আমরা এমন এক মহান পুরুষের কথা আলোচনা করবো যিনি হাদিসের ভালোবাসায় উজাড় করে দেন তার সমস্ত জীবন-হাদিসই ছিল তার জীবন সাধনা। কে এই কীর্তিমান জ্ঞানতাপস? হ্যাঁ তিনি আর কেউ নন- তিনি হলেন ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম ও জ্ঞান বিশারদ ইমাম আবু দাউদ (রহ.)। তার প্রকৃত নাম সুলাইমান ইবনে আশ আস ইবনে ইসহাক আস সিজিস্তানি। আবু দাউদ তার উপনাম। ইমাম আবু দাউদ ২০২ হিজরিতে সিন্ধু ও হেরাতের মাঝামাঝি প্রসিদ্ধ শহর সিজিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। এখানকার বাসিন্দা হিসেবে তাকে সিজিস্তানিও বলা হয়ে থাকে। তিনি যখন কিশোর বয়সে পদার্পণ করেন তখন ছিল ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ। সে-সময় এলমের সন্ধানে জ্ঞান পিপাসুরা ছুটে চলেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর জীবনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নিজ জন্মভূমিতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি এলমের সন্ধানে শুরু করেন দেশ ভ্রমণ। এলমের মতো মহাদৌলত অর্জনের জন্য তিনি হেজাজ, মিসর, সিরিয়া, আলজেরিয়া প্রভৃতি ইসলামী দেশ সফর করেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) যে-সব ইসলামী পন্ডিতের কাছে এলম অর্জন করেন তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর ওস্তাদের সংখ্যা ৩০০ এর কাছাকাছি ছিল।
তন্মধ্যে জুহাইর ইবনে হারব, ইবনুল মাদিনি, মুহাম্মদ ইবনে বাক্কার, ইমাম আহমদ কানবি, মুসলিম ইবনে ইবরাহিমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গতানুগতিক পড়ালেখার মাধ্যমে প্রকৃত আলেম হওয়া যায় না। প্রকৃত আলেম হতে হলে এলম শিক্ষার পাশাপাশি তা আমল করতে হয়। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে যেমন উঁচুমানের আলেম বা জ্ঞান তাপস ছিলেন- তাকওয়া, ইবাদত, ত্যাগ ও সেবার ক্ষেত্রেও তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে হাফেজ ইবনে কাছির (রহ.) বলেন, ইমাম আবু দাউদ (রহ.) হাদিস বর্ণনা, ইবাদত ও দুনিয়া-বিমুখতায় তার সময়ের অদ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর মধ্যে ফিকহি রুচি প্রবল ছিল। এ কারণে আল্লামা আবু ইসহাক শিরাজী (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তবকাতুল ফুকাহায়’ কেবল ইমাম আবু দাউদ (রহ.)-কে স্থান দিয়েছেন। এমনকি তার ফিকহি রুচি প্রবল থাকায় আবু দাউদ শরিফকে আহকাম সম্পর্কিত হাদিসের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। ফিকহ সংশ্লিষ্ট হাদিসের যত বড় ভাণ্ডার আবু দাউদ শরিফে রয়েছে তা কুতুবে সিত্তার অন্য কোনো গ্রন্থে নেই। এক সময় ইসলাম তথা বিশ্বজ্ঞান-বিজ্ঞানের উজ্জ্বল তীর্থ কেন্দ্র ছিল ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। বড় বড় সাহাবা, পীর-আওলিয়ার বসবাস ছিল এ বাগদাদ নগরীতে। ইসলামী খেলাফতের নানা ইতিহাস জড়িত এখানে। বড় বড় জ্ঞানী-গুণীদের বসবাসের ফলে বাগদাদ হয়ে উঠেছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে স্বর্গরাজ্যে। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর জন্মভূমি সিজিস্তান হলেও জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটান বাগদাদে। এখানে বসেই তিনি মুসলিম বিশ্বকে উপহার দেন আবু দাউদের মতো বিশাল গ্রন্থ। তার কর্মমুখর দিনগুলো বাগদাদেই অতিবাহিত হয়েছিল। একদিন হঠাৎ বসরার আমীর আবু আহমদ আল-মুজাফফাক তাঁর বাড়িতে উপস্থিত। আমীরের আকস্মিক আগমন দেখে তিনি কারণ জানতে চাইলেন। আমীর বিনয়ের সাথে জানালেন, আমি তিনটি প্রয়োজনে আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি।
এক. আপনি বসরায় চলুন। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের লোক আপনার নিকট দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করবে।
দুই. আমার পুত্ররা আপনার সংকলিত দাউদ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করে এলম অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা নেবেন।
তৃতীয়. আমার সন্তানদের জন্য পৃথক দরস-এর আয়োজন করবেন। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) আমীরের প্রথম দুটি শর্ত মেনে নিলেও তৃতীয়টির ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, এলম গ্রহণের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সকলেই সমান। আমীরের অনুরোধে তিনি বসরায় গমন করেন এবং সেখানে হাদিসের দরস চালু করেন। হাদিসের দরসে আমীরের পুত্ররা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একই সাথে শিক্ষা গ্রহণ করত। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিপুল রচনাসম্ভার রেখে গেছেন। তবে মুসলিম জাহানে তাঁর সাড়া জাগানো গ্রন্থই হচ্ছে আবু দাউদ শরীফ। পাঁচ লক্ষ হাদিসের বিশাল ভা-ার থেকেই চার হাজার ৮০০ হাদিস সংগ্রহ করে তিনি আবু দাউদ শরিফ রচনা করেন। এ মহান পুরুষ ২৭৫ হিজরির ১৬ শাওয়াল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বসরায় হাদিসের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-এর কবরের পাশে তাকে দাফন কর হয়। পাশাপাশি শুয়ে আছেন হাদিসের দুই শীর্ষ তারকা। -শহিদ
Check Also
Can anyone become a Muslim?
Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...