বিজ্ঞানীরা মানবকল্যাণে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা মানুষের কল্যাণে উদ্ভাবন করেছেন নানা প্রযুক্তি। এরপরও তারা বসে নেই। মানবজাতির কল্যাণে তারা ব্যাপক গবেষণা অবাহত রেখেছেন। বিজ্ঞানীদের কল্যাণে যন্ত্র বা সফটওয়্যারের; এমনিক রোবটের ব্যবহারও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন একটি রোবট আবিষ্কার করেছেন, যা সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে পারে। এখন চলছে এ প্রযুক্তির উন্নয়ন, আধুনিককায়ন এবং অধিকতর ব্যবহারের চেষ্টা। সাধারণত সাংবাদিকদের তথ্যকে লিখিত রূপ দেয়ার কাজটাই তো করতে হয়। তাই বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এ রাবট বর্তমান তথ্যপ্রবাহের যুগে সাংবাদিকতার জগতে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। পাশাপাশি এ রোবট সাংবাদিক, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং গোয়েন্দা সংস্থার জন্য প্রতিবেদনও লিখতে পারবে। নতুন উদ্ভাবিত এ রোবটটির নাম কুইল। কুইল তৈরি করার কৃতিত্বের দাবিদার যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের। এটি সংখ্যাভিত্তিক তথ্য-উপাত্তকে লিখিত প্রতিবেদনের আকার দিতে পারে।
কুইল আগে থেকেই টেলিভিশন এবং অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের জন্য বেসবল খেলার প্রতিবেদন লেখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর মতো একাধিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কুইল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। সফটওয়্যার যদি ভালো বাক্য লিখতে পারে, তাহলে মানুষের পরিশ্রম অনেকটাই হ্রাস পাবে। তাই সাংবাদিকতা ও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে মানবকর্মীর বিকল্প হিসেবে এ কুইল প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই সম্ভাবনাময়। ন্যারেটিভ সায়েন্সের প্রধান কর্মকর্তা স্টুয়ার্ট ফ্রাংকেল বলেন, মানুষের বিকল্প কুইল প্রযুক্তির সম্ভাব্যতা জানতে তারা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়েছেন। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে টি.রো প্রাইস, ক্রেডিট সুইস এবং ইউএসএএ প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে কুইল সফটওয়্যার ক্রয় করেছে এবং সেইসাথে যান্ত্রিক এই লেখার পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে। ফ্রাংকেল আরো বলেন, একদল সেনা বা মানুষের এক সপ্তাহের পরিশ্রমের সমান কাজ কুইল সফটওয়্যার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে। ন্যারেটিভ সায়েন্সকে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) বিনিযোগ বিভাগ। ফ্রাংকেল মনে করেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতায় মুখোমুখি হচ্ছে। কুইল সব মিলিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ শব্দ নিয়ে কাজ করে। তবে সংখ্যাসূচক কোনো তথ্যের সাহায্য ছাড়া এটি লিখতে পারে না। কুইল সফটওয়্যার তথ্যের পরিসংখ্যাননির্ভর বিশ্লেষণ এবং একইসাথে গুরুত্বপূর্ণ নানা ঘটনা বা ধারা পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি এটি দেউলিযাপনা, মুনাফা ও রাজস্ব প্রভৃতি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মৌলিক ধারণা রাখতে পারে। মোটকথা, কুইল সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পাঠানোর উপযোগী অনুচ্ছেদ লিখতে পারে, যা পড়ে মনে হবে যেন কোনো কম্পিউটার আপনা আপনিই লিখেছে।
ক্রিস্টিয়ান হ্যামনন্ড যিনি নর্থয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউটার বিজ্ঞানী তিনি বলেন, লেখার বিভিন্ন নিয়ম বা কৌশলের সমন্বয়েই সুইল সফটওয়্যারটির প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে; যেমন- পৃষ্ঠাসজ্জা, কীভাবে একটা ধারণা বর্ণনা করার জন্য কোনো বাক্য শুরু করতে হয়, বাক্য ও অনুচ্ছেদ গঠন, পুনরাবৃত্তি এড়াতে হয়, সংক্ষেপ করতে হয় ইত্যাদি। কোনো প্রতিষ্ঠান তার নীতিমালা অনুযায়ী কিছু বাক্য ও শব্দ লেখার ধরন ও কৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে কুইলকে প্রোগ্রামটিকে নির্ধারিত করে দিতে পারে। একটি নির্দিষ্ট অবস্থান বা পক্ষ নিয়ে কুইল লিখতে পারবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রচার চালানোর কাজে; যেমন- খেলাধুলার ক্ষেত্রে কুইল একটি নির্দিষ্ট দলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবেদন লিখতে পারে। কুইল সফটওয়্যারের সাহায্যে মানুষের স্বাভাবিক ভাষা রচনার পরিবর্তে বাণিজ্রিক সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা বেশি বলে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল হোয়াইট মনে করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যারিয়া যন্ত্রের সাহায্যে লেখার পদ্ধতি নিয়ে ন্যারেটিভ সায়েন্সের পাশাপাশি কাজ করছে। এ প্রযুক্তির উন্নয়নে স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদর গবেষক নিয়োজিত আছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পিটাসবুর্গের প্রতিষ্ঠান অনলিবোথ যাত্রা শুরু করে এবং তারা লেখার উপযোগী প্রথম কুইল সফটওয়্যার বাজারে ছাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এ বছরের মধ্যে।
Check Also
The Origins of Islamic Science
by: Muhammad Abdul Jabbar Beg In the following well documented article Dr Muhammad Abdul Jabbar ...