Thursday 21st November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: রাত ১২:১৯
Home / Today / ধর্মকে পূজি করে ব্যবসা সক্রান্ত

ধর্মকে পূজি করে ব্যবসা সক্রান্ত

Komashisha 01images

 

আমাদের সমাজে বহু পন্থায় ধর্মকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিল করা হয়। নামাজ পড়িয়ে, কোর’আন খতম দিয়ে, মিলাদ পড়িয়ে, জানাজা পড়িয়ে, খোতবা-ওয়াজ করে, পরকালে মুক্তিদানের জন্য জান্নাতের ওসিলা সেজে কথিত আলেম, মোল্লা-মাওলানারা অর্থ উপার্জন করে। আবার অনেকে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করে। এই সবগুলোই ধর্মব্যবসা। ধর্মের কাজের কোনো পার্থিব বিনিময় হয় না, এর বিনিময় বা পুরস্কার কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু যখনই তার মূল্য নির্ধারণ করা হয় বা স্বার্থের লোভে ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করা হয় তখন আর সেটা ধর্মকর্ম থাকে না, সেটা হয়ে যায় ধর্মব্যবসা, যা সকল ধর্মে নিষিদ্ধ।
মানুষের ইতিহাস সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাস। এই দ্বন্দ্বে কখনও কখনও সত্য জয়ী হয়েছে আবার কখনও হয়েছে বিপর্যস্ত। সকল সত্যের উৎস হচ্ছেন মহান আল্লাহ, তাঁর পক্ষ থেকেই মানুষ যুগে যুগে সত্য লাভ করেছে। আদম (আ:) থেকে শুরু করে আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্যন্ত পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি সমাজে আল্লাহ সত্যদীনসহ তাঁর নবী, রসুল, অবতার প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমেই সত্য এসেছে, সত্য জয়ী হয়েছে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু এই মহামানবদের অন্তর্ধানের কিছুকাল পর থেকে ক্রমেই তাদের আনিত দীনে বিকৃতি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে স্বার্থচিন্তার বিস্তার ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক বিকৃতি এসেছে নেতৃত্ব পর্যায়ে। লোভ-লালসা, অহংকার, ভোগ-বিলাসিতার মোহ শাসকদেরকে খুব সহজেই অধর্মের পথে চালিত করেছে। কিন্তু অধর্মের শরণাগত হলেও শাসকরা এটা ভালো করেই জানত যে, সমাজ তাদের অধর্ম মানবে না। যে কোনো সময় ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনতা অধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। এমন সময় শাসকদের প্রয়োজন পড়েছে এমন একটি ধর্মজ্ঞ শ্রেণির যারা শাসকদের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে, শাসকের অন্যায় কর্মকে ধর্মের আলোকে ফতোয়া দিয়ে সঠিক প্রমাণ করবে, অর্থাৎ এক প্রকার দালাল শ্রেণির। অবশ্যই ধর্মের ব্যাপারে তাদের পাণ্ডিত্য থাকতে হবে সর্বজনবিদিত। কারণ, সমাজ কেবল তার কথাই বিশ্বাস করবে, শুনবে ও মানবে যারা ধর্মের জ্ঞান রাখে, ধর্মীয় কেতাব যাদের মুখস্থ। ইতিহাস এটাই বলছে যে, এই দালাল শ্রেণি খুঁজে বের করতে অধার্মিক শাসকদের তেমন বেগ পেতে হয় নি। কারণ আগেই বলে এসেছি তখন মানুষের মধ্যে একটু-আধটু স্বার্থচিন্তা প্রবেশ করে ফেলেছে। আর যেখানে স্বার্থের চিন্তা থাকে, সেখানে অধর্মের পথে কোনো বাধাই টেকে না, শাসকের বিপুল ধনরাশি, মান-সম্মান আর ক্ষমতার প্রলোভনের সামনে তো নয়ই। এভাবেই প্রায় সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্য হতে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির উৎপত্তি ঘটেছে, ধর্মব্যবসা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ধর্মভীরু, তবে তারা ধর্মীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে ধর্মব্যবসায়ী আলেম মোল্লা ও পুরোহিত শ্রেণির উপর নির্ভর করে। তারা জানেই না যে, এই শ্রেণিটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মের ধারক-বাহক নয়, তারা ধর্মব্যবসায়ী, আগুনখোর, স্রষ্টা এদেরকে জাহান্নাম বা নরকের ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা-পুরোহিতদের প্রচারে সাধারণ মানুষ সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়, অতীতে যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ধর্মের নামে উন্মাদনা যুগে যুগে অশান্তির একটি মূল কারণ। সাম্প্রতিককালে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিশর, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পিছনে মূল কারণ ছিল এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি। একই চিত্র দেখা যায় মিয়ানমারেও। বৌদ্ধ ধর্মব্যবসায়ীরা মানবতার মূর্ত প্রতীক গৌতম বুদ্ধের (আ:) অহিংস বাণীর কবর রচনা করে সেখানে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্মম নৃশংসতা চালিয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছে তার সবগুলোর পেছনেই এভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে উভয় ধর্মের ধর্মযাজক, পুরোহিত শ্রেণির অপপ্রচার, উস্কানী। আবার মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কয়েক শতাব্দীব্যাপী যে ক্রুসেড চলেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, তার প্রধান কারণ রাজনৈতিক হলেও তৎকালীন রাজারা তার বাস্তব রূপ দিতে পেরেছিল একমাত্র ধর্মযাজকদের সাহায্যেই। কারণ ধর্ম ভিন্ন অন্য কোনো উপায়ে ইউরোপকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। এ কথা বুঝেই ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে পুরো খ্রিস্টান জগতকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল খ্রিস্টান পোপ বা ধর্মযাজকরা।
এটা সন্দেহাতীত বিষয় যে, স্রষ্টা প্রেরিত সকল ধর্মই এসেছে মানবতার কল্যাণে, মানুষকে শান্তি দেওয়ার জন্য, মুক্তি দেওয়ার জন্য, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নয়, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নয়। ব্যবসায়ীরা যেমন অধিক মুনাফা লাভের জন্য নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে, সুযোগ বুঝে স্বার্থোদ্ধার করে, তেমনি ধর্মব্যবসায়ীরাও নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট বা জোট সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিলের জন্য “ধর্ম গেল – ধর্ম গেল” জিকির তুলে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে।
কাজেই এখন যদি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, এই মোল্লা-পুরুহিতরা যে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে, যে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, সন্ত্রাস করছে সেটা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃত ধর্ম নয়, যুগে যুগে স্রষ্টা মানবজাতির হিতসাধনের নিমিত্তে যে ধর্মের অবতারণা ঘটিয়েছেন এগুলো তার বিপরীতমুখী ধর্ম, তাহলে সাধারণ মানুষ আর তাদের কোনো অপপ্রচারে কান দেবে না, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রকৃত রূপ এবং তাদের প্রচারিত ধর্ম কিভাবে বিকৃত তা যদি আরও ব্যাপকভাবে মানুষের মাঝে প্রচার করা যায়, তবে আমাদের দেশ থেকে ধর্মীয় অন্ধত্ব, গোঁড়ামি, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় সন্ত্রাস, ধর্মব্যবসা এক কথায় ধর্মের নামে যা কিছু মিথ্যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে তা একেবারে নির্মূল হয়ে যাবে। ধর্মজীবী মোল্লা-পুরোহিতরা ধর্মের নামে কোনো হুজুগ বা উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। প্রকৃত ধর্মের রূপ কেমন ছিল, নবী-রসুল-অবতারদের মূল শিক্ষা কী ছিল, তাঁরা সারা জীবন কিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, মানবজাতির প্রকৃত ইবাদত কী, আকিদাবিহীন ঈমানের কোনো মূল্য নেই কেন- এসব বিষয় মানুষের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। তবেই মানুষ সজাগ ও সচেতন হবে। তারা আর ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হবে না।

সূত্র : ফেইসবুক থেকে সংগ্রহ

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...