পাশ্চাত্যের পরিবার ব্যবস্থাপনা নীতিকে আমরা ঘৃণা করি। কারণ সেখানে ১০ বছরের সন্তান পিতা-মাতার মমতা থেকে বঞ্চিত হয়। বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে একাকী জীবন যাপন করতে হয়। অনেককে আবার বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়।
মৌলিকভাবে তাদের সবকিছু অপছন্দ করা সঠিক। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের নীতি গ্রহণ করে তারা উন্নতি করছে আর আমরা আমাদের নীতি ভুলে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছি।
ভাবনাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে তাদের জীবন যাপনের ভিন্ন কিছু চিত্র সামনে আসে। যেমন সন্তানকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে আমাদের সাথে পশ্চিমা কিংবা অন্য জাতির খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে সন্তানের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, স্বাধীনতার প্রশ্নে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য সুস্পষ্ট।
আমাদের পরিবেশে জীবনের শুরুর দিকে সন্তানকে যোগ্যতার দীক্ষা প্রদানের পরিবর্তে শাসনের দিকেই বেশি দৃষ্টি দেয়া হয়। সীমাহীন ভালোবাসা দেখিয়ে অযোগ্য বানিয়ে তোলা হয়। এই জায়গায় পশ্চিমাদের চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সন্তানকে ছোটবেলা থেকে তার দক্ষতা,কর্মক্ষমতার সাথে পরিচিত করে তোলে। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হবার সাথে সাথে সে নিজের ভাবনা, দক্ষতাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে। পার্থিব উন্নতির পথে দ্রুত এগিয়ে যেতে পেরে। নিজের বিষয়ে যখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। তাই ভিন্নভাবে ভাবলে পশ্চিমাদের এই নীতি খুব একটা খারাপ নয়।
আমাদের পরিবেশে একজন পিতা তার পুরো জীবন সন্তানের লালন-পালনে কাটিয়ে দেন। সেই সন্তান যখন পিতা হয়, তার জীবনও এভাবে কেটে যায়। এই নীতির ফলে ঘরে বসে খাওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। অলসতা, অক্ষমতা এই নীতির ফলেই সৃষ্ট। এই নীতির ফলে একজন রোজগার করে দশজন বসে খায়। পুরো জীবন সন্তানের সুখ শান্তির জন্য উৎসর্গ করেও অনেক সময় দেখা যায়, বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতা সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যান!
আমি যা বুঝি, সন্তান লালন-পালনে ইসলামের নীতি হচ্ছে, সন্তানকে উত্তমরূপে শিক্ষা দেয়া। আল্লাহ্ তায়ালার ও রাসূলের প্রতি প্রতি বিশ্বাস রেখে ইসলামের আলোকে জীবন যাপনের জন্য প্রস্তুত করা। একজন মুমিন হিসেবে যাতে সে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে পারে, আপ্রাণ সেই চেষ্টা করা। পুরো জীবন গাধার মতো খেটে সন্তানের জন্য সম্পদের পাহাড় বানানো পিতা-মাতার মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আমার ভাবনার শুদ্ধতা অশুদ্ধতা সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালাই ভালো জানেন।