ফরেন পলিসি, ওয়াশিংটন ডিসি :: বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের প্রভাবে এ দেশেই সংখ্যালঘু নাগরিকরা সাম্প্রদায়িক অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছেন । গত বছর ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বেড়েছে বলে মাইনরিটিরা অভিযোগ করছেন।
নরেন্দ্র মোদির ভারতে গরুর জীবনের মূল্য কি একজন মুসলিমের জীবনের চেয়েও বেশি? সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হবে। এ বছরই সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে উত্তর প্রদেশের দাদরি জেলায় লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৫০ বছর বয়সী কৃষক দিনমজুর মোহাম্মদ আখলাক। তার অপরাধ ছিল গরুর মাংস খাওয়া ও সংরক্ষণ করা।
২০১৪ সালের আগস্টে উত্তর ভারতে একজন মুসলিম যুবককে উগ্রবাদী হিন্দুরা নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, তার অপরাধ সে গরু জবাই করেছিল।
এ বছরেই মার্চে গণমাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায় একজন মুসলিম যুবক গরু ক্রয়-বিক্রির অপরাধে তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হিন্দু রামগীতি বলতে বাধ্য করা হয়েছে।
উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মধ্যে আখলাকের হত্যাকাণ্ডটি সবচেয়ে মর্মস্পর্শী। ক্ষমতাসীন বিজেপির ইউনিয়ন মন্ত্রী প্রভাবশালী মহেশ শর্মা এ হত্যাকাণ্ডকে ‘দুর্ঘটনা’ বলেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আখলাক হত্যা একটি নির্মল হত্যাকাণ্ড।
এই হত্যায় অংশ নেয়া উগ্রবাদী হিন্দুরা আখলাকের বাড়িতে হামলা করে এবং পরিবারের সবার সামনেই তার স্ত্রীর সেলাই মেশিন দিয়ে মাথা থেঁতলে তাকে আঘাত করে। পুলিশের পোষ্টমর্টেম প্রতিবেদন অনুযায়ী তার চামড়া শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুবর্ত্তদের আঘাতে। নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন দরিদ্র আখলাক। এ ঘটনায় জড়িত ‘গরু রক্ষা করি’ নামক সংগঠনটির এক সদস্য ও স্থানীয় বিজেপি নেতা ইন্দার নাগার বলেন, ‘আমরা গরুকে আমাদের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসি।’ হিন্দুদের কাছে গরুই দেবতা। তাই ভারতে গরু হত্যা ও মাংস ভক্ষণ দুটোই নিষিদ্ধ।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গরু নিধন সর্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।’ কিন্তু ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি কখনোই মুসলিম হত্যার ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
মোদির রাজনৈতিক আনুগত্য পরিস্কারভাবে বোধগম্য। তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস এর সাথে জড়িত ছিলেন, যাদের প্রধান এজেন্ডাই হলো ১২৫ কোটি মানুষের দেশকে, যাদের ১৪ শতাংশের বেশি মুসলিম, পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। ১৯৮৫ সালে মোদি হিন্দু মৌলবাদী গ্রুপের রাজনৈতিক শাখা বিজেপিতে যোগদান করেন।
২০১৪ সালে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির কার্যক্রমে বিশ্লেষরা মনে করেছিলেন মোদি রাজনৈতিক আদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গঠনেই বেশি আগ্রহী হবেন। তবে অচিরেই তাদের তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে গুজরাট দাঙ্গা। ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমপক্ষে ১ হাজার নিহত হয়েছিল। মুসলমানের রক্তে যার হাত রঞ্জিত সেই নরেন্দ্র মোদি তার সারাজীবনের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা থেকে একটুও বিচ্যুত হননি।
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করাই মোদি ও তার দলের সম্ভবত প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল। সে লক্ষ্য অর্জনে তারা যে এখন পর্যন্ত সফল সে ব্যাপারে মোদির ঘোর শত্রুও দ্বিমত পোষণ করবেন না তা সহজেই বলা যায়।
অনেক ভারতীয়ই বলছেন, মোদি আখলাকের মৃত্যুতে সমবেদনাও জানাননি।
তাহলে কি মোদি আখলাকের খুনীদের প্রতি সমব্যথী? ২০০৩ সালে মোদি বলেছিলেন, ‘ গুজরাটের প্রধান ‘শক্তিই’ হলো এর নিরামিষভোজী হিন্দুরা। মাংসাশীরা হলো ভিন্নধর্মী।’
যদিও গরুর মাংস সস্তা ও গরীবদের প্রধানত মুসলিম প্রোটিনের অন্যতম উৎস । তারপরও মোদি সরকার পুরো ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।
বিশ্ববাসীর উদ্দ্যেশে পরিস্কার বার্তা, মোদির ভারতে একটি গরুর জীবন একজন মুসলিমের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান।
ভাষান্তর : মোহাম্মদ রবিউল্লাহ