Thursday 21st November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: বিকাল ৫:৩০
Home / আমল / মুহাররাম : অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের সংগ্রাম।

মুহাররাম : অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের সংগ্রাম।

Komashisha-_-Atik-Nogoriআতিকুর রহমান নগরী ::
লেখাটি বিদ্রোহি কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সারা জাগানো কবিতার কয়েকটি পংক্তি দিয়ে শুরু করছি।
‘‘ফিরে এলো আজো সেই মোহররম মাহিনা, ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।
নীল সিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া, ‘আম্মা ! লা’ল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া !
কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে, সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে !’’
১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। এক তাতপর্যময় দিন। ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহম্মদ সা.’র প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন রা.’র আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হৃদয়বিদারক স্মৃতিবিজড়িত এই দিন। ফোরাতের তীরে এক কাফেলায় প্রাণ দিলেন নিদারুণ পিপাসায়। সামনে বিশাল ফোরাত নদী-। পানি আর পানি। কিন্তু এক ফোঁটা পানি জোটেনি পিপাসার্র্থ শিশুর জন্যও। বড় বেদনার্ত, বড় করুণ সেই ইতিহাস। কিন্তু এই বেদনা আমাদের শুধুই শোকে মুহ্যমান করে না বরং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে, আত্মত্যাগে সাহসী হতে।
অযোগ্য, অত্যাচারী ও জালিম শাসক এজিদের ইসলামী খেলাফতে আহরণের মাধ্যমেই সূত্রপাত কারবালা ট্রাজেডির। এজিদের কুশাসন কুফাবাসীর ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসলে এর নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে কুফাবাসী ইমাম হোসেন রা.কে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। অনাচার ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইমাম হোসেন রা. পরিবারবর্গ ও অল্প কিছু সঙ্গী নিয়ে কুফার উদ্দেশে যাত্রা করেন। তারা কারবালা প্রান্তরে পৌঁছলে এজিদের বিশাল বাহিনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন। তারা ইমাম হোসেন রা.কে এজিদের আনুগত্য স্বীকার নতুবা যুদ্ধ এ দুইয়ের যে কোনো একটি পথ বেছে নেয়ার আহ্বান জানায়। ইমাম হোসেন রা. ও সঙ্গীরা এজিদের সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হয় এক অসম যুদ্ধ। পানি তৃষ্ণায় হোসেন রা.-এর সঙ্গী-সাথীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। শিশুরা পানি পানি বলে আর্তচিতকার করতে থাকে। পাষণ্ডরা পানির জন্য ছটফট করতে থাকা সকল নিষ্পাপ শিশু ও নারীদের ওপরও নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে শহীদ করে দেয়।
শুধু কারবালার সেই বিয়োগান্তক কাহিনীর জন্যই নয়, ১০ মহররম আরো অনেকগুলো কারণে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাতপর্যপূর্ণ। ইসলাম ধর্মমতে পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা এই দিনে, কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ও হবে এই একই দিনে। এই পবিত্র দিনে জন্ম নিয়েছিলেন প্রায় ২ হাজার পয়গাম্বর যাদের ফরিয়াদ বিভিন্ন সময় আল্লাহ কবুল করেছিলেন। এই দিনে আদি পিতা হযরত আদমের আ. তওবা কবুল হয়েছিল। হযরত আইউব আ. মুক্তি পেয়েছিলেন কঠিন ব্যাধি থেকে। হযরত ইউনুস আ. উদ্ধার পেয়েছিলেন মাছের উদর থেকে। মুসা আ. ও তাঁর সঙ্গীরা রেহাই পেয়েছিলেন ফেরাউনের দুঃশাসন থেকে। তবে হযরত ইমাম হোসেন রা.-এর সপরিবারে শাহাদাতবরণের ঘটনা ১০ মহররমকে দিয়েছে বিশেষ মাত্রা, বিশেষ মহিমা। এ দিন শুধু শোক আর বেদনার নয়, অনুপ্রেরণারও। ১০ মহররম আমাদের অনুপ্রাণিত করে অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, আত্মত্যাগে। ইমাম হোসেন রা. অসত্য-অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। এজিদের অন্যায় দাবি মেনে নেয়ার পরিবর্তে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন এক অসম যুদ্ধে। ইমাম হোসেন রা. আজ অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে গণ্য।
বিশ্বজুড়ে আজ চলছে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্ব। অসত্য-অন্যায়, উগ্রবাদ, অত্যাচার-নিষ্ঠুরতাই সর্বত্র প্রবলভাবে বিরাজমান। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইমাম হোসেন রা. কারবালায় আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই চেতনার অভাবের কারণেই আজ অসত্য ও অন্যায়ের প্রবল প্রতাপ। বিশ্বজুড়েই দেখা যায় দুর্বলের ওপর সবলের আঘাত। পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অনুধাবন ও পালন করা হয় না বলেই জাতিতে জাতিতে এই বিদ্বেষ। কারবালার শিক্ষা আমাদের অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার সাহস জোগায়। আত্মত্যাগের আহ্বান জানায়। সেই চেতনাকে ধারণ করতে না পারলে শুধু আহাজারি আর মাতম করে কোনো ফল হবে না। তাই আশুরার এই দিন শুধু শোক-মাতমের নয়, অসত্য, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদর্শের লড়াইয়ের শপথ নেয়ার দিন। ‘ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’- এটিই হোক এ দিনের মূলমন্ত্র।

লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
০১৭২২ ৮৯২১৩৯

Check Also

টুপি

হাদীসে কি টুপির কথা নেই?

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমদাদুল হক :: টুপি মুসলিম উম্মাহর ‘শিআর’ জাতীয় নিদর্শন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ...