন্দ কথা কেউ শুনতে চায় না। আলকুরআনে বিভিন্নভাবে ভালো কথা, সুন্দর কথা, সহানুভুতি ও নম্রভাবে কথা বলার জন্য মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। আমাদের মহানবী (স 🙂 মানুষের সাথে সুন্দর ও নম্র ভাষায় কথা বলতেন। তিনি ছিলেন সুভাষী। তিনি যেখানেই কথা বলতেন সেখানেই ফুঠে উঠতো রাশি রাশি ফুলের হাসি। তার কথার ভঙ্গিতে গড়ে উঠতো স্নিগ্ধময় পরিবেশ। মহানবীর কথা শুনলে শ্রোতার মনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো। তিনি কখনো মন্দের জবাবে মন্দ বলেন নি। যেকোনো মানুষ তার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতো। এজন্য তিনি ছিলেন সব মানুষের সেরা। সব মানুষের প্রিয়। দলমত নির্বিশেষে তাকে প্রানভরে ভালবাসতো।
মানুষের সেরা যতসব গুণ আছে, তন্মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হলো অন্যের সাথে সুন্দর করে কথা বলা। যেসকল বক্তা সুন্দর করে বলতে পারেন, যে সকল লেখক সুন্দর কথা দিয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে লিখতে পারেন তারাই অতি সহজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তাদের আলাদা একটা মর্যাদা লক্ষ্য করা যায়। তারা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন। তাদের কথা বা লেখায় মানুষের মনোকষ্ট দূর হয়, হতাশা নিরাশা এমনকি দুশ্চিন্তা দূর হয়, মন সচেতন হয়, ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হয়, শত্রুতা কেটে গিয়ে বন্ধুতে পরিনত হয়, রাগ নিভে গিয়ে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য গড়ে উঠে, ঐক্যের বন্ধন গড়ে উঠে।
ভালো মানুষ হতে হলে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কথা বলতে হয়। তাই আমরা যারা ভালো মানুষ হতে চাই আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে উত্তম নমুনা পেশ করা চাই। মন্দ কথা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র সবকেই ধ্বংস করে ফেলে। একটি মন্দ ও অসুন্দর কথার কারণে একটি সুন্দর ও সুখী পরিবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটি অসুন্দর কথার কারণে মা-বাবার অবাধ্য সন্তান হয়ে যেতে পারি। একটি অসুন্দর কথার কারণে একটি আন্দোলন মাঝপথে আটকে যেতে পারে। দেশের একজন দায়ীত্বশীল মন্ত্রীর একটি অসুন্দর কথায় রাষ্ট্রের অনেক অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
অসুন্দর কথায় মানুষ অসুন্তষ্ট হয়, পারস্পরিক ঘৃনা বিদ্ধেষ সৃষ্টি হয়, সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ছিন্ন হয়, বন্ধুত্ব বিনষ্ট হয়, ঐক্যের ফাটল ধরে, অশান্তি ও অস্তিরতা সৃষ্টি হয়। অসুন্দর কথা থেকে সাহাবায়ে কেরাম কঠোরভাবে আত্মরক্ষা করতেন। শ্রেষ্ট মনীষী যারা তারা অসুন্দর ও মন্দ কথাকে সার্বক্ষনিক এড়িয়ে চলতেন। মোটকথা মানুষের কাছে প্রিয় হতে হলে অসুন্দর ও মন্দ কথা আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। সুন্দর কথা ছাড়া মানুষের প্রিয় হওয়ার উপায় নেই। সমাজে কে না চায় প্রিয় হতে। তবে এ সমাজে সবাই প্রিয় হতে পারে না। তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, জীবন চলার পথে সুন্দর কথা অনুপস্তিত। সুন্দর কথা বলতে বা লিখতে হলে সুন্দর মন থাকা জরুরী। অসুন্দর মন থেকে কখনো সুন্দর কথা বের হয় না। সবার মন সুন্দর হওয়া চাই। মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। মন থেকে মুছে ফেলতে হবে সব অসুন্দরের বীজ। অজ্ঞতা, অন্ধতা, গোড়ামী, হিংসা-বিদ্ধেষ, অহংকার, লোভ- লালসা, নির্মমতা- নিষ্ঠুরতা, স্বার্থপরতা – অভদ্রতা এসব অসুন্দর বিষয়গুলো মনকে কলুষিত করে রাখে। যার মনের মাঝে এগুলো বিদ্যমান তার মন কখনো সুন্দরের আশা করা যায় না। আর মন সুন্দর না হলে কথা বা লেখা ও সুন্দরের আশা করা যায় না। একটি সত্য, সুন্দর ও সোনালী সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সবার মন সাদা ও সুন্দর হোক এই প্রত্যাশা রাখি।
Check Also
আমাদের আত্মপরিচয় ও ভবিষ্যত ভাবনা
তামিম বিন হামমাদ :: মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলে মানুষ মুসলমান হিসাবে গণ্য হয় ৷ কিন্তু ...