একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় সবার সামনে শেয়ার করছি৷ আশাকরি বিষয়টির প্রয়োজন অনুধাবনপূর্বক পরামর্শ ও মতামত জানাবেন৷
(এক) খেয়াল করে দেখবেন, সরকারি কলেজ-ভার্সিটি ছাড়াও বেসরকারি কলেজ-ভার্সিটির সংখ্যা এত অধিক পরিমাণ যে, মাদরাসার তুলনায় অন্তত দশগুণ বেশি৷ ওদিকে শুধু দাওরা হাদীস পর্যন্ত প্রতিটি মাদরাসার ছাত্রের তুলনায় একেকটি ভার্সিটির ছাত্রের সংখ্যা অন্তত দশগুণ বেশি৷ সেদিন প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের উপর সরকার কর্তৃক ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিল দেখে মনে মনে ভাবলাম, এক প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্ররাই পুরো সিটি পয়েন্ট অচল করে দিলো, তাহলে সিলেটের সবগুলো ভার্সিটির ছাত্রের সংখ্যা কী পরিমাণ হতে পারে!
(দুই) ওদিকে বিরাট একদল ছাত্রসমাজ যেমন শিক্ষাব্যবস্থার কুপ্রভাবে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করছে, সেক্যুলার প্রভাবে দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ করে দিচ্ছে৷ আবার বিরাট আরেকদল ছাত্রসমাজ দ্বীনমুখী হচ্ছে৷ নিজের আখেরাত সাজানোর জন্যে পূর্ণ প্রচেষ্টায় রয়েছে৷ দ্বীন শেখার জন্যে হন্য হয়ে ফিরছে দিগ্বিদিক৷ কিন্তু দ্বীনের প্রকৃত রূপরেখা ও তার সহজবোধ্যতা তাদের সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে না৷ কিছু কিছু জায়গা থেকে কতেক এখতেলাফপূর্ণ মাসআলা বুঝিয়ে তাদের বলা হচ্ছে, এটাই দ্বীন৷ যদিও বিচক্ষণ ও দূরদর্শীরা ঠিকই বুঝে নিতে পারে আসলে এর নাম প্রকৃত দ্বীন না৷ কিন্তু যারা বুঝে না (এবং এদের সংখ্যাই বেশি) তারা তো বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খেতেই থাকে৷ তবুও দ্বীনহীনতা থেকে এরকম আংশিক দ্বীন শেখাকেই সমর্থন করি৷ তাদের ভেতর দ্বীনি চেতনা এবং তাকাযা তো সৃষ্টি হচ্ছে৷ এটাই বা কম কীসে?
(তিন) আমাদের সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে, সারাজীন কালিমাটা না শিখলেও কেউ বলবে না যে, কালেমা শিখে নাও৷ না শিখলে তার কিছু আসে যায় না৷ এই দুনিয়ার জীবনে কালিমা না জানলেও সে আটকা পড়বে না৷
আবার আমাদের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে, একজন ভালো ছাত্র যখন বোর্ডে স্ট্যান্ড করে, মুমতায লাভ করে উত্তীর্ণ হয়, তখন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাকে সেখানেই রেখে দেন শিক্ষকতার জন্যে৷ একজন বিজ্ঞ আলিমের দায়িত্ব কী শুধু মাদরাসায় পড়ানো? মসজিদে ইমামতি করা? চার দেওয়ালের ভেতরে থেকে ইলমে-দ্বীন অর্জন করে ফের এই চার দেওয়ালের ভেতরে থেকেই জীবন পার করে দেয়া? এটাই কী لينفروا كافة এর দাবি?
(চার) বাইরের ময়দান বৃষ্টিহীন মরুভূমির মতো খাঁখাঁ করছে৷ গাছপালা উজাড় হয়ে যাচ্ছে ইলম ও দাওয়াত নামক বৃষ্টির অভাবে৷ আবার এই গাছপালা থেকে আমরা ফসল আশা করি৷ এটা কী কখনও সম্ভব?
আমাদের আকাবির তথা পূর্বসুরি উলামায়ে কেরাম সব সেক্টরে কাজ করেছেন৷ দাওয়াতী মেহনত করেছেন, বিধায় আমরা সুন্দর অনুকূল একটি পরিবেশ ও সমাজ পেয়েছি৷ আজ আমরা যদি দ্বীনের দাওয়াতী মেহনতের সবচে উর্বর ভূমিকে পতিত রেখে দেই, তাহলে ভবিষ্যতে এই জাতি তার দ্বীনকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাবে৷ আমাদের উত্তরসূরিরা সংখ্যালঘু হিসেবে নিষ্পেষিত হওয়া তাদের নিয়তি হয়ে যাবে৷
(পাঁচ) তাই দেশব্যাপী একঝাঁক তরুন, বিজ্ঞ, দক্ষ, নির্লোভ, নিরহঙ্কার, প্রতিভাবান আলিম দরকার, যারা কলেজ-ভার্সিটির ভাইদের পেছনে সময় দিবেন৷ তাদের দ্বীনবিষয়ক যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিবেন৷ এই লেখাটি যারা পড়বেন, সকলেই সাথে আরও দুই-চারজন নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন৷ দেখবেন এরচেয়ে মজার কাজ আপনার কাছে আর কিছুই মনে হচ্ছে না৷ প্রথমে একটু কেমন কেমন লাগবে৷ পরবর্তীতে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠলে এই মেহনত আপনার কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠবে৷
লেখক : শিক্ষক ও অনলাইন এক্টিভিটস