এক : আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মস্থল ও সেনাবাহিনীতে শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের ধর্মানুসারে পাগড়ি পরতে পারে, হাতে বালা পরিধান, মাথায় লম্বা চুল ও দাড়ি রাখতে পারে। এমনকি সাধারণ শিখরাও সঙ্গে কৃপাণ বহনের অধিকার সংরক্ষণ করে। তাহলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র -ছাত্রীরা ইসলামী বিধান অনুসারে পোশাক পরিধানের অধিকার হারাবে কেন?
দুই : শিক্ষাগার বা অফিস-আদালতে ধর্মীয় পোশাক পরা যাবে – রায় দেন ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত। এ স্বাধীনতা ততক্ষণ পর্যন্তই সমর্থনযোগ্য, যতক্ষণ না সেটা অন্য কারো অধিকার খর্ব করছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেয়া এ রায়ে একদিকে যেমন সব ধর্মাবলম্বীকে ধর্মবিশ্বাস থেকে পোশাক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তেমনি আবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যের প্রতি অবিচার না করার বিষয়টিকে সবসময় গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে খুব জোর দিয়ে। জার্মানির বর্তমান আইন অনুযায়ী অন্য কারো অনুভূতিতে কোনো আঘাত না করলে, কারো জন্য কোনো শঙ্কার জন্ম না দিলে শিক্ষাগার বা কর্মক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এক খ্রিস্টান কর্মী কাজের সময় ‘ক্রস’ পরতে চাইলে তাকে কাজ করার সুযোগ না দিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ওই বিমান সংস্থার নিয়োগ কর্তারা।আদালত সবার জন্য ধর্মীয় পোশাক পরার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।এতে হস্তক্ষেপ অপরাধ প্রতিপন্ন হয়। গোটা ইউরোপে যদি ধর্মীয় পোশাক পরা অধিকার হয়, তাহলে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন নয়?
তিন : ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচারাল এন্ড টেকনোলোজির কথা বলছি। ছাত্র – ছাত্রীরা সেখানে পাজাবী, টুপি,পাগড়ী কিংবা হিজাব পরিধান করতে পারেন না। এ পোশাকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেন না।রিসিপশনিস্ট তাদেরকে অপমান করে।কিন্তু কেন?
কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা আলিমুল্লাহ মিয়ান এ পোশাক পছন্দ করেন না। সেখানে জিন্স পরে ক্লাস করা যাবে, কিন্তু শালীন পোশাকে নয়।
চার : মিয়ানের এই স্বেচ্ছাচার ও ঔদ্ধত্যের গোড়া কোথায়? ২০১২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসিকে জানানো হয় ছাত্র -ছাত্রীর শালীন পোশাক পরার অধিকারে হস্তক্ষেপ না করার জন্য।তারপরও তিনি থামছেন না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তার চেয়ারে বসে ধর্ম,সংস্কৃতি,মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে একটি লোক।কিন্তু কেন নিশ্চুপ এ দেশের মিডিয়া?
পাঁচ : এর আগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইশফাক ইলাহী এ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। ড্রেসকোর্ডের নাম করে হিযাব নিষিদ্ধ করেছিলেন। হিযাব পরার “অপরাধে “বহিস্কার করেছিলেন হাফসা ইসলামকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেন নি এক হাফসার সাথে।মিয়ান এ থেকে কিছুই শিখেন নি।মীর জাফর হবার অভিপ্রায় তার জেগেছে। খুব দ্রুতই তাকে পরাজয় মানতে হবে।এর মধ্য দিয়ে জাতি আরেকবার বুঝতে পারলো আগের মীর জাফর আস্তানা গেড়েছিলো কাশিম বাজার কুঠিতে, এখন তাদের বিচরণ বিশ্ববিদ্যালয়েও!
লেখক : কবি ও গবেষক