খতিব তাজুল ইসলাম,
কোরবানির সময় আসলেই একটা বিতর্কের ঝড় উঠে। মুল্লারা চামড়া খোর গরিবের হ্ক্ব খোর। মাদরাসায় যারা পড়ে তারা ভিক্ষুক এতীম ফকীর ইত্যাদি। চামড়া কালেকশনের কারণে অনেক ছাত্র উস্তাদ ঈদের দিন বাড়িতে যেতে পারেন না। এনিয়ে আছে বিভিন্ন মাত্রায় কতাবার্তা। ময়াদানে চামড়া উঠানোর সময় ও আছে মানহানিকর অনেক মন্তব্য। মাদরাসা ছাত্রদের দেখে অনেকে বাকা চোখে দেখে। বিষয়টা কিন্তু সময়ে সময়ে আলোচনার টেবিলে জোর পাকাচ্ছে। হয়তো সেই দিন বেশী দুরে নয় তখন মানুষ এবিষয়ে প্রকাশ্যে ব্যাপক ভাবে সমালোচনা শুরু করবে।
কওমি মাদরাসা কি সত্যিই চামড়া নির্ভর? যতটুকু ধারনা ৫-১৫% অথবা সর্বোচ্চ ২০% খরছ চামড়া থেকে আয় হয়। চামড়া কি মাদরাসাই উপযুক্ত জায়গা? আসলে বিষয়টা গভীর ভাবে ভাবনার বিষয়। মাদরাসা হচ্ছে শিক্ষালয়। যেখানে ধনি গরীব মধ্যবিত্ত সবার ছেলে-মেয়ে পড়বে। গরীব ছেলে-মেয়েদের ব্যায়ের একটা অংশ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বহন করে আর তা গোরাবা বা খয়রাতি ফান্ড হতেই। গোরাবা বা খয়রাতি ফান্ডের জন্য চামড়া বা যে কোন দান খয়রাতের উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু সাধারণ ভাবে মানুষের মাঝে একটা ধারনা জন্মাচ্ছে যে ওখানে কেবল গরীবের সন্তানরাই পড়ালেখা করে। আর তারা যা পড়ে তা নিছক কায়দা ছিপারা। বড়জোর খতমে কোরআন বা খতমে বোখারীতে তাদের দরকার হবে। ইমামতি কিংবা জানাযায় ডাকা হবে। তাই ওসবে উচ্চ পরিবারের সন্তান গুলো আসেনা।
আমরা মাদরাসাকে কেবল খয়রাতি বা যাকাতের স্থল কিংবা চামড়া জাত প্রতিষ্টান হিসাবে কেন চিত্রায়িত করবো? প্রথমতঃ মাদরাসা শিক্ষাকে যখন আমরা যুগোপযুগি করে গড়ে তুলবো তখন শিক্ষার উপর থেকে একটা বদনাম বা কমজুরী বিদায় হবে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা টাকা দিয়ে পড়েব আর যারা পারবেনা তাদের পক্ষথেকে প্রতিষ্টান ব্যায় বহন করবে। এই প্রতিষ্টানে লেখাপড়া করে যখন ছাত্রগুলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পদে সমাসীন হবে দেশ এবং জাতির জন্য সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হবে তখন এই সমস্যা আর থাকবেনা। কারণ গাছ তার ফলে পরিচয়। তখন মানুষ দেখবে যে না মাদরাসা শিক্ষা শুধু মসিজদে সীমাবদ্ধ নয় তখন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আসবে।
২য়তঃ আমরা মনে করি উলামায়ে কেরাম সমাজের কর্ণধার। সমাজের প্রতিটি পরতে পরতে তাদের অবদান থাকা জরুরী। যেভাবে শিক্ষার জন্য কষ্ট করছেন তেমনি ভাবে অবহেলিত বঞ্চিত অসহায় মানুষদের জন্য থাকা চাই কিছু কর্মসুচি। যে মাদরাসা যে এলাকা থেকে বা পাড়া থেকে চামড়া উসুল করা হেব সেই এলাকার বিধবা অসহায় মানুষদের লিষ্ট্ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে আসা উচিত। কোরবানির চামড়া থেকে আয়কৃত মুনাফার একটা অংশ ঐ এলাকার অসহায়দের মাঝে বন্টন করে দেয়া উত্তম। স্থানীয় মেম্বার ইমাম সাহেব ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সহায়তায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এই কাজটি করলে ক্রমান্বয়ে এমন একদিন আসবে মানুষ তার কোরবানির চামড়া স্বহস্তে মাদরাসায় এনে দিয়ে যাবে।
আমাদের জামেয়া নুরানিয়া ইসলামিয়া বালাগঞ্জ সিলেটে আমরা এই প্রচলন শুরু করছি। আলহামদুলিল্লাহ আগে দশ বিশটা চামড়া হতো এখন ৭০/৮০টা হয়। একটু বিচক্ষণতা বিবেক বুদ্ধি খাটালে পথ আরো সুগম হবে। চামড়া কম বেশি বিষয় তা না। আপনি গণ মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী করুন। স্থানীয় লোক আপনার প্রতিষ্টানকে নিজের ভাবা শিখুক। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখছেন মাদরাসার ফান্ড থেকে কিছু কমলো। কিন্তু আদতে আপনার প্রতিষ্টান মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিবে। ইনশা আল্লাহ এভাবে এই পথে কাজ আরম্ভ হলে দেখবেন সমালোচকরা চুপসে যাবে। ঈদের দিনে ছাত্রদের আটকানোর প্রয়োজন পড়বেনা। এলাকার নওজোয়ানরা দলবেধে এনে চামড়া আপনার দহলিজে দিয়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে করে দেখুন। এ্ই কাজের মাধ্যমে খোলাফায়ে রাশেদীনদের আমল জিন্দা হবে। মানুষের হক্ব তার দোয়ারে পৌছিয়ে দেওয়াই হলো ইসলামী রাজনীতির মূলমন্ত্র।
হজরত আহমদ শফী সাহেব দামাত বারাকাতুম তাই আহব্বান করেছেন যে উলামাদের কে আর্ত সামাজিক কাজে কল্যাণের কাজে মানব সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন যে দেশের প্রতিটি সেক্টরে উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি খুবই জরুরী। বলেছেন উলামায়ে কেরামকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।