লিখেছেন: ফাহিম বদরুল হাসান
(প্রসঙ্গ: পারিবারিক সাতকাহন)
“আমার স্বামী বিদেশ থাকেন, আমি কেন শশুরবাড়িতে পড়ে থাকবো! শশুর-শাশুড়ির খেদমত, শশুরবাড়ির সকলকে রান্না করে খাওয়ানো, সাংসারিক কাজ ইত্যাদি করার কথা কোর’আন-হাদিসের কোথায় আছে?”
এরকম প্রশ্ন প্রায়ই পাওয়া যায়। প্রশ্নগুলো অনেকটা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এগুলোর উৎস, গতিপথ এবং ফলাফল সাংসারিক জীবনে খুবই স্পর্শকাতর।
কোর’আন-হাদিস থেকে জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজা অতি জরুরি। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সামাজিক জীবনে কিছু বিষয়, রীতি-রেওয়াজ আছে, যেগুলো পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক কাঠামো পর্যন্ত অটুট এবং সজীব রাখতে সহায়তা করে। এইসব রেওয়াজ যদিও ইসলামে ফরয/ওয়াজিব করা হয় নি, তবে হারামও করে নি।
সমাজ গবেষণায় দেখা যায়, এসব সামাজিক, পারিবারিক রীতিনীতি হুট করে তৈরি হয় নি। মানব সভ্যতার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায়, ধর্মীয় নীতির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে একটি রীতি সভ্যতায় যোগ হয়ে থাকে। তীক্ষ্ণ নজর ঢাললে প্রতীয়মান হয় যে, সামাজিক/পারিবারিক বন্ধনের স্বার্থকতায় তৈরি হয়েছে এইসব রীতিনীতি।
ধরুন; আপনি (নারী) বললেন- ইসলামে যেহেতু ফরয নয় যে, শশুর-শাশুড়ির দেখভাল করা সাংসারিক কাজ করা, সেহেতু আমি করবো না। সাথে সাথে আপনার স্বামী বললেন- ইসলামে যেহেতু ফরয নয় যে, দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়া, সেহেতু আমি বিদেশে আরো দুটো বিয়ে করবো।
চিন্তা করুন, ফলাফল কী হতে পারে? দাম্পত্য-কলহ থেকে ডিভোর্স পর্যন্ত গড়াবে। ডিভোর্স যদি নাও হয়, পরবর্তী জীবনে আপনার সন্তানাদি বলতে পারে, ইসলামের কোথায় আছে যে, মাকে আমার সংসারেই রাখতে হবে? হ্যাঁ; যেহেতু প্রতিপালন ফরয, তাই আমি প্রতিপালন করবো, তবে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে।
অতএব; সমাজে প্রচলিত কোনো কাজ “ফরয নয়” তাই ছেড়ে দিতেই হবে কিংবা একটা অপ্রচলিত কাজ “জায়েয আছে” তাই করতেই হবে, এরকম চিন্তা-চেতনা সর্বক্ষণ ধরে রাখলে অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হতে পারে।
হাজার বছরে নির্মিত একটি ঐতিহ্য যতক্ষণ না ইসলামের সাথে কন্ট্রাডিক্ট হবে, ততক্ষণ এর বিপরীতে অবস্থান না নেয়াই শ্রেয়। ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করাতেই মাধুর্যতা। এগুলো মেনে চলাতেই সফলতা। “কোর’আন-হাদিসের কোথায় আছে” বলেই সামাজিক রীতিনীতিতে লাথি দিলে সমাজ কাঠামো ধ্বংস হবে/হচ্ছে।
আল্লাহ হেফাজত করুন।