মুজিবুর রহমান,
আমরা সে নবীর উম্মত।যিনি চাঁদককে করেছেন দিখন্ডিত আঙুলির ইশারায়।এটা ছিল তার সত্যের সাক্ষ্য।আমরা সে নবীর উম্মত যিনি দুশমনকে চোখে ধুলো দিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন মহা সত্যের দাওয়াত নিয়ে।রঞ্জিত হয়েছে তপ্ত মরুর বুকে নিজের উষ্ণ রক্তে।ধিক্কৃত হয়েছে আত্নীয় স্বজন , পরিবার পরিজনের কাছে মহাসত্যের ওপর অটল থেকে।শত্রুর ভয় অর্থের লোভ,ক্ষমতা রাজত্ব তাকে নড়াতে পারেনি এক বিন্দু।সিয়ানে আবুতালিবে একেকটি নিদারুণ দিন কেটেছে উপোষ। সম্পূর্ণ মৌল মানবিক দৈনন্দিন জীবন থেকে বঞ্চিত হয়েও আল্লাহর প্রতি রেখেছেন অটল বিশ্বাস। এক মুহুর্তের জন্যও জাগতিক পেরেশানিকে পাত্তা না দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুপম ধৈর্যের।সেই সবর সেই শিক্ষাকে আজীবন ধারণ করেছে সাহাবায়ে কেরাম।কতটুকু কষ্ট পেলে একজন লোক গৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।আর সেই জ্বালা কতইনা বড় বেদনাদায়ক যারা আশপাশে ছিল প্রতিপদে মৃত্যুর ক্রাস্কার, ছিল আল্লাহর মনোনিত রাসূল সা.এর জীবনকে সঙ্গীন করে আল্লাহর দ্বীনকে মিটিয়ের দেওয়ার আতঙ্ক।
প্রিয় রাসূল সা.যে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেই কাফিরদের শয়তানি দৃষ্টি থেকে দূরে সরে গেছেন বা মুক্ত হয়েছেন তা নয়।মাদীনী জীবনেও ইহুদী, খৃষ্টান আর পৌত্তলিকদের কাছ থেকে হয়েছেন নানাভাবে নিগৃহীত। নানান কষ্টের মধ্যে রেখেছিল তাকে।পাথরের আঘাতে মারতে চেয়েছিল তারা।মক্কার কাফেরগোষ্ঠীও রাসুলের মদীনা রাষ্ট্রে হামলা চালানোর জন্য রওয়ানা দেয়।রাসূল এ খবর অবগত হয়ে দরিদ্র পীড়িত অথচ ইমানে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্বাসী সত্যের ঝান্ডাবাহী সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে রওনা দিলে ন যুদ্ধ প্রতিহত করতে।সল্প সরঞ্জাম, অল্প রসদ,অপর্যাপ্ত সব যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে বিপুল সজ্জায় সজ্জিত, উন্নত অস্রে আর যুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহস্রাধিক যুদ্ধার বিরোদ্ধে আল্লাহর উপর ভরসা করে দাঁড়িয়ে গেলেন মাত্র তিন’শ তের ক্ষুধাতুর নিরস্র সাহাবায়ে কেরাম। তাদের অন্তরে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, দ্বীনকে বিজয়ী করার একনিষ্ঠ তামান্না।আল্লাহ সহায় হলেন বিজয় হলো সাহাবায়ে কেরামের বিজয় হলো আল্লাহর দ্বীনের।পেছনে পড়ে থাকলো একটি একটি ইতিহাস।একটি শিক্ষা সমগ্র উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য।আজও যদি আমরা সে সাহস সে ইমান নিয়ে দাঁড়াতে পারি,সে রকম লোকদের অনুসরণ করি।সমগ্র বিশ্বকে আল্লাহ মুহুর্তের মধ্যেই আমাদের হাতে তুলে দিবেন।এ বিষয়ে আছে আল্লাহর প্রকাশ্য ওয়াদা।
প্রিয় পাঠক যে সময়ে আমি এই লেখাটি টাইপ ককরছি তখন আকাশে মেঘ, জমিনে বৃষ্টি ফোটা পড়ছে, আমার মনে হচ্ছে দিকে দিকে উম্মাহের গর্ব গাথা,ইতিহাস ঐতিহ্য,সংস্কৃতি মর্যাদা পূর্ণ অবস্থান থেকে নিস্কৃতি নিচ্ছে।
কি অচেতন মুসলিম আমরা হয়ে গেছি!
কি যে নির্লজ্জ জীবন আমরা বেছে নিয়েছি।
আমরা আজ আর আমাদের মাঝে নেই।হারিয়ে গেছি কোন অচেনা নদীর ঘাটে,হারিয়ে গেছি তেপান্তরে।যেখানে আমাদের কোনই পূর্বসূরী নেই।নেই ঘোড়া,তলোয়ার,তোপ,কামান,গুলাবারুদ,কেল্লা,বিদ্যাপিঠ,অস্রাগার,বিজ্ঞান,দর্শন।
আমরা আজ দোয়া করি,রাব্বানা আখরিজনা মিন হাজিহিল কারিয়াতিজ জালিম…
আমরা কেউ ঈ জালিমদের হাত থেকে উম্মাহকে বাচাতে অভিবাবক হইনা।সত্যি এ আমার কাছে এক আশ্চর্য্য দর্শন।
আমরা এখন পরম নমনীয়।প্রতিপক্ষ যদিও চরম ধমনীয়।জি হুজুররের তালিকায় আমরা রেকর্ড গড়েছি।আমাদের খঞ্জরে মরচে ধরেছে অনুভুতিতে ছিড় ধরায় বোঝতে নারাজ।আমাদের জনপদে যুগের হালাকু নখ বসিয়েছে।আমরা দাড়িয়ে থাকি,কখন তাতারী সৈন্যের বউ আমার মাথা কেটে নিবে।
আমরা ধুয়া তুলসি পাতা হয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের সপ্নে বিভোর।হাত না রাঙিয়ে পাতে ভাত খেতে আমরা অভ্যস্ত।আমরা কেবলই আমীর হওয়ার সপ্ন দেখি।কাজী হয়ে বিচারের করার ইচ্ছা প্রকাশ করি।মাঠের সৈনিক,, ঘাটের মাঝি হতে কেউ ইচ্ছুক নই।শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য করতে অনীহা আছে।আমরা টার্গেটে থাকতে ভালোবাসি,টার্গেট করতে নয়।এতে ঝামেলা পোহাতে হয় বলে।আমরা নির্ঝঞ্জাট ঝামেলা মুক্ত সান্তশিষ্ট্য মুসলিম।
আমরা এমন লোকদের নেতা মনে করি যারা স্ত্রীর আচলকে বন্ধনী,সন্তানের পিঠকে ঢাল,ঘরকে প্রসাদ করে রেখেছে।উম্মাহের চিন্তা যাদের পরিবার, চাকরি,ব্যাবসা ও সামাজিক লৌকিকতার পরে। নির্বাচনী হাওয়ায় যারা আন্দোলনের ক্ষতে দাওয়া দেয়।দুই পয়সার চা,তিনটাকা খাদ্য সামগ্রী, পাচ পয়সা দিয়ে মানুষ কিনে নেয়।এই কেনা মানুষ, ভাড়াটে নেতা দিয়ে আর যাই হোক উম্মাহের চাহিদা পূরা হবেনা।
আমাদেত আজ কর্মী হতে বড় প্রয়োজন।প্রয়োজন শীসা ঢালা প্রাচীরের।প্রয়োজন একজন যুলকারনাইন,যিনি যুগের ইয়াজুজ মাজুজদের বেস্টনির ভেতরে রাখবেন।আমাদের আজ রাসূলকে অনুসরণ করার, সাহাবাওয়ালা জিন্দেগী গড়ার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।প্রয়োজন নিজেকে পরিশুদ্ধ জ্ঞানবান হয়ে গড়ে ওঠা।যাতে পরিশুদ্ধ ইমান,পরিপাটি আমলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায়।
আমাদের জানতে হবে জীবন পদ্ধতি কি হওয়া উচিত।কি ছিল রাসূলের জীবন।কি ছিল সাহাবায়ে কেরামের চরিত্র আচার আচরণ। আধুনিক অসভ্যতার মোকাবেলা করতে হবে প্রিয় রাসূলের আদর্শ দিয়েই।সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে পাল্টে দিতে হবে সুন্নাতের আলোকেই।এবার যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে।এ যুদ্ধ হবে নিজেদের আত্নপরিচয় ফিরে পাবার।হারানো ইমান ফিরে পাবার।ঘরে ঘরে পাড়ায় মহল্লায় দ্বীনের আওয়াজ বুলন্দ করতে হবে।এতে যদি আমাকে সিয়ানে আবুতালিবের মত সমাজচ্যুত করা হয়,জেল জুলুমের মাধ্যমে বন্দী করে দেওয়া হয়।নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হয়, তবুও আমাদের ইমানের সর্বাত্তক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।আল্লাহ আমাদেরকে কুরান সুন্নাহের আলোকে চলার তাওফিক দিন।