কমাশিসা ডেস্ক:
খুলনার ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তার পিতা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী হত্যার মোটিভ উদঘাটিত হয়েছে। ইলিয়াসকে হত্যার পর পাঁচ যুবক পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণ করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। ধর্ষণের চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করে নরপিচাশরা। খুলনায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার হওয়া লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য দিয়েছে। জোড়া খুনের তিন দিনের মধ্যে রহস্য উন্মোচিত হলো। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পলাতক চার যুবককে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চালাচ্ছে অভিযান।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, রোববার রাতে খুলনা মহানগরীর গল্লামারী এলাকা থেকে মো. লিটন নামের এক যুবককে আটক করে মহানগর পুলিশ। লিটন সোমবার দুপুরে মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সে জানান, ধর্ষণের আগে পারভীনের বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা পাঁচজন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর আদালতের নির্দেশে লিটনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে খুলনার বুড়ো মৌলভীর দরগাহ্ এলাকার তিন নম্বর সড়কে এপি ভিলা নামের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুলনার এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা (২৪) ও তাঁর বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরীর (৭০) মৃতদেহ উদ্ধার করেন পারভীনের ভাই রেজাউল আলম। ওই বাড়িতে নিহত দু’জনই থাকতেন বলে জানিয়েছেন রেজাউল।
জোড়া হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহতদের জনশূন্য বাড়িতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়। ওই চুরির সূত্র ধরে পুলিশ লিটনকে আটক করে।
খুলনা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু জানিয়েছেন, রোববার রাতে গল্লামারী এলাকা থেকে লিটনকে পুলিশ আটক করে। এই এলাকায় লিটনের বাড়ি হলেও সে ঢাকায় সদরঘাট এলাকায় জুতার দোকানে কাজ করে। তিনি আরও জানান, এলাকায় লিটন বখাটে এবং মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। লিটন পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে ওই জোড়া খুন করার কথা স্বীকার করেছে।
সোমবার দুপুরের পর মো. লিটনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর খাস কামরায় জবানবন্দি নেয়া শুরু হয়।
লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন জানান, লিটনের ১৬৪ ধারা জবানবন্দি লিখতে গিয়ে মহানগর হাকিমের চোখেও পানি চলে আসে।
তিনি আরও জানান, লিটন স্বীকার করেছে, সে নিজেসহ মোট পাঁচ যুবক পারভীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। লিটন জানায়, অনেকদিন থেকে তারা (লিটনসহ পাঁচ যুবক) পারভীনের ওপর নজর রাখছিলো। সে সহ পাঁচ যুবক শুক্রবার সন্ধ্যার পর পরই পারভীনদের বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকেই তারা পারভীনের বৃদ্ধ বাবা ইলিয়াস চৌধুরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর পাঁচজন পারভীনকে ধর্ষণ করে। এ সময় অনেক আকুতি-মিনতি করলেও তারা কোন কথাই শোনেনি। ধর্ষণ ও খুন করে তারা রাত ৯টার পর বাইরে তালা দিয়ে চলে যায়।
লিটনের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি জানান, পারভীন ব্যাংক থেকে বাসায় আসার পথে বিভিন্নভাবে তাকে অশালীন প্রস্তাব দিতো লিটন। পারভীন এসব পাত্তা দিতেন না। এর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে মাস খানেক ধরে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে লিটন।
পারভীনকে খুন করার ব্যাপারে লিটন জানায়, তাদের চিনে ফেলায় পারভীনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে বাবা ও মেয়ে দু’জনের লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়া হয়।
এর আগে পুলিশের কাছে লিটন জানায়, পারভীনকে ধর্ষণের চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ সেই ভিডিও এবং বাকি চার যুবককে খুঁজছে। পারভীনের কম্পিউটারটি লিটনসহ ওই যুবকরা চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে লিটন।
এর আগে গত শনিবার রাতে নিহত পারভীনের ভাই রেজাউল আলম বাদী হয়ে জমির দালাল নওয়াব আলী ও আসলাম মিস্ত্রিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ নওয়াব আলীকে আটকও করেছে।
উল্লেখ্য, ইলিয়াস চৌধুরী ও মেয়ে পারভীন সুলতানা বুড়ো মৌলভীর দরগাহ সড়কের বাড়িতে গত তিনবছর ধরে বসবাস করছিলেন।
এর সূত্র ধরেই লিটনসহ স্থানীয় বখাটেরা নানাভাবে তাদের উত্ত্যক্ত করতো। কেউ মেয়েকে যৌন হয়রানি আবার কেউ তার বাবার কাছে অর্থ ধার চাইতো। এ সব বিষয় নিয়েই বখাটেরা তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
এর মধ্যে কয়েক মাস আগে পারভীন সুলতানা বুড়ো মৌলভীর দরগাহ্ সেতুতে উঠলে লিটন তার ওড়না ধরে টান দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পারভীন নিজের হাতে থাকা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করেন। এতে সে প্রতিশোধ নেয়ার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় আরও চারজনকে সঙ্গে নিয়ে মোট পাঁচজন ১৯শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় মই দিয়ে দেয়াল পেরিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় দরজা খোলা থাকায় তারা ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাবা ইলিয়াস চৌধুরীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। তার চিৎকারে মেয়ে পারভীন এগিয়ে গেলে তাকে বিবস্ত্র করে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পরে ঘরের বাইরে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে লাশ গুমের চেষ্টা করে তারা।
এদিকে, বিকাল ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটানোর পর যাওয়ার সময় আলমারি থেকে তারা নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে এ টাকা ভাগাভাগি করে যে যার মতো চলে যায়। কিন্তু অন্য চারজন আত্মগোপন করলেও লিটন পুরো বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতায় ভুগছিলো। সে কারণে সে পালায়নি বলেও আদালতে দাবি করেছে।
সুত্র: অনলাইন পত্রিকা