Saturday 23rd November 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: দুপুর ২:০৭
Home / Today / পুরোটাই ভারতের লাভ

পুরোটাই ভারতের লাভ

ট্রানজিটচারদেশীয় সড়ক যোগাযোগ কার্যতঃ ‘অন্ধকে হাতি দেখানোর’ নামান্তর। আন্তঃদেশীয় এ যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঝুলিতে নতুন কিছুই জুটছে না। বরং চার দেশীয় যোগাযোগের নামে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতকে ট্রানজিট দেয়া ইস্যুতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদী হওয়ায় সুকৌশলে চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগ প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে। এ চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের লাভের খাতা শূন্যই থাকবে। আর লাভের পুরোটাই ভারত ঘরে তুলবে- এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগের মোড়কে ভারতীয় যান চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হবে ৪০ হাজার কোটি থেকে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। নামে ‘চারদেশীয় কানেকটিভিটি’ বা বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল) বলা হলেও থিম্পুতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারতের মাত্র তিনটি শহরেই সীমাবদ্ধ থাকছে বাংলাদেশের যানবাহন চলাচল। অপরদিকে ভারত বাংলাদেশের ভূখ-ের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের দুই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে ভারত। এদিকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য প্রস্তাবিত শুল্কের ৭৬ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়। বিবিআইএন অনুযায়ী, রুট চূড়ান্ত করা হলেও শুল্ক নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে শুল্কের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই আগামী জানুয়ারী থেকে চার দেশের মধ্যে যান চলাচল শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক পথে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রতিটন পণ্য পরিবহনের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা ২৫ পয়সা চার্জ আদায়ের প্রস্তাব করেছে ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটি। কিন্তু কোর কমিটির প্রস্তাব উপেক্ষা করে তা ১ টাকা ২ পয়সা নির্ধারণ করে প্রস্তাব দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আপত্তি তুলে পুনরায় প্রস্তাব দিতে বলেছে ট্রানজিট ফি নির্ধারণ-সংক্রান্ত যৌথ কারিগরি কমিটি (জেটিসি)। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জেটিসির বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়। বিষয়টি কবে চূড়ান্ত করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, বিবিআইএন একটি স্বপ্ন, যা সত্য হতে চলেছে। এ ধরনের চুক্তি সাধারণতঃ কাগজেই থাকে, বাস্তবায়ন হয় না। তবে চার দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছায় আগামী জানুয়ারিতেই বিবিআইএনের আওতায় চার দেশের মধ্যে যান চলাচল শুরু হবে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট বা কানেকটিভিটি- আমরা যে নামেই বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করি না কেন, মূল বিষয় হচ্ছে একটি- এই মুহূর্তে ভারতের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখ-। এতে একতরফাভাবে ভারতই লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের কানেকটিভিটি ঠিক এমনটি নয়। গত ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ‘বিবিআইএন’ (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল) চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নোডাল অফিসার্স কমিটির সভায় ছয়টি রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের তিনটি পূর্ণাঙ্গ ও একটি আংশিক, ভুটানের একটি পূর্ণাঙ্গ ও একটি আংশিক এবং নেপালের একটি। রুটগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নামে চতুর্দেশীয় কানেকটিভিটি বলা হলেও বাংলাদেশের যানবাহনকে ভারতের মাত্র তিনটি শহরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে কলকাতা, শিলিগুড়ি ও গুয়াহাটি। এর মধ্যে কলকাতা ছাড়া বাকী দু’টি ভারতের বাণিজ্যিক শহর নয়। ফলে বাংলাদেশ ভারতের মাত্র একটি বাণিজ্যিক শহরে প্রবেশ করতে পারছে।এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবির বলেন, বিবিআইএন চুক্তির আওতায় ভারত বলা হলেও দেশটির সীমান্তবর্তী শহর বলা হচ্ছে না। ফলে ভারতের অন্যান্য শহরে যাওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। এ মুহূর্তে সেটি সম্ভব না হলেও একটি প্রভিশন থাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের জন্য অন্যান্য শহরে যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলার আগে সব ধরনের স্বার্থ বিবেচনা করে শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে।শুধুমাত্র তিনটি শহরেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বাংলাদেশকে নানা শর্ত দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পণ্যবাহী গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পণ্য খালাস করে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরে আসতে হবে। যাত্রীবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য। তিন শহরের বাইরে যেতে না পারায় এবং খালি গাড়ি ফিরে আসতে হলে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ভারতে তাদের পণ্য প্রবেশ করাতে উৎসাহিত হবে না। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য খালাস করে খালি ফেরায় যাওয়া ও আসার ভাড়া পণ্যের মালিককে বহন করতে হবে। এতে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ভারতের নির্ধারিত শুল্ক ও অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে ব্যবসায়ীরা ভারতে পণ্য রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত হবে। এতে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবির এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাক শুধু পণ্য খালাস করে খালি ফিরলে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেড়ে যাবে, চুক্তিটির মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে যা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি মুক্ত থাকা উচিত।’বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে যে খরচ, তার চেয়ে কমে হংকং থেকে পণ্য আনতে পারে বাংলাদেশ। অশুল্ক বাধার কারণেই মূলত দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিবিআইএন চুক্তির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অশুল্ক বাধা তুলে দিতে হবে। চুক্তির আওতায় প্রটোকল চূড়ান্ত করার সময় সরকারের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত। তা না হলে বিবিআইএনের সুফল পাওয়া যাবে না।তবে বিবিআইএন রুট অনুযায়ী ভারতের যানবাহন বাংলাদেশের ভূখ-ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারবে। অন্যদিকে নেপাল এবং ভুটানও বিবিআইএন-এর সাথে যুক্ত থাকছে। ফলে ভারতীয় পরিবহন অতি সহজেই বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এমনকি অন্য দেশেও যেতে পারবে। এছাড়াও বাংলাদেশের দুই সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার করতে পারবে ভারতসহ অপর দুই দেশ। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের তিনটি শহরে বাংলাদেশের পরিবহন চলাচল সীমাবদ্ধ থাকলেও নেপাল ও ভুটানের রাজধানী পর্যন্ত যেতে পারবে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক মন্তব্যে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তির প্রধান দিক, ভারতের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগের করিডর ব্যবস্থা। ‘কানেকটিভিটি’ বা সংযুক্ততা নামক শব্দ ব্যবহার আসলে এ বিষয়টি আড়ালের চেষ্টা, এটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।বিবিআইএন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য লাভবান না হলেও বাংলাদেশকে বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হবে। ২০১২ সালে ট্যারিফ কমিশনের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে (যা কানেকটিভিটির জন্য প্রয়োজন হবে) প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রেলপথে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, সড়কপথে ৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, নৌপথে ৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, মংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে বাকি ৪৮৯ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।এছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ‘রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার : ম্যাপিং প্রোজেক্টস টু ব্রিজ সাউথ এশিয়া অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন এ তথ্য প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ এ অর্থ ব্যয় করলে সেখানেও একচ্ছত্রভাবে লাভবান হবে ভারত।অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রতিশ্রুত ২০০ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিআইডিএসের গবেষক কেএএস মুরশিদ তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ লাভ সীমিত। তবে বিনিয়োগটা করতে হবে বাংলাদেশকেই। মোদির ঢাকা সফরের সময় ভারত যে ২০০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব দিয়েছে, তার একটা অংশ ব্যয় হবে এ খাতে। বাংলাদেশকে সুদসহ মূল টাকা ফেরত দিতে হবে। এই ঋণের ধরন নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই ঋণের সঙ্গে কোনো শর্ত যুক্ত নেই।কিন্তু ভারতের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদুভেন্দ্র মাথুরের টাইমস অব ইন্ডিয়ায় এক সাক্ষাতে বলেছেন, ভারতের দেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী ঋণের অর্থে নেয়া প্রকল্পগুলোর অন্তত ৭৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি ও সেবা ভারত থেকে নিতে হবে। এসব পণ্য ও সেবার উৎপাদন প্রক্রিয়া হবে ভারতেই। টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, ভারতীয় এ ঋণের টাকায় বাংলাদেশে নেয়া প্রকল্পগুলোকে কেন্দ্র করে ভারতে নতুন করে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

সূত্র : আমার দেশ

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...