এমন নির্লজ্জ মিথ্যা লিখতে কি ওদের হাত কাঁপে না?
বলা হয় তারা শায়খ। ইসলামিক স্কলার! অমুক-তমুক ডিগ্রিধারী। কিন্তু যখন কলম হাতে নেন,দুহাত খোলে মিথ্যা লিখেন। কোরআন-হাদীস নিয়ে দাগাবাজি, জালিয়াতি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের বাটপারিতে মেতে ওঠেন। তাদেরই একজন প্রফেসর এ.এইচ.এম শামছুর রহমান। বই লিখেছেন “হিদায়া কিতাবের একি হিদায়াত” নামে। প্রকাশনায় সালাফী পাবলিকেশন্স।
লিখেছেন ফিকহে হানাফীর হেদায়া কিতাবের ভুল ধরতে। বাংলা ভাষায় একটি কথা আছে, পাগলে কিনা বলে-ছাগলে কি-না খায়। এ উক্তির সাথে তার বইয়ের বড্ড মিল।
বইয়ের শুরুতে তিনি লিখেন: “হেদায়াতে আছে, মাথা মাসহ-এর ক্ষেত্রে মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ স্পর্শ করা ফরজ। অথচ আল্লাহ কুরআনে সূরাহ আল মায়িদা এর ৬নং আয়াতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করার হুকুম। (হিদায়া কিতাবের একি হিদায়াত, পৃষ্টা নং-৯)
প্রথমে সূরা মায়েদার আয়ত দেখুন:আল্লাহ বলেন: وامسحوابرؤوسكم” অর্থাৎ তোমরা মাথা মাসেহ কর। এখানে আল্লাহ শুধু মাথা মাসেহ করার কথা বলেছেন। পরিমাণের উল্লেখ নেই। কিন্তু পণ্ডিতজি অনুবাদ করেচেন সমস্ত মাথা মাসেহ কর। যেটা পরিস্কার ভুল। আয়াতের সঠিক অনুবাদ করতে পারে না; অথচ বাহাদুরি কেতনা!
২য় কথা হল, হেদায়া কিতাবের এ বক্তব্য একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। নিম্নে কয়েকটি হাদীস তুলে ধরছি।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : رَأَيْتُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- يَتَوَضَّأُ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ قِطْرِيَّةٌ ، فَأَدْخَلَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ الْعِمَامَةِ فَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِهِ ، وَلَمْ يَنْقُضِ الْعِمَامَةَ
অর্থাৎ: হযরত আনাছ বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূল সাঃকে ওযু করা অবস্থায় দেখলাম, এমতাবস্থায় তার মাথায় কাতারী কাপড়ের পাগড়ী ছিল। রাসূল সাঃ পাগড়ীর নিচ দিয়ে হাত প্রবেশ করালেন এবং মাথার সামনের অংশ মাসেহ করলেন। রাসূল সাঃ পাগড়ী খোলেননি। (সুনানে আবু দাউদ, ১৪৭. ইবনে মাজাহ, ৫৬৪. আল মুসতাদরাক, ৬০৩. সুনানে বায়হাকী, ১/৬০)
এবার আপনি মাথাকে হিসেব করে দেখুন, সামনের অংশ সমম্ত মাথার চারভাগের একভাগ হয়।
عَنْ حَمْزَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ : تَخَلَّفَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَتَخَلَّفْتُ مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى حَاجَتَهُ قَالَ :« هَلْ مَعَكَ مَاءٌ ؟ ». فَأَتَيْتُهُ بِمَطْهَرَةٍ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ ، ثُمَّ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ ، فَأَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ ، وَأَلْقَى الْجُبَّةَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ ، فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى خُفَّيْهِ.
অর্থাৎ,মুগীরা বিন শু’বা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ এর পিছনে ছিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রওয়াজন শেষ করে আমাকে বললেন: তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি এক মটকা পানি নিয়ে আসলাম। রাসূল ওযু কররেন……..এবং মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করলেন। বাকী অংশ পাগড়ীর উপর মাসেহ করলেন। (মুসলিম, ৬৫৬. নাসায়ী, ১০৮. আল মু’যামুল আওসাত, ৩৪৪৮)
*عَنْ عَطَاءٍ { أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَحَسَرَ الْعِمَامَةَ وَمَسَحَ مُقَدَّمَ رَأْسِهِ ، أَوْ قَالَ نَاصِيَتَهُ }
অর্থাৎ: আতা রহঃ থেকে বর্ণিত: রাসূল সাঃ ওযু করলেন। তখন মাথার সম্মুখ ভাগ/চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করলেন। (আ সুনানুল কুবরা, ১/৬১. হাদীস নং-২৬৫)
* عن الزهري عن سالم عن أبيه أنه كان يمسح بمقدم رأسه إذا توضأ
অর্থাৎ: সালেম তার পিতা ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন ওযু করতেন, তখন মাথার সম্মুখের অংশ মাসেহ করতেন। (শরহু মাআনিল আছার, ১/৩২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ)
এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করলাম। এ বিষয়ে আমি পূর্বে বিস্তারিত লিখেছি। মূর্খ লোকগুলোকে জিজ্ঞাসা করা দরকার যে, রাসূলের ওযু হয়েছে কিনা? এটা হিদায়ার ভ্রান্ত কথা, নাকি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
আসলে মূর্খরা নিজেদের মূর্খতাকে বেশিদিন ঢেকে রাখতে পারে না। তা জাতির সামনে প্রকাশ হবেই।
লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামেয়া আবু বকর সিদ্দিক রা., ঢাকা।
আরও পড়ুন :
৪র্থ পর্ব- এ কেমন অসত্য প্রচার?
৫ম পর্ব- সহীহ হাদীসের নামে মুজাফফার বিন মুহসিনের দাগাবাজি (২)