Thursday 2nd May 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: দুপুর ১:০১
Home / Today / সাইয়েদ কুতুব শহীদ : দ্বীনি আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উত্‍স

সাইয়েদ কুতুব শহীদ : দ্বীনি আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উত্‍স

ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উত্‍স ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, আলেমেদ্বীন, সু-সাহিত্যিক, কবি, নিবন্ধকার, খ্যাতিমান সাংবাদিক ও দার্শনিক আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহ.।
তাঁর নাম সাইয়েদ। বংশীয় উপাধি কুতুব। পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব। তার পূর্বপুরুষগণ আরব উপদ্বীপে ছিলেন। সেখান থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তারা পাচ ভাই-বোন ছিলেন। সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মদ কুতুব, হামীদা কুতুব ও আমেনা কুতুব প্রমুখ। তিনি ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। তারা সকল ভাই-বোন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তাঁরা দ্বীনি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অতুলনীয় ত্যাগ ও কুরবানী করেছেন। দিয়েছেন ঈমানী দৃঢ়তার পরিচয়।
আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহ. ১৯০৬ সালে মিসরের উসইউত জেলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মুহতারামা মাতা ফাতিমা উসমান অত্যন্ত দ্বীনদার ও খোদাভীরু মহিলা ছিলেন। তাঁর মুহতারাম পিতা হাজী ইবরাহীম কুতুবও অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। পেশায় ছিলেন চাষী।
আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহ. তাঁর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। মুহতারামা মাতার ইচ্ছানুসারে তিনি শিশুকালে প্রবিত্র কুরআনুল কারীম হিফজ করেন। পরবর্তীতে তাঁর পিতা কায়রো শহরের উপকণ্ঠে হালওয়ান নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। তাই তিনি সেখানকার তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম এ ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করে কায়রোর বিখ্যাত দারুল উলুমে ভর্তি হয়ে ১৯৩৩ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। বছর কয়েক অধ্যাপনা করার পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। মিসরে ঐ পদটিকে অত্যন্ত সম্মানজনক বিবেচনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই তাঁকে আধুনিক শিক্ষা অর্জনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সেখানেই থাকাকালে তিনি বস্তুবাদী সমাজের দুরাবস্থা লক্ষ্য করেন।তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, একমাত্র ইসলামই সত্যিকার অর্থে মানবসমাজকে কল্যানের পথে নিয়ে আসতে পারে। উপলব্ধি করেন ইসলামী সংগঠনের বিকল্প নেই। দেশে ফিরে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি যাচাই করেন। ১১৪৫ সালে যোগ দেন ইখওয়ানুল মুসলিমীনে। সক্রিয়ভাবে কাজ করে যান।
১৯৪৯ সালে ১২ মার্চ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোরশেদে আম উস্তাদ হাসানুল বান্না শাহাদাত বরন করেন এবং ইখওয়ানুল মুসলিমীন বেআইনি ঘোষিত হয়। ইংরেজি ১৯৫২ সালে জুলাই মাসে সামরিক বিপ্লব হয়। ঐ বছরই দলটি নিষিদ্ধ হওয়া থেকে পুনরায় বহাল হয়ে যায়। ড. হাসানুল হোদাইবি দলের মোরশেদে আম নির্বাচিত হন। তখন সাইয়েদ কুতুব দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ছ’মাস পরই কর্নেল নাসেরের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। এরপর শুরু হয় সংগঠনের উপর নির্যাতন। একটি বানোয়াট হত্যার অভিযোগে ইখওয়ানুল মুসলিমুনকে বেআইনি ঘোষণা করে দলের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় সাইয়েদ কুতুব শহীদও গ্রেফতার হন। তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তার হাতে-পায়ে শিকল পরানো হয়। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় তাকে হেটা জেলে যেতে বাধ্য করা হয়। পথে তিনি কয়েকবাব বেহুশ হয়ে পরে যান। যখনই হুশ আসত তখনই বলতেন আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
সাইয়েদ কুতুবসাইয়েদ কুতুব শহীদকে জেলে ঢোকানোর সাথে শুরু হল নির্যাতন। তারপর একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় তার পিছে। কুকুর তার পায়ে কামড়ে ধরে জেলের আঙ্গিনা ঘোরায়। এগুলো তার জন্য সহ্যযোগ্য ছিল না। কিন্তু তার সুদৃঢ় ঈমানের বলে পাষাণ প্রাচীরের ন্যায় সব অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেন আর বলতে থাকেন, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহহিল হামদ। এভাবে কারাগারে দীর্ঘদিন থাকার পর ১৯৬৪ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম আরিফ মিশর সফরে যান। তিনি তার মুক্তির সুপারিশ করলে কর্নেল নাসের তাকে মুক্তি দিয়ে তারই বাসভবনে অন্তরীণ করে।একবছর যেতে না যেতেই তাকে আবার বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অতচ তিনি তখনও পুলেশের কড়া পাহারায় ছিলেন। শুধু তিনি নন, তার ভাই মুহাম্মদ কুতুব, বোন হামিদা কুতুব ও আমেনা কুতুবসহ বিশ হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬৫ সালে কর্নেল নাসির মস্কো থাকাকালীন বিবৃতিতে বলেন, খওয়ানের কর্মীরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারপর গণহারে  গ্রেফতার শুরু হয়। ১৯৬৬ সালে আগস্ট মাসে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর দু’জন সাথীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ শুনানো হয়। চারদিকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু তৎকালীনা সরকার কোনোকিছুকে পাত্তা না দিয়ে ২৫ আগস্ট ১৯৬৬ সালে আদেশ কার্যকর হয়। শহীদ হন সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহ.। ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা হযরতের দরজা বুলন্ধ করুন । দ্বীনের জন্য প্রতিটি ত্যাগের উত্তম বদলা দান করুন। আমাদেরকেও দ্বীনি আন্দোলনের জন্য কবুল করুন। আমিন!
 লেখক : সম্পাদক, সিলেটের ধ্বনি

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...