Thursday 21st November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: রাত ৯:৫০
Home / Today / পুতিনের নতুন রাশিয়া

পুতিনের নতুন রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন

আশরাফুল কবীর

রাশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পছন্দ করেন বলে নতুন এক জনমত জরিপে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পুতিনের জনপ্রিয়তা কমেনি বলে এ জনমত জরিপ থেকে স্পষ্ট হলো।

বার্তা সংস্থা এপি’র রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এ জনমত জরিপে দেখা যায়-রাশিয়ার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করেন। ২২ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ জনমত জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এতে শতকরা ৮১ ভাগ মানুষ বলেছেন, তারা জোরালোভাবে হোক আর যেভাবেই হোক প্রেসিডেন্ট পুতিনের কর্মতৎপরতাকে সমর্থন করেন।

২০১২ সালে এপি’র অন্য এক জনমত জরিপে পুতিনের যে জনপ্রিয়তা দেখা গিয়েছিল এবারের জরিপে তার চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলে থাকেন, রাশিয়ার জনগণের বড় অংশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জাতির ত্রাণকর্তা বলে মনে করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়াই হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘদিনের স্নায়ুযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু পরাজিতই হয়নি, নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতেও ব্যর্থ হয়। এরই পরিণতিতে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তিতে পরিণত হয়। ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল চালিকাশক্তি ছিল রাশিয়া নামের ভূখণ্ডটি। ১৯৯১ সালের ওই বিপর্যয়ের সময় রাশিয়ার সামগ্রিক অবস্থাও ছিল একেবারেই নড়বড়ে। এই অবস্থাতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন বরিস ইয়েলৎসিন।

কিন্তু মিখায়েল গরবাচেভের আমলের আগে থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সঙ্কটের ধাক্কা সামাল দেয়া ইয়েলৎসিনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বরং রাশিয়ার অর্থনীতি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, এক সময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত এই দেশটি পশ্চিমাদের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর পুরোপুরিই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল ইয়েলৎসিনের, তা তিনি মোটেও পারেননি। তার সীমাহীন মাদকাসক্তের কথা কারোরই অজানা নয়। ফলে মুখ থুবড়ে পড়া একটি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যে দৃঢ়তা ও কর্মকৌশল প্রয়োজন ছিল তা ইয়েলৎসিনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বরং রাশিয়ার অর্থনীতি আরো ভঙ্গুর ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।

দেশের এই পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ভ্লাদিমির পুতিন। সময়টা ছিল ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাস। কিন্তু ইয়েলৎসিনের কারণে তেমন কিছু করা পুতিনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই ২০০২ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই পুতিন রুশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ জন্য তিনি দেশের জ্বালানিসম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। আগে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সাথে যে চুক্তি হয়েছিল সেগুলোকে পুতিন ‘ঔপনিবেশিক চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ‘শেল’ ও ‘বিপি’সহ অন্যান্য পশ্চিমা কোম্পানির সাথে আগের চুক্তি বাতিল করেন। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনেন পুতিন। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যে বিপর্যস্ত ও মেরুদণ্ডহীন রাশিয়াকে দেখে আসছিল পশ্চিমা বিশ্ব পুতিনের আমলে এসে তাদের সেই দৃষ্টি হোঁচট খায়। পশ্চিমা বিশ্ব নতুন এক রাশিয়া দেখতে শুরু করে।

একনজরে রাশিয়া

নাম: রাশিয়ান ফেডারেশন
রাজধানী: মস্কো
জনসংখ্যা: ১৪ কোটি ২৮ লাখ
আয়তন: ১ কোটি ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার (৬৬ লাখ বর্গমাইল)
প্রধান ভাষা: রাশিয়ান
প্রধান প্রধান ধর্ম: খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলাম। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি অর্থোডেক্স খ্রিষ্টান। মুসলমান প্রধান অঞ্চলগুলো হচ্ছে ভলগা তাতার, বাস্কার ও ত্তর ককেশাস।

গড় আয়ু: পুরুষ-৫৯ বছর, নারী-৭৩ বছর। মাথাপিছু গড় আয় ৭, ৫৬০ মার্কিন ডলার (জাতিসঙ্ঘ ২০০৭)
মুদ্রার একক: এ রুবল= ১০০ কোপেকস।
প্রধান রফতানিপণ্য: তেল ও তেলজাত পণ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য, ধাতব পদার্থ, কেমিক্যাল, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম।

গণমাধ্যম: সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোর মধ্যে প্রাভদা, কোমারসান্ত, মস্কোভাস্কি কোমসমোলেটস, ইজভেস্তিয়া, ট্রুড, মস্কো টাইমস, মস্কো নিউজ, রসিয়াসকায়া গেজেট, নেজা ভিজিমায়া গেজেট উল্লেখযোগ্য।
টেলিভিশন: রাশিয়া টিভি চ্যানেল, চ্যানেল ওয়ান, এনটিভি, সেন্টার টিভি, রেনটিভি, রাশিয়া টুডে চ্যানেল উলেখযোগ্য।
রেডিও: রেডিও রাশিয়া, ইখো মস্কোভি, রেডিও মায়াক, রাসকোয়ে রেডিও, ভয়েস অব রাশিয়া প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নিউজ এজেন্সি: রাশিয়ার প্রধান তিনটি নিউজ এজেন্সি বা বার্তাসংস্থা হচ্ছে ইতার তাস, আর আইএ, নভোস্তি ও ইন্টারফ্যাক্স।

ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন রুশ গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করেছেন। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নাজুক অবস্থা ও বিপর্যয়ের কারণ তার মোটামুটি জানা ছিল। কিভাবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে সে ব্যাপারেও তার স্পষ্ট ধারণা ছিল। তিনি সে পথেই অগ্রসর হন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই তার অনুসৃত নীতিতে সাফল্য আসতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০০২ সাল থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকা ইকোনমিস্টে’ মতে, এ বছর থেকেই রাশিয়ার জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার আগের চেয়ে অনেকটাই বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতিও নেমে আসে ১০ শতাংশের নিচে। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হারও কমে আসে। ২০০৭ সালে এসে রাশিয়ার অর্থনীতি প্রায় স্থিতিশীল ও স্বাবলম্বী অবস্থায় দাঁড়িয়ে যায়।

পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দুই মেয়াদের দায়িত্বকালে রাশিয়াকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, যা রাশিয়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে বাধ্য করেছে। শুধু তা-ই নয়, এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়তেও পিছপা হচ্ছে না রাশিয়া। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সঙ্ঘাত দানা বাঁধছে। রাশিয়াও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছে। জর্জিয়ার সাথে যুদ্ধকে কেন্দ্র করেও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এখন ইউক্রেনের সাথে জড়িয়ে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর আগে দখল করে নেয় ক্রিমিয়া।

অনেক বিশেষজ্ঞই রাশিয়াকে এখন বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন এবং দুই দেশের দ্বন্দ্বকে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা বলেই মনে করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ দু’টি দেশ আগে সোভিয়েত বলয়ে ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এ দু’টি দেশও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো এখন মার্কিন বলয়ে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করে এ হুমকি মোকাবেলার কথা বলছে। আর এই মোকাবেলার পদক্ষেপ হিসেবেই পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করছে। কিন্তু রাশিয়া বিষয়টিকে মূল্যায়ন করছে ভিন্নভাবে। রাশিয়া মনে করে যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কল্পিত হুমকির দোহাই দিয়ে আসলে রাশিয়াকে লক্ষ্য করেই এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করছে। সে জন্য রাশিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় রাশিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া এখন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে। তিনিই নতুন রাশিয়ার রূপকার। এ জন্য তার প্রতি রাশিয়ানদের সমর্থনও অনেক বেশি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, পুতিনের শাসনামলে রাশিয়ায় জীবনযাত্রার মানের অস্বাভাবিক উন্নতিই তার প্রতি মানুষের এত বেশি সমর্থনের প্রকৃত কারণ। ১৯৯০-এর দশকে ইয়েলৎসিনের আমলে যে দুর্দশা রুশ জনগণকে চেপে ধরেছিল তার জন্য ইয়েলৎসিনের পশ্চিমাপ্রীতি ও নীতিকেই দায়ী করে থাকেন রাশিয়ানরা। সে জন্য পশ্চিমাপন্থী রাজনীতিকদের প্রতি আর রাশিয়ানদের কোনো আস্থা নেই। বরং পশ্চিমাবিরোধী পুতিনের প্রতিই রাশিয়ানদের অগাধ আস্থা। এ কারণে পুতিনের আমলে ইয়েলৎসিনের সময়ের পশ্চিমাপন্থী রাজনীতিকদের রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরে যেতে হয়েছে।

একনজরে ভ্লাদিমির পুতিন
পুরো নাম : ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন
জন্ম : ৭ অক্টোবর, ১৯৫২, লেনিনগ্রাদ
শিক্ষা : আইনে স্নাতক

স্কুলজীবন থেকেই পুতিন জুডো-কারাতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পারদর্শিতা অর্জন করেন। রুশ সিনেমায় গোয়েন্দাদের ভূমিকা দেখে পুতিন গোয়েন্দা জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৬ সালে। এরপর ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে কেজিবি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পূর্ব জার্মানির পতনের পর পুতিনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৯১ সালে পুতিন লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যোগ দেন। এখানে তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর নজর রাখতেন। এ সময়ই তার সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে লেনিনগ্রাদের মেয়র আনাতোলি সোবচাকের। পুতিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সোবচাক ছিলেন তার শিক্ষক। পুতিন ১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট কেজিবি থেকে ইস্তফা দেন এবং মেয়র সোবচাকের অধীনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিদেশী বিনিয়োগ বিষয়ের প্রধান হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গ নগর প্রশাসনের উপপ্রধান হিসেবেও কাজ করেন।

১৯৯৬ সালের মেয়র নির্বাচনে সোবচাক পরাজিত হওয়ার পর পুতিনকে মস্কোতে ডেকে পাঠানো হয়। এ সময় তাকে প্রেসিডেন্টের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপ্রধানের পদে নিয়োগ করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন পুতিনকে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাফের উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৯৮ সালে ইয়েলৎসিন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন পুতিনকে। ১৯৯৯ সালের ৯ আগস্ট পুতিন প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হন। শুধু তা-ই নয়, ইয়েলৎসিন ঘোষণা করেন যে, তিনি পুতিনকে তার উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান। ১৬ আগস্ট পুতিন পূর্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্টের অনুমোদন পান।

এরপরই কেবল পুতিন রাশিয়ার সাধারণ মানুষের পরিচিতি লাভ করেন। এর আগে তার সম্পর্কে জনগণের কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন হঠাৎ পদত্যাগ করেন এবং সংবিধান অনুযায়ী পুতিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন। এরপর ২০০০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হন পুতিন। পরপর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত বছর ৭ মে তার অনুগত দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে ৮ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন পুতিন। পরের মেয়াদে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হন।
পুতিনের স্ত্রী লুডমিলা একজন সাবেক বিমানবালা। তাদের দুই মেয়ের একটির নাম মারিয়া পুতিনা ও ছোটটির নাম ইয়েকাতেরিনা পুতিনা।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুতিনের অনুসৃত অনেক নীতির কারণে জনগণের অনেক মৌলিক স্বাধীনতাই খর্ব হয়েছে। বিরোধী দলকে তিনি নির্মমভাবে দমন করেছেন। সংবাদপত্র তথা প্রচারমাধ্যমেও স্বাধীনতাও খর্ব করেছেন বিভিন্নভাবে। এসব ব্যাপারে পশ্চিমাদের সমালোচনাকে গ্রাহ্যই করেননি পুতিন। তিনি সোজা বলে দিয়েছেন যে, পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্রের জন্য রাশিয়া এখনো প্রস্তুত নয়। পুতিন এ কথা বলতে পেরেছেন কারণ রাশিয়া এখন আর আগের মতো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল নয়। খুব দ্রুতই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থের জন্য এখন আর রাশিয়াকে আগের মতো পশ্চিমা বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অন্যান্য দাতাদের কাছে হাত পাততে হয় না। তেল ও গ্যাসসম্পদকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে এ খাত থেকে যে বিপুল অঙ্কের অর্থ আসছে তা দিয়ে রাশিয়ার অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে।

সর্বশেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরবাচেভ তার গ্লাসনস্ত পেরেস্ত্রৈইকা বা সংস্কার কর্মসূচির দেশের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলো পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছে সস্তায় ইজারা দিয়েছিলেন। পুতিনই আবার তা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে এনে এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই রাশিয়ার অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে পুতিন সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে ২০০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আগামী আট বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। নতুন এই রাশিয়ার স্থপতি হচ্ছেন ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন।

রাশিয়ার জনগণ পুতিনের ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণকে সমর্থনই দিয়েছে। বিশেষ করে তেল ও গ্যাসসম্পদকে জাতীয়করণ করার পুতিনের পদক্ষেপকে রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমর্থন দিয়েছে। তারা এটাও মনে করে যে, গরবাচেভ এবং ইয়েলৎসিনের আমলের চেয়ে পুতিনের আমলে রাশিয়ায় যেমন অধিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি মানবাধিকার পরিস্থিতিও ইয়েলৎসিনের আমলের চেয়ে এখন অনেক ভালো। সুদৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে রাশিয়াকে একটি চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে বের করে এনে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য টাইম ম্যাগাজিন পুতিনকে ২০০৭ সালে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে। এ সম্পর্কে টাইম বলেছে, তাদের এই পার্সন অব দ্য ইয়ার ঘোষণাটা কোনো ব্যক্তির জন্য সম্মান বা জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি নয়। বরং এটি হচ্ছে ওই ব্যক্তির বা নেতার কাজের স্বীকৃতি। পুতিনকে তার যোগ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন। টাইম আরো বলেছে কারো ভালো বা খারাপ কাজের স্বীকৃতি দিতেই তারা ওই ব্যক্তিকে পারসন অব দ্য ইয়ার কিংবা ম্যান অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে থাকে। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ১৯৩৮ সালে টাইম ম্যাগাজিন হিটলারকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছিল। যদিও তখন টাইমের পাঠকরা ওই সিদ্ধান্তের জন্য ম্যাগাজিনটির কঠোর সমালোচনা করেছিল।তার জনপ্রিয়তা এখনো বিশ্বের বহু নেতার চেয়েও অনেক বেশি।  তার ইচ্ছাতেই চলে সব কিছু।

অন্যদিগন্তের সৌজন্যে

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...