এহতেশামুল হক্ব ক্বাসেমী:
বিয়ে হয়েছে মাস খানেক আগে! পালকি সেজেছে একমাস পরে। সম্ভবত গতকাল ছিলো তার সুখময় জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ, স্বর্গীয় দিন! আজ বরের ওয়ালিমা। পালকির অধিপতি ইলিয়াস মাসহুদ। সে এক নাছুড়বান্দা। অনুষ্ঠানে আমাকে যেতেই হবে। তাই বিলম্বিত বাসরের(?) বরপুত্রের নিমন্ত্রণে আজ জৈন্তা শরীফ রওয়ানা। সঙ্গে আছেন আকা আজাদ, সাকিব -এবাদ সহ কয়েক গুণীজন।
বর-কনের প্রতি শুভ কামনাসহ রইলো একটি ক্বাসিমী ফরমান!
রূহানী ফরমান! কত যে সুন্দর বসুন্ধরা! কত যে মনোরম তার গগণের তারা! কত সুন্দর আকাশ! কত মধূময় তার মৃদুমন্দ বাতাস! জমিন কতইনা উর্বর, কত সরোবর! আকাশ কত যে উদার প্রমাণ দিবাকর! কতযে সুখময় পৃথিবীর স্বাদ! কতযে মায়াবী পূ্র্ণিমার চাঁদ! কিন্তু এই নিখিল বিশ্বের যেখানে আছে যত সৌন্দর্য, সবই যেনো রমনীকুলের দেহে এসে হয়েছে একত্র। কবিগণ তাদের দেহবল্লরীর সৌন্দর্যকে কত যে বিচিত্র ভাষায় চিত্রায়িত করেছেন, কতযে বৈচিত্রময় বাক্য বিন্যাসে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সাহিত্যের সর্বাঙ্গে রয়েছে তাদের সৌন্দর্যের চিত্রায়ন। কবিদের চোখে নারী কখনো বা কাশবনের মৌমাছি। কখনো বা পুষ্পকাননের গেলাপ-চামেলী। কখনো শীতসকালের শিশিরবিন্দু। কখনো বা মৃদুসমীরণের কোমল স্পর্শে নদীবক্ষে উত্থিত লীলায়িত তরঙ্গমালা। কারো নিকট সেতারের রাগ-রাগিনী, কুকিলের কুহুতান। কেউ বলেন, বুলবুলির প্রেমসংগীত। ওহে নারী সালেহা! সত্যিই তুমি নির্জন নিলীমার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পূর্ণিমার রাতের দীপ্তিমান আলোকবর্তিকা। ছলছলো কল্লোলিত ঝর্ণাধারা। তুমি বর্ণবৈচিত্রে সুরভিত সৌরভের শোভিত পুষ্পবাগ। তুমি তোমরা মহান স্রষ্টার সৃষ্টিকুশলতার এক অনন্য উদাহারণ। হে রমনী! তুমি আঁধারের আলোকরশ্মি। তোমার পদযোগল যেখানেই বিচরণ করে সেস্থানই আলোকিত হয়ে ওঠে। তুমি নিজে যেমন সুখে থাকতে জানো, তেমনি অপরকেও সুখে রাখতে পারো। এতে তোমার জুড়ি নেই। তুমি অনুপম। তোমার স্পর্শে সকল বস্তুই হয়ে উঠে আকর্ষণীয়, সবই হয়ে যায় মনোমুগ্ধকর। সকল অমঙ্গলই তোমার পরশে হয়ে ওঠে মঙ্গলময়। দরিদ্রের পর্ণকুঠিরও তোমার করস্পর্শে ঝলমল রাজপ্রাসাদ অপেক্ষা অধিক সৌন্দর্য লাভ করে। কন্টকাকীর্ণ বৃক্ষরাজী পুষ্পশোভায় শোভিত হয়ে যায়। তোমার পরশছোয়ায় এজগৎ ভরে ওঠে সুখ-সুষমায়। হে নারী! তোমার পদপ্রান্থেই পুরুষের সুখাশ্রয়। তুমি যেমন তার জীবনতরীকে তরঙ্গবিক্ষুব্ধ নদী পার করিয়ে সাফল্যের সোনালী তটে ভিড়িয়ে দিতে পারো, তেমনি তাকে মাঝ দরিয়ায় শলীল সমাধিস্ত করে দেওয়াও তোমার পক্ষে অসাধ্য কিছু নয়। তুমি বিনে নরের জীবন অতল সাগরে ভাসমান। দুঃখ-বেদনায় স্বামীর হৃদয়াকাশ যখন হয়ে উঠে তিমিরাচ্ছন্ন, তখন তুমিই তার আঁধারঘেরা আকাশ উজ্জ্বল করে উদিত হও। তুমি চাইলে সুখের সংসার যেমন দুঃখের আগুনে জ্বালিয়ে দিতে পারো, তদ্রূপ যাতনাক্লিষ্ট পরিবারেও শান্তির আবহ তৈরী করতে পারো। দরিদ্রকে তুমি যেমন অভাবমুক্ত করতে পারো, তেমনি বিত্তবানকে পথের ভিখারী বানিয়ে ছাড়ো। আদরের দুলালী হে রমনী! তুমি তার আমার সবার হৃদয়মন্দীরের দেবী। তুমি তার ঈমানের অর্ধাংশ। তুমি তার গৌরভ- সম্মান। তোমাকে ঘিরেই ইলয়াসের সুখ- দুঃখ। তুমি তার আলো আঁধার হে সালেহা! জগতে যত ওলী-বুযুর্গ, গাউস-কুতুব, দিগিজ্বয়ী সেনাপতি, রাজ্যাধিপতি সম্রাট; এমনকি সকল নবী-রাসূলও ছিলেন তোমারই গর্বসঞ্জাত। তোমারই স্নেহছায়ায় তারা পৃথিবীর আলো-বাতাস পেয়েছিলেন। একারণেই তোমাকে শ্রদ্ধার জয়মালা পরিয়ে সায়্যিদুল মুরসালীন সাঃ বলেছেন, মায়ের পদতলেই সন্তানের বেহেশত। হে নবদম্পতি! তোমরা আমাদের রূহানী সন্তান! শুনো এবার আল্লাহর ফরমান। তোমরা একে অন্যের বস্ত্রবিতান। তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা হোক চিরঅম্লান। হোক সুন্দর তোমাদের ভবিষ্যত নির্মাণ।
লেখক: কলামিস্ট, ইসলামি চিন্তাবিদ, মুহাদ্দিস, গ্রন্থাকার