সিরিয়া সংকট আরো ঘনীভুত। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শিয়াদের দৌরাত্ম্য বাড়াতে রাশিয়ার সহায়ক ভুমিকা পালন।
কমাশিসা ডেস্ক: সিরিয়ায় সুন্নি কট্টরপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলা আরো জোরদার করতে যাচ্ছে রাশিয়া। গত শনিবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া একই দিন রাশিয়ার সামরিক দপ্তরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রুশ বিমান হামলায় ভীত হয়ে দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে আইএস জঙ্গিরা। হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০ জঙ্গি সিরিয়া ছেড়ে ইউরোপের দিকে পালিয়ে গেছে বলে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, বিবিসি, ফার্স নিউজ, এবিসি, রয়টার্স
বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত সপ্তাহের বুধবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ওই হামলায় আইএসের সামর্থ্য অনেকখানি ?দুর্বল হয়ে গেছে বলেও দাবি করেছে মস্কো। গত শনিবার ঊর্ধ্বতন একজন রুশ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল স্টাফ অন্দ্রে কার্টাপোলভ বলেন, ‘সিরিয়ায় গত ৭২ ঘণ্টায় ৬০টির বেশি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আমরা সিরিয়ায় বিমান হামলা শুধু অব্যাহতই রাখব না, বরং এর তীব্রতা আরো বৃদ্ধি করব।’ তিনি বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে রুশ বাহিনী সিরিয়ার হেমমিমি বিমানঘাঁটি থেকে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাক্কায় আইএসের ভূগর্ভস্থ অস্ত্রের গুদাম এবং মারাত আল-নুমান এলাকার অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় জঙ্গিরা সামরিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।…আমাদের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে জঙ্গিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেগুলোর অধিকাংশ থেকেই পালাচ্ছে তারা। আমরা জানতে পেরেছি, আইএসের ছয় শতাধিক ভাড়াটে যোদ্ধা দল ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হামলা আরো জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
তবে বরাবরের মতোই আইএস দমনে রাশিয়া যে সাফল্যের দাবি করেছে, তাতে দ্বিমত পোষণ করেছে ব্রিটেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত শনিবার অভিযোগ করেছেন, আইএস দমনের নামে আসলে প্রেসিডেন্ট আসাদকেই বাঁচাতে চাইছে রাশিয়া। ব্রিটিশ দৈনিক ‘টেলিগ্রাফ’-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হামলা চালানোর সময় আইএস এবং সিরিয়ার সরকারবিরোধী মধ্যপন্থীদের মধ্যে বাছবিচার করছে না রুশরা। আসলে তাদের উদ্দেশ্য আসাদ সরকারকে রক্ষা করা। আর এটা করতে গিয়ে তারা সিরিয়ার পরিস্থিতি আরো খারাপ করে ফেলছে। আরব বিশ্বও রাশিয়ার এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।’ এছাড়া সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের পরিধি বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করার ব্যাপারে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির উদ্যোগ নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
একই দিনে সিরিয়ায় রুশ হামলার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে তুরস্কও। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, ‘রাশিয়া সিরিয়ায় একটি বড় ধরনের ভুল করছে। সিরিয়ায় রুশ তৎপরতায় তুরস্ক ব্যথিত ও বিচলিত।’
এদিকে, রোববার সিরিয়ার হোমস প্রদেশের তালবেইহ শহরে অন্তত ১০ দফা বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব হামলায় তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া সংগঠনটি ইন্টারনেটে হামলা-পরবর্তী শহরের একটি ভিডিওচিত্র আপলোড করে, যাতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া হোমস প্রদেশেরই আরেক শহর বাবর আল-তালওয়েতে রোববারের রুশ হামলায় অন্তত ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানায় বিদ্রোহীরা।
রাশিয়াকে গোয়েন্দা তথ্য দেবে ইরাক : আবাদি
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বলেছেন, তার দেশ আইএস সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য ইরান, রাশিয়া এবং সিরিয়াকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। রোববার রাজধানী বাগদাদে এক সংবাদ সম্মেলনে আবাদি বলেন, ‘আইএস সম্পর্কে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইরাকের হাতে আছে, তা আর কোনো দেশের জানা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ইরাকের অভ্যন্তরে আইএসের অবস্থানে রাশিয়ার বিমান হামলাকে স্বাগত জানানোর জন্য তাকে বাগদাদ সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সিরিয়ার মতো ইরাকেও বিমান অভিযান চালানোর জন্য রাশিয়াকে আহ্বান জানালেন।
এর আগে রাশিয়া বলেছে, বাগদাদ সরকার আহ্বান জানালে বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব গ্রহণ করলে ইরাকের আইএস অবস্থানে বিমান অভিযানের বিষয়টি বিবেচনা করবে মস্কো।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসবিরোধী যুদ্ধে পরস্পর সমন্বয় এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের জন্য রাশিয়া, ইরান, ইরাক ও সিরিয়া যৌথ তথ্যকেন্দ্র স্থাপনে সম্মত হয়েছে। তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে চার দেশের গোয়েন্দা ও সামরিক দপ্তরগুলো আইএসের ঘাঁটি, অবস্থান, চলাচল এবং অস্ত্র মজুদ সম্পর্কে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হবে। এছাড়া রাশিয়া ও ইরান বর্তমান চুক্তির অধীনে সিরিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
সুত্র: যায়যায়দিন