কুতায়বা আহসান,
সফরের জন্য তারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি নৌকা ভাড়া করলেন। এটা সে যুগের কথা, যখন নৌশীল্প তার শৈশবকাল পাড়ি দিচ্ছিল। তখনকার নৌকাগুলো এখনকার নৌকোর মতো এতটা আরামদায়ক, টেকসই এবং দুর্যোগ মোকাবেলার উপযোগী ছিল না। কিন্তু কাফেলার কাছে সে দুর্বল নৌকোগুলোও জেহাদে প্রাপ্ত গনিমতের চেয়ে কোনোভাবেই কম ছিল না।
কাফেলা নৌকোয় আরোহন করলেন। শুরু হলো এক নতুন সফর। নৌকো সমুদ্রে ভাসলো। সাগরের উত্তুঙ্গ ঢেউগুলো যেন একটা খেলনা পেয়ে গেল। নৌকোটি নিয়ে তারা ভলিবল খেলা শুরু করে দিল। একটা ঢেউ নৌকোটিকে আরেকটা ঢেউয়ের মাথায় উড়িয়ে মারতে লাগলো। আরোহি সবাই ভয়ে জরোসরো হলেও নাবিক যেন অপচল মৌনি পাহাড়। তার শক্ত হাতে ধরা হাল নৌকোটিকে দিগভ্রান্ত হতে দিচ্ছিল না। ফেনিল তরঙ্গের অহংকারি সফেদ মস্তক ভেঙে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল নৌকোটি। গন্তব্য তাদের দক্ষিণ দিকে। মহাদেশের সীমা পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার উদ্দেশ্যে। অজানা অচেনা হাবশা অখিমুখে।
অব্যাহত দাঁড় বেয়ে একসময় তারা পৌঁছে গেলেন “বাবুল মুনদিবে”। স্থানটা আরব উপদ্বীপ আর আফ্রিকার উপকুলের মধ্যবর্তী একটা সংক্ষীর্ণ স্থান। তাঁরা চলছিলেন নাজাশির দেশে। মক্কায় থাকতে জানতে পেরেছিলেন তিনি একজন মহৎপ্রাণ শাসক। নিজ প্রজাদের উপর যেমন অত্যাচার করেন না, তেমনি কোনো অত্যাচারিকেও দুচোখে দেখতে পারেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মজলুমদের জন্য তিনি বটবৃক্ষের মতো শান্তি ও নিরাপত্তার ছায়া দাতা। আরবের এই মুহাজির কাফেলা একসময় পৌঁছে গেলেন তাঁদের গন্তব্যে। পেয়ে গেলেন নিরাপদ আশ্রয়। জীবন চলতে লাগলো তাদের নতুন আঙ্গিকে।
আপনারা নিশ্চয় জানেন এই কাফেলার সদস্য কারা ছিল? কেন তারা বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে এই দূর হাবশায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল।
তারপরও কিছুটা বলি, তখন মক্কার ফারানের গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছিল এক আলোর ঝর্ণা ধারা। এই লোকগুলো সেই ঝর্ণায় অবগাহন করে হয়ে উঠেছিল আলোকিত। অন্ধকারের জীবগুলো এই অপার্থিব আলো আর আলোকিত মানুষগুলোকে সহ্য করতে পারছিল না। তারা মূর্খতা আর কুসংস্কারের তলোয়ার দিয়ে অহর্ণিশ এদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল। জীবন যখন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল তখন আলোর পাখি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এই আলোকিত সাথীদের বললেন পারলে তোমরা হাবশায় চলে যাও। ওখানকার মহৎপ্রাণ বাদশাহ নাজাশি নিশ্চয় তোমাদেরকে আশ্রয় দিবেন। সুতরাং সত্যের খাতিরে এই আলোকিত লোকগুলো নিজেদের ঘরবাড়ি, ক্ষেতখামার এবং গবাদি পশুগুলো পেছনে ফেলে সামান্য কিছু শুকনো খাবার নিয়ে রাতের অন্ধকারে অজানা অচেনা গন্তব্যের পানে বেরিয়ে পড়েছিলেন।