খতিব তাজুল ইসলাম ::
বাংলাদেশের সরকারি স্কুল তথা হাইস্কুল পর্যায়ের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন শিক্ষা বা সেক্স বিষয়ক শিক্ষা চালু হওয়া নিয়ে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পক্ষে বিপক্ষে চলছে জোর দালিলিক তৎপরতা। ক্লাস সিক্স থেকে শুরু হওয়া এই শিক্ষা যাদের দেয়া হচ্ছে তাদের বয়স তখন বয়সন্ধীকাল বলা যায়। বয়প্রাপ্ত হওয়ার সময়। ছেলে/মেয়ে ১৩-১৪ বছরের কিশোর কিশোরীদের জন্য এই নতুন শিক্ষা বিষয় অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলছে। যদিও উন্নত বিশ্বে তথা ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে তা বহু আগ থেকে চালূ আছে। প্রশ্ন হলো একটি মুসলিম দেশের জন্য তা কতটুকু প্রয়োজনীয় ও দরকারী বিষয়?
‘হায়া বা লজ্জা শরম ঈমানের অঙ্গ’। মুসলমানরা কখনো বেহায়া বা নির্লজ্জ হতে পারেনা কোন ভাবেই।
এবার আসি ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির দিকে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের ২টি হলো নামাজ ও রোজা। প্রতিনিয়ত নামাজের জন্য পাক পবিত্রতার বিষয়। রামাদ্বান আসলে রোজা রাখা। তেমনি পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের জন্য বা তাওয়াফ ইত্যাদির জন্য পাক-ছাপ থাকা জরুরী। যাকে আমরা গোসল ও অজু বলে জানি। সাত বছর হলে নামজের শিক্ষা দাও ১০বছর হলে শাসন করে নামাজ পড়াও। বালিগ হলেপর ছেলে মেয়েদের উপর নামাজ রোজা ফরজ হয়ে যায়। পর্দার বিষয় ও অন্তর্ভুক্ত। সেহেতু এখানে একজন ছেলেকে তার যৌবন সম্পর্কে ধারনা থাকা খুবই জরুরী যে, কি কি কারণে গোসল ফরজ হবে আর কোন কারণে অজু জরুরী। ঠিক তেমনি ভাবে মেয়েদের বেলায়ও হায়েজ নেফাস সহ যৌবন সংক্রান্ত মাসআলা গুলো জানা একান্তভাবে জরুরী। কারণ বুলুগিয়াতের সাথে ফরজ ইবাদত সমূহ সম্পৃক্ত। তাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ি এসকল বিষয় জানা ছেলে মেয়েদের জন্য অত্যাবশক।
আমাদের মাদরাসাগুলোতে কিন্তু তা পড়ানো হয়। বেহেশতি জেওর নুরুলইজা কুদুরি সহ ফেক্বাহর সকল কিতাবে এসব বিষয় বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা আছে এবং ছাত্র ছাত্র্রীদের খোলে খোলে বলা হয়। মাদরাসায় অবশ্য মেয়েদের বিষয় মহিলা শিক্ষিকার মাধ্যমে আর ছেলেদের বিষয় পুরুষ শিক্ষকের মাধ্যমে পড়ানো হয়। এখানে জরুরী একটি বিষয় জানা থাকা দরকার যে, মাদরাসা গুলোতে কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ানো হয়? মাসাআলা সমুহ জানানোর উদ্দেশ্য যাতে শরীয়তের বিধি বিধান মানতে তাদের জন্য সুবিধা ও আসান হয়।
কিন্তু স্কুলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি কি? বলা হতে পারে শারিরিক বিষয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দান। শৈশব পেরিয়ে কৈশর তারপর যৌবনের শুরুটা ছেলে-মেয়েদের জন্য থাকে খুব উত্তেজনাকর। তাই তাদের গাইড লাইন প্রদান। স্কুল গুলোতে পাক পবিত্রতা বা ইবাদতের কোন সাবজেক্ট নেই যৌবনের শিক্ষায়। আছে কেবল শরিরিক পরিবর্তনে যে কামানা বাসনা বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তার সহজ নিয়ম কানুন ও উপায় বাতলিয়ে দেয়া। সাফ কথায় নিরাপদ সেক্স বা যৌন মিলন এটাই মুল উদ্দেশ্য। একেতো সহশিক্ষা, যুবক যুবতি ছেলে মেয়েদেরকে একসঙ্গে পাঠদান। দ্বিতীয়ত নারী শিক্ষিকা অথবা পুরুষ শিক্ষক একত্রে একসঙ্গে যখন পাঠদান করবেন তখন কল্পনা করুন পরিস্থিতি কি দাড়াচ্ছে? মুসলমান হিসাবে ইসলামের মূল বিষয় একমাত্র বিবাহের মাধ্যেম যৌন মিলনই বৈধ। সেখানে তাদের তো হালাল হারামের কথা বলা হয়না। নিরাপদ যৌন মিলনের নামে জিনা ব্যভিচারের বাজার গরম করতে, ইউরোপ ও অন্যান্য উলঙ্গ দেশের ন্যায় বেহায়া পরিস্থিতি তৈরী করতেই এই শিক্ষা চালু করা হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
তাইতো ফ্রি কন্ডমের আওয়াজ কানে কানে ভাসছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ কিন্তু বৈদেশিক সাহায্য দেওয়ার সময় এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেয় যাতে থাকে অবাধ যৌনাচার সমকামিতার অধিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নাস্তিকতা সহ আরো অনেক ইসলাম ও মুসলিম সমাজ বিরুধী কর্মকান্ড সমূহ। তা্ই আমাদের ইসলাম প্রিয় জনতা ও আলেম উলামাগণের উদ্দেশ্যে বলবো যে, আপনারা যদি শুধু মসজিদ মাদরাসা আর খানকায় বন্দী হয়ে থাকেন তাহলে আগামি ১০বছর পর বাংলাদেশে বিবাহকে মান্দাত্মা আমলের আর জিনাকে বৈধ ও আধুনিকতার পরিচায়ক হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করেব নতুন প্রজন্মরা।
এই সেদিন দেখলাম একজন মন্ত্রী বলেই ফেললেন যে, মানসিক শান্তি ও ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য পরকীয়া তেমন অন্যায় কিসে?
তাই ফেবুতে লেখালেখি করে কেউ তা বাতিল করতে পেরেছেন? বা কিছু প্রতিবাদ বিবৃতি দিয়ে কাজ হয়েছে? হবেনা। আপনাকে মেইন স্রুতে প্রবেশ করতে হবে। তখন পরিবর্তনের আওয়াজ তুললে কাজ হবে নতুবা নয়।
আমার আক্ষেপ জাগে যে, যারা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিবেন তাদের নিজেদের মাঝেই বত্রিশ টুকরা হয়ে বসে আছেন। একটি মুসলিম দেশের জন্য সার্বজনীন ইসলাম বান্ধব একক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের এই পরাজয় ও গ্লানীর অবসান হওয়ার কোন আলামত এখনও দেখছিনা। নিকট ভবিষ্যতে নিরসন হবে বলে কোথাও কিছু নজরে আসছে না যে।
আরও পড়ুন