জুলফিকার মাহমুদী::
বড় অংকের অর্থ উপার্জন করলেই ধনী হয় না মানুষ। সত্যিকার সম্পদ তাই যা আপনি সঞ্চয় করতে পেরেছেন। আপনি সঞ্চয় করতে পারছেন কিনা তা বুঝতে পারেন কি? এখানে বিশেষজ্ঞরা ৯টি লক্ষণের কথা তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, আপনি যথেষ্ট সঞ্চয় করতে পারছেন না।
১. আপনি প্রতিমাসের বিলগুলো সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারেন না। মোবাইল বিল বা অন্যান্য বিলগুলো আপনি খুব কমই পরিশোধ করতে পারেন। এর অর্থ আপনার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ পয়সা থাকে না। উন্নতির জন্যে দুটো অপশন রয়েছে। আরো বেশি উপার্জন করুন অথবা কম খরচ করুন। প্রথম অপশনে যেতে হলে নতুন কিছু করতে হবে। আর দ্বিতীয় পথে যেতে জীবনযাপন বদলান।
২. যখনই বেশি উপার্জন করতে শুরু করেন, তখনই আপনার মনে হয় যে এখন থেকেই বেশি বেশি সঞ্চয় করবেন। আসলে এটা এক ধরনের মিথ্যা যা কখনোই ঘটে না। ‘রিয়েল মানি অ্যানসারস ফর এভরি ওমেন’ বইয়ের লেখক এবং বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিস সি ওয়াশিংটন জানান, যারা সঞ্চয় করতে পারেন তারা যেকোনো আয়েই করতে পারেন। উপার্জন বৃদ্ধির সঙ্গে যে সঞ্চয়ের সুযোগ বৃদ্ধি পায় তা নয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন বছর বা উপলক্ষের জন্যে অপেক্ষায় থাকবেন না। যতটুকুই উপার্জন করেন না কেন, সেখান থেকে কিছুটা সঞ্চয় করুন।
৩. আপনি উপার্জন করছেন, কিন্তু অবসরের জন্যে এখনো সঞ্চয় করা শুরু করেননি। এমনটা হলে বোঝা যাবে আপনার সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ নাই। অর্থাৎ, আপনি অর্থ সব বেহিসাবী খরচ করে ফেলছেন। এর জন্যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকলে প্রোভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয় করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, উপার্জন মাত্রই এ কাজটি শুরু করলে।
৪. অনেক পরিস্থিতিতেই বেশি খরচের উপলক্ষ আসবে। যেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন বা সন্তানের পিতা-মাতা হচ্ছেন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাড়তি অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়ে। আর এসব ক্ষেত্রে পয়সার জোগান না থাকার মানে আপানার অর্থব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু নয়। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দিতে তাকান। কি ধরনের পরিস্থিতির উদয় হবে বা কোন ক্ষেত্রে খরচের খাত তৈরি হবে তা বোঝার চেষ্টা করুন। সেই উপলক্ষে অল্প অল্প অর্থ জমাতে থাকুন।
৫. যারা চাকরি করেন এবং সঞ্চয়ী তারা কোনো সাইড ব্যবসায় সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন। কাজটি যত দ্রুত শুরু করা যায়, ততই ভালো। যদি দেখেন, এ কাজের অর্থ আপনার কাছে নেই, তখন বুঝে নিন আপনি সঞ্চয়ী নন। অবসরের জন্যে সঞ্চয় এক ধরনের বিনিয়োগ। স্বল্প পরিমাণে বিনিয়োগের নানা খাত রয়েছে। এগুলো খুঁজে দেখুন।
৬. জরুরি অবস্থার জন্যে কোনো ফান্ড না থাকাও সঞ্চয় না করার লক্ষণ। চিকিৎসার জন্যে খরচ এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব জরুরি ফান্ড গঠন করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ের উৎস না থাকলেও পরবর্তী ৬ মাস চলার মতো অর্থ জরুরি ফান্ডে থাকা উচিত।
৭. বাসস্থানের জন্যে মানুষ বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। যদি দেখেন যে, আয়ের ৪০ শতাংশ আপনি কেবল বাসস্থানের পেছনে খরচ করছেন, তবে বুঝে নিন, আপনার সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। নতুন অ্যাপর্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। তাই খরচ কমাতে হবে এবং সঞ্চয়ের জন্যে যথেষ্ট অর্থ বেঁচে যাবে।
৮. খরচের খাত সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই আপনার। আয়ের পয়সা কোন কোন পথে যাচ্ছে তা জানেন না আপনি। কাজেই সঞ্চয়ের জন্যে অর্থ থাকে না আপনার কাছে। বিশেষ করে, বাইরে নিয়মিত খাওয়া বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে বেহিসাবী খরচের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। যে খাতেই খরচ করেন না কেন, তার হিসাব রাখতে হবে। এসব খরচ লিখে রাখুন। তালিকাটি ক্রমেই পরিচিত হয়ে উঠবে। তখন কোথায় কত অর্থ যাচ্ছে তা হিসাবে থাকবে।
৯. অসংখ্য মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু মাস শেষে কার্ডের ন্যূনতম পরিমাণ পরিশোধের পয়সা থাকে না। কাজেই আপনার অর্থের অপচয় ঘটছে এবং সঞ্চয় নেই। বেহিসাবী খরচের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে থাকে। এ পরিস্থিতি সামলাতে খরচের অন্য খাত থেকে অর্থ বাঁচিয়ে ক্রেডিট কার্ডে পরিশোধ করুন। মিনিমাম পেমেন্টের চেয়েও বেশি প্রদানের সক্ষমতা থাকতে হবে। বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে বিপদে পড়ে যাবেন। কাজেই সঞ্চয়ের দিকে খেয়াল রাখুন।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার