Thursday 21st November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: রাত ৮:২৪
Home / অনুসন্ধান / মিডিয়া ও আমাদের অমার্জনীয় ব্যর্থতা।

মিডিয়া ও আমাদের অমার্জনীয় ব্যর্থতা।

আবুল হুসাইন আলেগাজী ::

মিডিয়া 02(এ লেখাটি পাঁচ বছর আগের। এর আবেদন ওই সময়ের চেয়ে আরো বেড়েছে মনে হচ্ছে। এতে পাঁচ বছর পূর্বে আমার মন-মানসিকতা কেমন ছিল, তাও জানতে পারবেন)

আমার মনে হয়, পৃথিবীতে আমরা বাঙালীদের মত কোন হুজগে জাতি আর নেই। এর কারণ কি জন্মগত না পরিস্থিতির চাপ তা বুঝা মুশকিল। তবে আমরা ১৭৫৭-১৯৪৭ প্রায় দুইশত বছর ছিলাম বৃটিশ ও তাদের অনুগত হিন্দু জমিদারদের প্রভুত্বের শিকার। সম্ভবত এ কারণেই আমাদের মানসিকতা অন্যান্য জাতির চেয়ে দুর্বল তথা হুজুগে। দীনদার বলুন আর দুনিয়াদার বলুন, কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে এশিয়ার মধ্যে আমরাই সবচেয়ে পিছিয়ে বলে আমার মনে হয়। ১৯৭১ সালে হিন্দুত্ববাদী ভারত এগিয়ে না এলে আমরা আমাদের বীরত্ব দিয়ে পাকিস্তানী জালিমদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারতাম না বলেই আমি মনে করি। বর্তমানে নারী নেতৃত্বের যে অভিশাপ আমাদের পিছু ছাড়ছে না, তার কারণও আমাদের দুর্বল মানসিকতা বলে আমি মনে করি।
শত শত বছর ভারত উপমহাদেশ শাসনকারী আমাদের পূর্বসূরীদের অধিকাংশই ইসলামের প্রচার-প্রসারের পরিবর্তে মগ্ন ছিলেন ক্ষমতা কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব ও ভোগবিলাসে। ফলে তারা তাজমহল নির্মাণ করতে সক্ষম হলেও কোন আল-আযহার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়নি। অভিশপ্ত সম্রাট আকবর আবিষ্কার করেছিল দীনে ইলাহী, হুমায়ূন ইরানীদের অনুমতি দিয়েছিল কুখ্যাত শীয়া মতবাদ প্রচারের আর সম্রাট জাহাঙ্গীর ইংরেজদের অনুমতি দিয়েছিল ব্যবসার আড়ালে শাসক হবার পথ সুগম করার। ফল যা হবার তাই হল। এরপর কত ব্যথা ও যন্ত্রণার কাহিনী। পলাশী, বালাকোট, বাঁশের কেল্লা ও সিপাহী বিপ্লবসহ আরো অসংখ্য ট্রাজেডী। শেষ পর্যন্ত ইসলামের নামে আমরা পেলাম পাকিস্তান নামের ভারত উপমহাদেশের দুইটি মুসলিমপ্রধান অঞ্চল। সিংহভাগ চলে গেল মূর্তিপূজারীদের হাতে। এরপর দীনের প্রতি অঙ্গীকার পূরণের পরিবর্তে ভোগ এবং সুখের প্রতি অতি আসক্ত হবার কারণে আমরা ইংরেজদের জারিকৃত শাসন, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থার ইসলামীকরণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দান করি। সন্তুষ্ট হই মসজিদ-মাদ্রাসায় দীনি আলোচনার অধিকার পেয়ে। ফলে মানবতা বিধ্বংসী লাল মরণব্যাধি ‘সমাজবাদ’ নামধারী নাস্তিক্যবাদ আজ আমাদেরকে গিলে খাওয়ার হুমকি দিচ্ছে এবং তাদের সামনে অসহায় হয়ে হাত-পা নাড়া ছাড়া আমাদের যেন আর কোন গত্যান্তর নেই। শিক্ষা, প্রশাসন, বিচার, সংস্কৃতি ও মিডিয়া সর্বত্র এদেরই জয়জয়কার। এরা আমাদেরকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল, জঙ্গীবাদী প্রভৃতি শব্দে প্রতিনিয়ত গালাগালি করছে, অন্ধকারকে আলো বলে প্রমাণ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে এবং পূর্ব (ব্রিটিশ আমল) থেকে আইনসিদ্ধ ‘জেনা’র চেয়ে আরো ঘৃণ্য ‘সমকামিতা’সহ সকল প্রকার উলঙ্গপনাকে সমাজ স্বীকৃত করার দাবী জানাচ্ছে। ওরা বাংলাদেশকে আস্তিক স্পেন নয়, নাস্তিক রাশিয়া বানানোর পথে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে বামপন্থী প্রভাবিত খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানানোর সকল আয়োজন খুব জোরেশোরে শুরু হয়েছে। বামপন্থী তথা নাস্তিক্যবাদী মিডিয়া উপজাতিদের আদিবাসী বলে প্রচার করে বাঙ্গালীদের সেখানে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা তাদের মোকাবেলায় উপযুক্ত ভূমিকা পালন করাতো দূরের কথা, তাদের এ জঘন্য তৎপরতার খবরটাও রাখার জন্য অর্থ ও সময় দিতে প্রস্তুত নই।

মিডিয়া 01এক সময়ের ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের উর্বরভূমি বোখরা-সমরকন্দ এখনও মুসলিম নামধারী নাস্তিকদের দখলে। ইংরেজদের জারিকৃত শাসন, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থা ইসলামের নামে সেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই এ দেশের প্রায় ৯০% মুসলমানকে ইসলাম থেকে প্রায় ৯০% বিচ্যুত করে। ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার আজ ৬৪ বছরেও ইসলামী দলগুলো কোন নির্বাচনে মুসলিম ভোটের ১০% এর বেশী পায়নি। তাদেরকে লেজুড়বৃত্তি করতে হচ্ছে ইসলামের প্রতি অঙ্গীকারমুক্ত দলগুলোর। ইংরেজদের জারিকৃত শাসন, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থা থেকে আমরা ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে না পারায় বর্তমানে আমাদেরকে গ্রাস করে বসেছে নারী নেতৃত্বের অভিশাপ। এ ব্যাপারে বর্ণিত সুনানুত তিরমিযী শরীফের ২২৬৬ নম্বর হাদীছটি উল্লেখ না করে থাকতে পারলাম না। হযরত আবু হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখন তোমাদের ভালরা তোমাদের শাসক হবে, তোমাদের ধনীরা দানশীল হবে ও তোমাদের কাজকর্ম পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে, তখন তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ট (বেঁেচ থাকা) ভূগর্ভের (লড়াই করে মরে যাওয়া) চেয়ে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের দুষ্টরা হবে তোমাদের শাসক, তোমাদের ধনীরা হবে কৃপণ ও তোমাদের কার্যক্রম অর্পিত হবে নারীদের কাছে, তখন তোমাদের জন্য ভূগর্ভ (লড়াই করে মরে যাওয়া) ভূপৃষ্টের (বেঁচে থাকা) চেয়ে উত্তম হবে।”

বর্তমানে নাস্তিক্যবাদের অতি নিকটবর্তী দলটিই ক্ষমতায়। এর আগে ক্ষমতায় থাকা ইসলামের নিকটবর্তী হওয়ার দাবীদার দলটি নাস্তিকদের সকল প্রকার স্বাধীনতা নিশ্চত করায় আজ দেশের গণমাধ্যম তথা মিডিয়ার ৯০% তাদের দখলে। অন্যদিকে যেসব মিডিয়া ইসলামকে সমর্থন করে, তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাস্তিক্যবাদী মিডিয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পায় না। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোনটির কথা বলবেন ? সবখানেই আজ নাস্তিকরাই ক্ষমতাধর। যেমন এটিএন, আরটিভি, এনটিভি, ইটিভি, দেশটিভি, বৈশাখী, বাংলাভিশন, চ্যানেল আই, সব এফএম রেডিও, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক সমকাল, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক ডেসটিনি, দৈনিক আমাদের সময় ও তাদের সকল সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা, দৈনিক সংবাদ, ডেইলি স্টার, ডেইলি সান, ডেইলি নিউ এজ প্রভৃতি। ইউএনবি, বিডিনিউজ, বাংলা নিউজ ও ফোকাস বাংলাসহ প্রায় সব নিউজ এজেন্সি এবং দুয়েকটি বাদে সকল সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক ম্যাগাজিন। এসব মিডিয়ার মালিকদের অনেকে আস্তিক হলেও ব্যবসার স্বার্থে তারা নাস্তিকদের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করছে। অনেকে নাস্তিকদের নিয়ন্ত্রিত এসব মিডিয়ায় মাঝে-মধ্যে ‘ধর্মের বাণী’ দেখতে পেয়ে খুব খুশী হয়। হ্যা! এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সারাক্ষণ নাস্তিক্যবাদ চর্চকারী এ নাস্তিকরা ‘ধর্মের বাণী’ ছাপে শুধুমাত্র তাদের ভাষায় নির্বোধ ও পশ্চাদপদ তথা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ আস্তিকদেরকে তাদের ব্যবসা ও প্রচারের আওতাভুক্ত রাখার জন্য, যেমন ধর্মহীন রাজনীতিক দলগুলো মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য মাঝে-মধ্যে ধর্মের কথা বলে।
অতীব দুঃখের বিষয়, আজ নাস্তিক্যবাদের মোকাবেলায় উপযুক্ত ভূমিকা পালনকারী কোন মুসলিম মিডিয়া এ দেশে নেই। অথচ শুধুমাত্র আমরা দেওবন্দী ধারার লোকজনই যদি জানবাজি রাখি, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী শক্তিকে হটিয়ে এ দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নেওয়া কোন ব্যাপার নয়। ৩২ বছর আগে ইরানে খোমেনীর নেতৃত্বে যে শিয়া বিপ্লব সঙ্ঘটিত হতে পেরেছে, তা তাদের জানবাজি রাখার কারণেই। কিন্তু পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যাপারে জানবাজির সাহস ও জ্ঞান কোনটিই আমাদের না থাকায় আজ জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারকারী একটি মিডিয়া পর্যন্ত আমাদের হাতে নেই। তাই আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী হচ্ছে কমপক্ষে একটি দৈনিক পত্রিকা হলেও বাজারে আসা, যেটি নাস্তিক্যবাদের মোকাবেলায় কঠিন ভূমিকা পালন করার সাথে সাথে শাসন, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থার ইসলামীকরণের গুরুত্ব, যৌক্তিতা ও দাবী তুলে ধরবে। আজও এদেশে ইসলামে বিশ্বাসী প্রচুর যোগ্য যুবক ও তরুণ রয়েছে, যারা এক্ষেত্রে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত। এখনো যদি আমরা বিভক্ত থেকে নিজ নিজ ঘরোয়া রাজত্ব নিয়ে আত্মতৃপ্ত থাকি, তাহলে ইতিহাস এবং মহান প্রভুর আদালত আমাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবে না। হতে পারে, বোখারা-সমরকন্দের আলিমগণের মত আমরা আমাদের জীবদ্দশাতেই ওদের নির্মম নিধনযজ্ঞের সম্মুখীন হব। তখন আমাদের আম-ছালা তথা দুনিয়া-আখেরাত উভয়টাই হারাতে হবে।

পাকিস্তানের দেওবন্দী ধারার আলিমগণ বৃহৎ দীনি স্বার্থে ব্রেলভী ও শিয়া সম্প্রদায়ের সাথে জোটবদ্ধ হতে পারলে আমরা দেওবন্দীগণ সবাই কেন এক হতে পারব না। পাকিস্তানের আলিমগণের সাহসী ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে আজ সেখানে সাধারণ আদালতের পাশাপাশি শরীয়া আদালত বিদ্যমান এবং সকল কওমী শিক্ষা সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ডেইলি ডনের মত কিছু পত্রিকা সেখানে নাস্তিক্যবাদ প্রচারে নিযুক্ত থাকলেও নাস্তিকরা সেখানে আমাদের দেশের মত এত শক্তিশালী নয়। ভাবলে বিস্মিত হই, ৬০% মুসলমি অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেও আমরা ৯০% মুসলিমের দেশে আজও শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবীটাও কেউ তুলছে না। আমাদের অবস্থা এরকম হলে বিচার বিভাগের নাস্তিকেরা ফতওয়া ও হিজাবের বিরুদ্ধে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে রায় দেওয়ার সাহস বার বার দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ কয়েক বছর পূর্বে কানাডা সরকার পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েছিল যে, মুসলমানরা চাইলে সরকার তাদের জন্য শরীয়া আদালত গঠন করবে। কিন্তু মুসলমানদের চাওয়া দুর্বল থেকে যাওয়াই তা হয়তো আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তা ছাড়া কিছুদিন আগে ব্রিটেনের এক যাজকও মুসলমানদের জন্য শরীয়া আদালত গঠন করার প্রস্তাব করেছিল।

সম্মানিত ইসলামী নেতৃবৃন্দ, আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ দায়বোধ ও কল্যাণকামিতা থেকেই কথাগুলো বললাম। এটা মানা না মানা আপনাদের বিষয়। আমি আমার বিবেকের কাছে দায়মুক্ত হবার চেষ্টাই করেছি। নতুবা আপনাদের বিরক্ত করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও আমার নেই। ইতোপূর্বে মিডিয়াসহ সর্বক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে শক্ত ভাষায় কিছু লেখা প্রকাশ করার কারণে আমাকে প্রচুর মানুষ অভিনন্দন জানালেও অনেক মানুষ আমাকে গালি ও হুমকি দিয়েছেন এবং শত্রু ভেবেছেন।

আবুল হুসাইন আলেগাজী

০১-১১-২০১০

Check Also

rush biman3

রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে ধুম্রজাল !

বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা হলেই নানা ধরনের তত্ত্ব চাউর হয়। মিসরের সিনাই উপত্যকায় যাত্রীবাহী রুশ ...